Saturday, July 15, 2017

ইন্ডিয়া - পাকিস্তান

রাতঘড়িতে তখন বারোটা দুই। বাড়ির লোকজন ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক্ষন। রাস্তার ওপর সোডিয়াম ল্যাম্পের চিকন আলো ছাড়া আর কোথাও কোনো কিছুর চিহ্ন নেই। ড্রয়িং রুমের ডানদিকে নীল সোফার ওপর আধশোয়া হয়ে একের পর এক চ্যানেল ঘুরিয়ে চলেছি আনমনে। লক্ষ্য একটাই  - ভালো সিনেমা দেখা। বাইরের ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে গত কয়েকদিনে না লেখার দরুন যে মেঘ জমা হয়েছে তার তাড়নায় মন খারাপের কারাগারে বন্দী হয়ে আছি। কথায় বলে 'অভাবে স্বভাব নষ্ট'। তেমনই আমার সময়াভাবে, লেখা নষ্ট হওয়ার জোগাড় হতে বসেছে। এমন মনঃপীড়া নিয়ে ছটফট করতে করতে যে চ্যানেলটায় এসে থামলাম, ভাবিনি লেখার রসদ পেয়ে যাব সেখানেই। 

ইন্ডিয়া - পাকিস্তান ম্যাচ, মহিলাদের, তদুপরি হাইলাইটস। তবুও শেষ অবধি চোখ ফেরাতে পারিনি কোনোভাবেই। যাঁরা দেখেননি তাঁদের অবশ্যই বলব, সুযোগ করে একবার দেখে নিন। আমি জানি, আমরা সচিন, সৌরভ, সেওয়াগ, যুবরাজ , ধোনি, কোহলি, রায়নাদের যুগশিল্প দেখে দেখে চোখে হাজা ধরিয়ে ফেলেছি। সেখানে মেয়েরা একটু ব্যাট করবে,হাত ঘুরিয়ে বল করবে, এ আবার রাত জেগে দেখার কি আছে ? তাহলে বলি, পুনম রাউত, দীপ্তি শর্মা, সুষমা ভর্মা - এঁদের যাঁরা চেনেন না তাঁরা আগামী দিনে এঁদের নাম মুহুর্মুহু শুনতে পাবেন এ বিষয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। তুলনামূলক ভাবে মন্থর হলেও এঁরা যে ইনিংসগুলো খেললেন তাতে করে ইতিহাসের পাতায় সহজেই নাম তুলে ফেললেন ভারতবর্ষের নীলরত্নরা। দুরন্ত কভার ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট ও স্ট্রেট ড্রাইভ গুলো শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, তার পিছনে যে দৃপ্ত ফুটওয়ার্ক ও মধুর টাইমিংয়ের যুগলবন্দী দেখলাম তাতে বারবার হৃদয় জুড়ে একটাই শব্দ উঠে আসছিল - 'কেয়াবাৎ'......'কেয়াবাৎ'। পুনম রাউত একটুর জন্য হাফ সেঞ্চুরি মিস করে গেলেও সুষমা ভর্মা ও ঝুলন গোস্বামীর নির্ভীক লফ্টেড শটগুলো যখন পাকিস্তানী ফিল্ডারদের মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারি লাইনে আছড়ে পড়ছিল ঝড়ের গতিতে, তখন ভরা রাতেও সোফা ছেড়ে হাততালি দিতে কোনো কসুর করিনি। যতটা বিস্মিত হয়েছিলাম তার থেকে মন ভালো হয়ে গেছিল দ্বিগুণ। যদিও বিস্মিত হওয়ার বাকি ছিল অনেক। খেলার ফল আগে থেকেই জানতাম তবু চোখে দেখার বিস্ময় থেকে বঞ্চিত হইনি বিন্দুমাত্র। 

ফিল্ডিং এর সময় প্রায় ফিতে দিয়ে লাইন লেংথ মাপা বোলিংয়ের ধার ও ভারে এক এক করে কেটে যেতে লাগলেন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানরা। ঝুলন গোস্বামীর মসৃন একশন, গুড লেংথ বোলিং ও একতা বিস্তের ধারালো স্পিনে প্রথম ধাপেই ১০ রানের মধ্যে পাকিস্তান তিন উইকেট হারিয়ে ডুবন্ত নাবিকের মতো ছটফট করছিল। পরের দিকে মানসী যোশী ও একতা বিস্তের তালমেলানো নিখুঁত বোলিং পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারে শেষ পেরেকগুলো পুঁতে দিয়ে চলে গেল। এর সাথে অনবদ্য ফিল্ডিং - যেখানে কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে লাফ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে রান আটকানোর চেষ্টা, পাকিস্তানের দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এমন অনমনীয়, অদম্য লড়াই হালফিলে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। ভারতের ১৬৯ রান নিঃসন্দেহে স্কোরবোর্ডের বিস্ময় নয় তবে ৭৪ রানে ১০ উইকেট ফেলে দেওয়াটা যে পাকিস্তানের আজন্ম লজ্জার কারণ হয়ে থাকবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই ম্যাচটা লাইভ দেখার আফশোষ ছিল বহুদিন, তবে হাইলাইটসটা অনেকাংশেই সে ক্ষতে মলমের কাজ করেছে। বিশেষ করে পুরুষদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত - পাকিস্তান ফাইনাল ম্যাচের পর। মহিলাদের ভারতকে কুর্ণিশ ও অসংখ্য সাধুবাদ, গর্বের মুকুটে এক নতুন পালকের সংযোজন হল, হৃদয়েও.........


বিন্যাস : নিজস্ব 
#IndiaPakistanICCWomensWorldCup2017 #cricketarticles #ICCWomensWorldCup2017        

No comments:

Post a Comment