ভাতিন্ডা - মালেক আল্তুনিয়ার দরবারে চেহলগনির সভা বসেছে..
দিল্লী - রাজিয়ার কক্ষ
ভাতিন্ডার যুদ্ধক্ষেত্র
#bengalishortstories #drama #lovestories #romanticstories #sadstories #bengalihistory #raziasultan
#jamaluddinyakut #thriller
- আর সময় হাতে নেই মালেক। এবার আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ওয়াক্ত এসেছে। দিল্লী সালতানাত এখন তোমার অপেক্ষায়। রাজিয়া সিংহাসনের অযোগ্য.....আর তোমারও........এই সত্যিটা যত জলদি তুমি মগজে ঢোকাবে ততই দিল্লীর মঙ্গল।
- কিন্তু ইখ্তিয়ার, আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না কথাগুলো। রাজিয়া আমায় ধোঁকা দেবে ?? না না.........কিছুতেই না।
ডুকরে কেঁদে ওঠে মালেক আল্তুনিয়া। ইখ্তিয়ারের বয়ান কিছুতেই বিশ্বাস করতে মন চায় না। রাজিয়ার সাথে সম্পর্ক তো আজকের নয়, কৈশোরের বন্ধুত্ব যখন যৌবনের প্রেমে রুপান্তরিত হয় তখন থেকেই রাজিয়াকে মনে মনে নিজের বেগম করেছে সে। হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের নিকাহ হয়ে গেছে সেই কবে। আর আজ কিনা রাজিয়ার বিরুদ্ধে তলোয়ার ধরতে হবে তাকে !!! ইয়া আল্লাহ !! এরকম দিন আসার আগে ইন্তেকাল কেন হলো না তার ?
মালেকের মনের ভাব বুঝতে পেরে ইখ্তিয়ার বলে, 'হাবশী শয়তানটাকে ছেড়ো না মালেক। সে এখন রাজিয়াকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তোমার মহব্বতের যে গলা টিপেছে সেই জামালের ইন্তেকাল যেন হয়। আমরা চেহলগনির ওমরাহরা সবাই তোমার পাশে আছি। তুমি শুধু হাত মেলাও আমাদের সাথে। দিল্লীর নাপাক সালতানাতকে কলঙ্কমুক্ত করো, কথা দিচ্ছি জামালের শর কলম করে তোমাকে ভেট দেব'।
জামাল আর রাজিয়ার নাজায়াজ প্রেমের তথ্য গরম সীসার মত কানের ভিতর দিয়ে ঢুকতে থাকে মালেকের। ধীরে ধীরে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়, চোয়াল কঠিন হতে থাকে। চিৎকার করে ওঠে দরবার কাঁপিয়ে, 'নাআআআ, জামালের গায়ে কেউ হাত দেবে না, জামাল আমার শিকার, জামালের খুন দিয়ে গোসল করব আমি, ওই হাবশী ক্রীতদাসটার শর কলম করবে আমার তলোয়ার, আর কারোর নয়'।
- শাবাআআস মালেক, তোমার এই জুনুনটাই দরকার আমাদের, চেহলগনির ওমরাহরা দোয়া দেবে তোমার সাহসের, তোমার ইন্কিলাবের। আর কিছুদিন বাদেই দিল্লীর সালতানাতকে আবার দুলহানের মতো সাজাব আমরা। আজ থেকে ঠিক এক সপ্তাহ বাদে আমরা দিল্লীতে নাস্তা করব। সকলে প্রস্তুত হও। বান্দেগান - ই - চেহলগনি !!!!
সমস্ত সভা জুড়ে গর্জন ওঠে, 'বান্দেগান - ই - চেহলগনি' !!!
দরদী মুখোশের আড়ালে ইখ্তিয়ারের দু চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে, দিল্লী জয় করার ইরাদা কামইয়াব হচ্ছে দেখে ক্রুর হাসির রেখা খেলে যায় ঠোঁটের কোনায়। এতদিন ধরে ইন্তেজার করে এসেছে সে। কোনোরকম মওকা পায়নি রাজিয়াকে সরাবার। প্রত্যেকবারই কোনো না কোনো ভাবে রাজিয়া মাত দিয়ে গেছে চেহলগনিকে। এবার স্বয়ং মালেককে কব্জা করা গেছে। জামালের সাথে রাজিয়ার ঝুটা কাহানি বানিয়ে মালেককে পেড়ে ফেলেছে সে নিজের জালে। এখন আর আটকায় কে। দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলে সে, 'রাজিয়া ! প্রস্তুত হও, তোমার ইন্তেকাল এসে গেছে.........ইনশাল্লাহ !'
দিল্লী - রাজিয়ার কক্ষ
গোঁজ হয়ে বসে থাকেন রাজিয়া মখমলী কুর্সির ওপর। সারা মুখে রক্তের লেশমাত্র নেই। ইন্কিলাবের খবর তাকে লাহোরে থাকতেই দিয়েছে বটে জামাল কিন্তু সেটা যে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই হবে এমনটা আন্দাজ করতে পারেননি তিনি। ইনকিলাবে ভয় পাননা রাজিয়া, বরং হৃদয় চূর্ণ হয় এই ভেবে যে এই সাজিশে মালেকেও যোগ দিয়েছে। বুকের ভেতরটা অচিরেই খান খান হয়ে যায়, একছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে এই দিল্লী ছেড়ে, এই সালতানাত ছেড়ে দূরে কোথাও। যেখানে কোনো যুদ্ধ থাকবে না, কোনো লোভ, হিংসা, ইনকিলাব, সাজিশ কিচ্ছু থাকবে না, যেখানে দুদন্ড শান্তি পাবে, এমন কোথাও, যেখানে খোদা তাকে জন্নত দেবে....
- সুলতান ?? সুলতান !!!
কোনো এক অবয়বের ছায়া পড়ে মুখের ওপর। সম্বিত ফিরে পান রাজিয়া, ঘুরে তাকান, দেখেন জামাল এসে দাঁড়িয়েছে।
'জামাল !!......আবার কি খবর আনলে তুমি' ? স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করেন রাজিয়া।
- সামনের ইতোয়ারে জনাব মালেক আর ইখ্তিয়ারের সিপাহীরা দিল্লী হামলা করবে। সামনে আর মাত্র দুটো দিন আছে। আপনি প্রস্তুত হওয়ার হুকুম করুন সুলতান। ইখ্তিয়ারের গর্দানটা কেটে নিয়ে আসি।
দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে রাজিয়ার গাল বেয়ে। হতাশা আর যন্ত্রনায় নির্বাক বসে থাকেন গদির ওপর। আনমনা হয়ে ফরাসের ওপর তাকিয়ে থাকেন একদৃষ্টিতে। সম্পর্কের সুক্ষ্ম গ্রন্থিগুলো কখন যে আলগা হতে শুরু করেছিল তারই উত্তর খোঁজার প্রাণপণ চেষ্টা করেন রাজিয়া। হৃদয়ের পাড়ে প্রশ্নের ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে একের পর এক। উত্তর পাওয়া যায় না কোনো কিছুরই। অসময়ের আঁধি তোলপাড় করে দিতে থাকে রাজিয়ার বুকের ভেতর, সবার অলক্ষ্যে।
- আপনি হিম্মত রাখুন সুলতান। আমায় শুধু একটা সুযোগ দিন, কথা দিচ্ছি এই ইন্কিলাবকে স্তব্ধ করে দেব আমি। ইখ্তিয়ারের লাশ নিয়ে জশন মানাবে গোটা দিল্লী। জনাব মালেকের ভুল ভাঙবেই। আপনি একটু হিম্মত রাখুন দয়া করে।
চোখ মুছে নিজেকে সামলে নেন রাজিয়া। সমস্ত গ্লানি ঝেড়ে ফেলে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান। ভিতরে ভিতরে তৈরী করেন নিজেকে। মনে মনে ঠিক করেন দিল্লির প্রজাদের কিছুতেই তিনি বিপদে ফেলবেন না। সেজন্য যদি মহব্বতকে কুরবানীও দিতে হয় তাহলে তিনি প্রস্তুত। তিনি দিল্লীর সুলতান, দিল্লীর মানুষের সুখ দুঃখ তাঁর মহব্বতের চেয়ে অনেক মহত্বপূর্ণ......এর দ্যর্জা মহব্বতের অনেক আগে। তাই যুদ্ধ হবেই আর সে যুদ্ধের শেষ দেখে তবে ছাড়বেন। গ্রীবা উঁচিয়ে কঠিন স্বরে হুকুম দেন তুর্কী সম্রাজ্ঞী, 'জামাল ! সিপাহী তৈয়ার করো, ইতোয়ারে সূর্য ওঠার আগেই আমরা ভাতিন্ডার দিকে রওনা দেব। দিল্লীকে চেহলগনি মুক্ত করবই। আমার মৃত্যুও যদি হয়, মনে রেখো, চেহলগনির খুনে দিল্লীর নতুন সূর্য উঠবে'।
যুদ্ধজয়ের হিল্লোল ওঠে জামালের মুখমন্ডল জুড়ে। চিৎকার করে বলে ওঠে, 'ইনশাল্লাহ !!! জালাত-উদ-দিন রাজিয়া সালামত রহেএএএ ' !!
ভাতিন্ডার যুদ্ধক্ষেত্র
সবে সূর্যোদয় হয়েছে। পূর্ব আকাশে কমলা রঙের জোয়ার ভাঁটা। যতদুর চোখ যায় রুক্ষ এবড়ো খেবড়ো জমি। সবুজের লেশ মাত্র নেই কোথাও, মাইলের পর মাইল জুড়ে ধূ ধূ প্রান্তর। পশ্চিম দিক বরাবর ছোট ছোট পাথুরে টিলা সমান্তরাল ভাবে চলে গেছে দিগন্তের শেষ প্রান্তে। দক্ষিন দিক থেকে কালো কালো পিপড়ের লাইনের মত হাজারে হাজারে সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে ভাতিন্ডার খোলা জমিতে। সৈন্যদের পায়ের আওয়াজ, অশ্বখুরের শব্দ, অস্ত্রের ঝনঝনাণি এক আশ্চর্য সুরেলা কোলাহল তৈরী করেছে গোটা প্রান্তর জুড়ে। কিসের এক অপেক্ষায় দম বন্ধ করে সময় গুনছে সারি সারি সিপাহীরা। দ্বিতীয় সারিতে অশ্ব যোদ্ধাদের পরিচালনায় তৈয়ার জামাল। তৃতীয় সারিতে মাঝামাঝি স্থানে খতরনাক যোদ্ধার বেশে এক বৃহদাকায় হাতির ওপর প্রস্তুত হয়ে বসে আছেন রাজিয়া। অতন্দ্র প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে সালতানাতের বাছাই করা সেনারা। বহুদূরে উত্তরের প্রান্তে একফালি সরু সুতোর মত কিছু একটা চোখে পড়ে জামালের। চিৎকার করে জানান দেয় সবাইকে, 'হুঁউউশিয়াআআআর' !!!!!!
ধমনীর মধ্যে দুরন্ত বেগে রক্ত ছুটতে থাকে সবার। চোখের পলক পড়ে না কারো। শিকারী চিতার মত তাকিয়ে থাকে সবাই সেই একফালি রেখার দিকে। ক্রমে ক্রমে সেই রেখা দৃশ্যমান হতে থাকে। দূর থেকে যা সরু সুতো বলে ভ্রম হয়েছিল, ধীরে ধীরে সেটাই বিরাট সেনানীর আকার ধারণ করতে থাকে।
দেখতে না দেখতেই আধ মাইলের মধ্যে এসে দাঁড়ায় ইখতিয়ার ও মালেক পরিচালিত অসংখ্য সৈন্যবাহিনীর দলবদ্ধ শব্দ। দূর থেকে রাজিয়ার হস্তিধ্বজা নজরে পরে ইখ্তিয়ারের। হিংস্র শ্বাপদের মত জ্বলজ্বল করে ওঠে চোখদুটো। চোখের ইশারায় জানান দেয় পাশের অশ্বরোহী মালেককে। করুণ আর্তিতে রাজিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে মালেক। মহব্বত ও দিললগীর মায়া জড়ানো থাকে দুচোখে। নজর ঘুরিয়ে দ্বিতীয় সারিতে জামালকে দেখতে পেয়েই মাথায় রক্ত চড়ে যায় তৎক্ষণাৎ। ইখতিয়ারকে বজ্রকঠিন স্বরে বলে ওঠে, 'সিপাহিদের হুকুম দাও ইখতিয়ার, জামালের পাঁজরটা ছিন্নভিন্ন না করা অবধি শান্তি নেই'।
ছিলার মধ্যে আটকে থাকা তীরের মত টানটান দাঁড়িয়ে থাকে সবাই। একটা হুকুমের অপেক্ষা, একটা মর্মভেদী ইশারা। তারপরই ক্ষুধার্ত বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়বে শিকারের ওপর। ডান হাতে নিজের ভল্লটা তুলে ধরে ইখতিয়ার, আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে ওঠে, 'ইন্কিলাআআব !!! বান্দেগাআআআন - ই - চেহলগনিঈঈই'।
উল্টোদিকে রাজিয়াও তলোয়ার উঠিয়ে গগনভেদী গর্জন করেন, 'দিল্লীঈঈঈ সালামত রহেএএ এ !!! দুশমন খতম করোওওওও'।
মুহুর্তের মধ্যে রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ে সহস্রাধিক সিপাহী। জমিন দুলে ওঠে সৈন্যদের পায়ের চাপে। দিগন্ত বিস্তৃত ধুলোর ঝড়ে দিগ্বিদিক অন্ধকার হয়ে আসে। তীব্র, তীক্ষ্ণ কোলাহলে কেঁপে ওঠে পৃথিবী। জামালের যুদ্ধাস্ত্রের নিপুণ প্রয়োগে চেহলগনির সেনারা ছিন্নভিন্ন হতে থাকে। একের পর এক ঘায়েল হতে থাকে প্রতিপক্ষের সৈন্য। প্রবল বিক্রমে একা হাতে পরিচালনা করতে থাকে নিজের অশ্বারোহী সৈনিকদের যারা সমূদ্রের ঢেউ এর মত ঝাপিয়ে পড়ে চেহলগনির ওপর।
অল্প সময়ের মধ্যেই নাস্তানাবুদ হয়ে যায় ইখ্তিয়ারের পদাতিকরা। বিপদ বুঝে মনে মনে অন্য পরিকল্পনা করে ইখ্তিয়ার। তিরন্দাজদের নিশানা লাগাতে বলে রাজিয়ার ওপর, কারণ সে জানে রাজিয়া খতম মানেই জামালের সেনা খতম। আর দিল্লী মুঠোর মধ্যে। দু সারি তিরন্দাজ সামনে এগিয়ে আসে। হাঁটু গেঁড়ে নিশানা করে রাজিয়াকে ঘিরে থাকা সিপাহিদের ওপর। বারিধারার মত শয়ে শয়ে তীর উড়ে আসে। সামনের অশ্বারোহীরা ছত্রাকার হতে থাকে।
রাজিয়া বুঝতে পারেন হাতির পিঠে বসে এই যুদ্ধ পরিচালনা করা অসম্ভব। তাই এক লাফে নেমে পড়েন জমির ওপর। একটা তেজী ঘোড়ায় চেপে কয়েকশো পদাতিক নিয়ে প্রবল পরাক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিরন্দাজদের ওপর। বিদ্যুৎ বেগে ফালা ফালা করতে থাকেন তলোয়ারের মুহূর্মুহু কোপে, রুপোলী ধাতুর ধারালো আঘাতে উড়তে থাকে কাটা মুন্ডু। লন্ডভন্ড করে দিতে থাকেন ইখ্তিয়ারের পরিকল্পনা অদম্য অসিচালনায়।
অন্য দিকে মালেক সুযোগ খুঁজতে থাকে জামালের কাছে পৌঁছনোর। প্রতিপক্ষ অশ্বারোহীদের অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় কিছুতেই নাগাল পায়না সে জামালের। ইখ্তিয়ার প্রমাদ গোনে। যুদ্ধ করতে করতেই নজর রাখে রাজিয়ার গতিবিধির ওপর। কোনো এক অতর্কিত আক্রমনের সুযোগ খুঁজতে থাকে শিকারী হায়নার মতো। খুব তাড়াতাড়ি সে বুঝে যায় যে রাজিয়া অবধি পৌঁছোনো প্রায় অসম্ভব। তাই গোপনে পিছন থেকে ভল্ল তাক করে ছুঁড়ে মারার ছক কষে। পদাতিকদের এগিয়ে যেতে বলে রাজিয়ার দিকে। ...........পাল্টা আক্রমণে পদাতিকরা অগ্রসর হয়.......... রাজিয়ার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। ক্রমশ যুদ্ধ ভয়ংকর আকার ধারণ করে। খেপা কুকুরের মত ঘুরে বেড়ায় ইখতিয়ার। সামান্যতম একটা সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করতে থাকে মরিয়া হয়ে। কোনভাবেই একটা মওকা খুঁজে পায়না সে।
'খোদা মেহেরবান ! একটা মওকা চাই আল্লাহ' ! মনে মনে বলে ইখতিয়ার.....
অবশেষে আচম্বিতেই সেই সুযোগ এসে যায় ইখ্তিয়ারের হাতে। যুদ্ধ করতে করতে কয়েক গজের দুরত্বে সামনা সামনি চলে আসে মালেক আর রাজিয়া। দুজনেই দুজনকে দেখে থমকে যায়। হাতের অসি মুহুর্তের জন্য স্থির হয়। দৃষ্টি আবদ্ধ হয় একে অপরের ওপর। আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলা পুরনো রংচটা আবেগ ঘনীভূত হয় ভাতিন্ডার আকাশে। পলকের জন্য আনমনা হয়ে যান রাজিয়া............ এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল ইখ্তিয়ার....... আর কালক্ষেপ না করে ডান হাত তুলে বিদ্যুৎ গতিতে রাজিয়ার দিকে নিশানা করে ছুঁড়ে দেয় শানিত বর্শা। মালেক সেটা দেখতে পেয়েই হাত তুলে চিৎকার করে থামাতে যায় ইখ্তিয়ারকে।
- 'সুলতাআআআআআন'............অচানক কোথা থেকে দুরন্ত গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে রাজিয়ার দিকে দুহাত বাড়িয়ে উড়ে আসে জামাল।
চোখের পলক ফেলার আগেই আমূল বিঁধে যায় প্রাণঘাতী অস্ত্র। এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায় জামালের হৃদপিণ্ড। কাটা কলাগাছের মত গড়িয়ে পড়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে। শুধু একটিমাত্র শব্দ বের হয় মুখ থেকে, 'সুলতাআন'। পরক্ষণেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে দিল্লীর তখ্ত-ও-তাজের সর্বক্ষণের অনুচর।
ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্ময়ে নিশ্চল হয়ে যায় দিল্লীর সিপাহীরা..........
'জামাআআআআল !!!' আর্তনাদ করে তলোয়ার ফেলে ছুটে আসেন রাজিয়া। জমিনের ওপর বসে প্রবলভাবে ঝাঁকাতে থাকেন জামালের দেহ।
- চোখ খোলো জামাল, তাকাও আমার দিকে...................
জামালের নিথর দেহে কোনো সাড় পাওয়া যায় না। মালেকের দিকে তাকিয়ে বলেন, 'এ তুমি কি করলে মালেক ? গুপ্ত ষড়যন্ত্রের আক্রোশে আমার বিশ্বস্ত সঙ্গীকে হত্যা করলে তুমি ?? তুমি কি এখনো বোঝোনি যে জামালকে নয়, ওরা খুন করতে চেয়েছিল আমাকে, তোমার রাজিয়াকে, একটা ঝুটা কিসসা শুনিয়ে তোমাকে উস্কিয়েছে ওরা, এই যুদ্ধ শুধুমাত্র তোমার চোখে পট্টি পড়ানোর জন্য ছিল, আর এইটাই কি তুমি চেয়েছিলে ? এইবার কি তোমার ইনকিলাব হাসিল হলো, বল আমায়, বল মালেক ?
মালেকের বুকে আছড়ে পড়েন রাজিয়া। তলোয়ার খসে পড়ে মালেকের হাত থেকে। স্তব্ধ হয়ে যায় চারিপাশ। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত দাঁড়িয়ে থাকে রাজিয়ার সেনা। ধীরে ধীরে চেহলগনিরা ঘিরে ধরে রাজিয়াকে।
রাজিয়াকে নজরবন্দী করা হয়। রাজিয়ার সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে চেহলগনির কাছে। দিল্লীর দিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বন্দীদের। শুধু ভাতিন্ডার রুক্ষ প্রান্তরে জন্নতের অপেক্ষায় একলা পড়ে থাকে সুলতানের নির্ভীক, বিশ্বস্ত ছায়াসঙ্গী............
-------------------------------------------------------------------------------------------
(এর বহু পরে রাজিয়া আর মালেকের নিকাহ হয় এবং তারও পরে চেহলগনির বিরুদ্ধে দুজনে যুদ্ধে যায় ও মারা যায়। পরের ঘটনার আর বিবরণ দিলাম না ইচ্ছে করেই যেহেতু এই গল্পটা জামালউদ্দিন ইয়াকুত কে নিয়ে।
পুনশ্চঃ এই গল্পে উপন্যাসের রসদ আছে নিঃসন্দেহে। যেহেতু আমি ছোট গল্প লিখি তাই যতটা সম্ভব ছোট করে বলার চেষ্টা করেছি। কোনো ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থনীয়।)
#bengalishortstories #drama #lovestories #romanticstories #sadstories #bengalihistory #raziasultan
#jamaluddinyakut #thriller
ছবি : গুগল
|

No comments:
Post a Comment