Wednesday, June 22, 2016

কথাটা

ছবি : গুগল 
এমন কি আর বিরাট খবর হোলো
এমনটা তো কতই বলে লোকে
কথার ওজন মাপতে নেইকো ওতো  !
বেফাঁস কিছু পরিশ্রমের ঝোঁকে.........

কাজের ফ্যাসাদ দেখলি নাতো তোরা
খবর করার রসদ খুঁজিস যত
রেপ কথাটা প্রমোশনাল ট্রিক
বুঝতি যদি হতিস আমার মতো !

থাম তো ! ওসব বুজরুকি বাদ দে
আসছে বছর অনেক ছবি আছে
তখন না হয় বুঝিয়ে দেব তোদের
এই কথাটার গভীর মানে আছে !

সস্তা তোদের মিথ্যে আস্ফালন
মনুষ্যত্ব তুলসী পাতায় ধুবি ?
ক্ষমা টমা ? সেসব পরে হবে
আজকে আমি ব্যস্ত আছি খুবই !



#bengalishortpoems

Monday, June 20, 2016

অনুপদ্য - ৫

ছবি : নিজস্ব 
চ্যাটবক্সে টানাপোড়েন
আকাশ কুসুম গল্পরা......
বেখেয়ালী জাল বুনে যায়
হৃদয় খোঁজে শব্দরা........
স্ক্রীনের ওপর চুঁইয়ে পড়ে
খুনসুটিরা ইতিউতি........
একলা ঘরে সময় কুড়োয়
ইচ্ছে ডানার প্রতিশ্রুতি.....







#bengalishortpoems #bengalipoetry

Friday, June 17, 2016

ছাত

সিঁড়িঘর দিয়ে কার্নিস ঘেঁষা পুরনো বাড়ির ছাত
নাছোড়বান্দা ছুঁয়ে গেছি কত নিভে যাওয়া মৌতাত

আড়াল করে দাঁড়িয়ে তুমি উল্টো ছাতে আমি
পশম জড়ানো মুহূর্তরা জোনাকির মত দামী

সময় বাড়ন্ত ঘড়ির কাঁটায় ইস্টিশনের হাওয়া
লুকোনো আবেগ ছুঁড়ে ফেলে তোমার নির্বাক চলে যাওয়া

এখন বেঁচে ছাতের ঘরে বেচাল স্মৃতিই শুধু
রোজগেরে আমি হয়েছি এখন, তুমি কোনো এক গৃহবধু।

ছবি : নিজস্ব 












#bengalishortpoems #bengalisadpoems #romanticpoems

খবর

ছবি : নিজস্ব   
সবাই সব খবর রাখে.....জানিস
সবাই কেমন ঘাপটি মেরে থাকে
আমার খবর তুইও নিতে পারিস
বৃষ্টিভেজা পিছল পথের বাঁকে....

আমার সাথে বেজায় রকম আড়ি
ডাকবাক্সের জীর্ণ কাঠের ঘর
জানলা দিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকি
পথচলতি অতীত আপন-পর......

লক্ষ কথায় ফুরোয় না তো নালিশ
একঘেয়ে আর একপেশে হয়ে যায়
আমার খবর তুইও নিতে পারিস
একলা ঘরে বিষম থাকা দায়.......


#bengalishortpoems #bengaliromanticpoems #bengalisadpoems

Wednesday, June 15, 2016

সাপ্তাহিকী ১২ - ছায়াসঙ্গী - শেষ পর্ব

ভাতিন্ডা - মালেক আল্তুনিয়ার দরবারে চেহলগনির সভা বসেছে.. 

- আর সময় হাতে নেই মালেক। এবার আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ওয়াক্ত এসেছে। দিল্লী সালতানাত এখন তোমার অপেক্ষায়। রাজিয়া সিংহাসনের অযোগ্য.....আর তোমারও........এই সত্যিটা যত জলদি তুমি মগজে ঢোকাবে ততই দিল্লীর মঙ্গল।
- কিন্তু ইখ্তিয়ার, আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না কথাগুলো। রাজিয়া আমায় ধোঁকা দেবে ?? না না.........কিছুতেই না।

ডুকরে কেঁদে ওঠে মালেক আল্তুনিয়া। ইখ্তিয়ারের বয়ান কিছুতেই বিশ্বাস করতে মন চায় না। রাজিয়ার সাথে সম্পর্ক তো আজকের নয়, কৈশোরের বন্ধুত্ব যখন যৌবনের প্রেমে রুপান্তরিত হয় তখন থেকেই রাজিয়াকে মনে মনে নিজের বেগম করেছে সে। হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের নিকাহ হয়ে গেছে সেই কবে। আর আজ কিনা রাজিয়ার বিরুদ্ধে তলোয়ার ধরতে হবে তাকে !!! ইয়া আল্লাহ !! এরকম দিন আসার আগে ইন্তেকাল কেন হলো না তার ?

মালেকের মনের ভাব বুঝতে পেরে ইখ্তিয়ার বলে, 'হাবশী শয়তানটাকে ছেড়ো না মালেক। সে এখন রাজিয়াকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তোমার মহব্বতের যে গলা টিপেছে সেই জামালের ইন্তেকাল যেন হয়। আমরা চেহলগনির ওমরাহরা সবাই তোমার পাশে আছি। তুমি শুধু হাত মেলাও আমাদের সাথে। দিল্লীর নাপাক সালতানাতকে কলঙ্কমুক্ত করো, কথা দিচ্ছি জামালের শর কলম করে তোমাকে ভেট দেব'।

জামাল আর রাজিয়ার নাজায়াজ প্রেমের তথ্য গরম সীসার মত কানের ভিতর দিয়ে ঢুকতে থাকে মালেকের। ধীরে ধীরে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়, চোয়াল কঠিন হতে থাকে। চিৎকার করে ওঠে দরবার কাঁপিয়ে, 'নাআআআ, জামালের গায়ে কেউ হাত দেবে না, জামাল আমার শিকার, জামালের খুন দিয়ে গোসল করব আমি, ওই হাবশী ক্রীতদাসটার শর কলম করবে আমার তলোয়ার, আর কারোর নয়'।

- শাবাআআস মালেক, তোমার এই জুনুনটাই দরকার আমাদের, চেহলগনির ওমরাহরা দোয়া দেবে তোমার সাহসের, তোমার ইন্কিলাবের। আর কিছুদিন বাদেই দিল্লীর সালতানাতকে আবার দুলহানের মতো সাজাব আমরা। আজ থেকে ঠিক এক সপ্তাহ বাদে আমরা দিল্লীতে নাস্তা করব। সকলে প্রস্তুত হও। বান্দেগান - ই - চেহলগনি !!!!

সমস্ত সভা জুড়ে গর্জন ওঠে, 'বান্দেগান - ই - চেহলগনি' !!!

দরদী মুখোশের আড়ালে ইখ্তিয়ারের দু চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে, দিল্লী জয় করার ইরাদা কামইয়াব হচ্ছে দেখে ক্রুর হাসির রেখা খেলে যায় ঠোঁটের কোনায়। এতদিন ধরে ইন্তেজার করে এসেছে সে। কোনোরকম মওকা পায়নি রাজিয়াকে সরাবার। প্রত্যেকবারই কোনো না কোনো ভাবে রাজিয়া মাত দিয়ে গেছে চেহলগনিকে। এবার স্বয়ং মালেককে কব্জা করা গেছে। জামালের সাথে রাজিয়ার ঝুটা কাহানি বানিয়ে মালেককে পেড়ে ফেলেছে সে নিজের জালে। এখন আর আটকায় কে। দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলে সে, 'রাজিয়া ! প্রস্তুত হও, তোমার ইন্তেকাল এসে গেছে.........ইনশাল্লাহ !'

দিল্লী - রাজিয়ার কক্ষ

গোঁজ হয়ে বসে থাকেন রাজিয়া মখমলী কুর্সির ওপর। সারা মুখে রক্তের লেশমাত্র নেই। ইন্কিলাবের খবর তাকে লাহোরে থাকতেই দিয়েছে বটে জামাল কিন্তু সেটা যে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই হবে এমনটা আন্দাজ করতে পারেননি তিনি। ইনকিলাবে ভয় পাননা রাজিয়া, বরং হৃদয় চূর্ণ হয় এই ভেবে যে এই সাজিশে মালেকেও যোগ দিয়েছে। বুকের ভেতরটা অচিরেই খান খান হয়ে যায়, একছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে এই দিল্লী ছেড়ে, এই সালতানাত ছেড়ে দূরে কোথাও। যেখানে কোনো যুদ্ধ থাকবে না, কোনো লোভ, হিংসা, ইনকিলাব, সাজিশ কিচ্ছু থাকবে না, যেখানে দুদন্ড শান্তি পাবে, এমন কোথাও, যেখানে খোদা তাকে জন্নত দেবে....

- সুলতান ?? সুলতান !!!
কোনো এক অবয়বের ছায়া পড়ে মুখের ওপর। সম্বিত ফিরে পান রাজিয়া, ঘুরে তাকান, দেখেন জামাল এসে দাঁড়িয়েছে।
'জামাল !!......আবার কি খবর আনলে তুমি' ? স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করেন রাজিয়া।
- সামনের ইতোয়ারে জনাব মালেক আর ইখ্তিয়ারের সিপাহীরা দিল্লী হামলা করবে। সামনে আর মাত্র দুটো দিন আছে। আপনি প্রস্তুত হওয়ার হুকুম করুন সুলতান। ইখ্তিয়ারের গর্দানটা কেটে নিয়ে আসি।

দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে রাজিয়ার গাল বেয়ে। হতাশা আর যন্ত্রনায় নির্বাক বসে থাকেন গদির ওপর। আনমনা হয়ে ফরাসের ওপর তাকিয়ে থাকেন একদৃষ্টিতে। সম্পর্কের সুক্ষ্ম গ্রন্থিগুলো কখন যে আলগা হতে শুরু করেছিল তারই উত্তর খোঁজার প্রাণপণ চেষ্টা করেন রাজিয়া। হৃদয়ের পাড়ে প্রশ্নের ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে একের পর এক। উত্তর পাওয়া যায় না কোনো কিছুরই। অসময়ের আঁধি তোলপাড় করে দিতে থাকে রাজিয়ার বুকের ভেতর, সবার অলক্ষ্যে।

- আপনি হিম্মত রাখুন সুলতান। আমায় শুধু একটা সুযোগ দিন, কথা দিচ্ছি এই ইন্কিলাবকে স্তব্ধ করে দেব আমি। ইখ্তিয়ারের লাশ নিয়ে জশন মানাবে গোটা দিল্লী। জনাব মালেকের ভুল ভাঙবেই। আপনি একটু হিম্মত রাখুন দয়া করে।

চোখ মুছে নিজেকে সামলে নেন রাজিয়া। সমস্ত গ্লানি ঝেড়ে ফেলে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান। ভিতরে ভিতরে তৈরী করেন নিজেকে। মনে মনে ঠিক করেন দিল্লির প্রজাদের কিছুতেই তিনি বিপদে ফেলবেন না। সেজন্য যদি মহব্বতকে কুরবানীও দিতে হয় তাহলে তিনি প্রস্তুত। তিনি দিল্লীর সুলতান, দিল্লীর মানুষের সুখ দুঃখ তাঁর মহব্বতের চেয়ে অনেক মহত্বপূর্ণ......এর দ্যর্জা মহব্বতের অনেক আগে। তাই যুদ্ধ হবেই আর সে যুদ্ধের শেষ দেখে তবে ছাড়বেন। গ্রীবা উঁচিয়ে কঠিন স্বরে হুকুম দেন তুর্কী সম্রাজ্ঞী, 'জামাল ! সিপাহী তৈয়ার করো, ইতোয়ারে সূর্য ওঠার আগেই আমরা ভাতিন্ডার দিকে রওনা দেব। দিল্লীকে চেহলগনি মুক্ত করবই। আমার মৃত্যুও যদি হয়, মনে রেখো, চেহলগনির খুনে দিল্লীর নতুন সূর্য উঠবে'।

যুদ্ধজয়ের হিল্লোল ওঠে জামালের মুখমন্ডল জুড়ে। চিৎকার করে বলে ওঠে, 'ইনশাল্লাহ !!! জালাত-উদ-দিন রাজিয়া সালামত রহেএএএ ' !!

ভাতিন্ডার যুদ্ধক্ষেত্র 

সবে সূর্যোদয় হয়েছে। পূর্ব আকাশে কমলা রঙের জোয়ার ভাঁটা। যতদুর চোখ যায় রুক্ষ এবড়ো খেবড়ো জমি। সবুজের লেশ মাত্র নেই কোথাও, মাইলের পর মাইল জুড়ে ধূ ধূ প্রান্তর। পশ্চিম দিক বরাবর ছোট ছোট পাথুরে টিলা সমান্তরাল ভাবে চলে গেছে দিগন্তের শেষ প্রান্তে। দক্ষিন দিক থেকে কালো কালো পিপড়ের লাইনের মত হাজারে হাজারে সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে ভাতিন্ডার খোলা জমিতে। সৈন্যদের পায়ের আওয়াজ, অশ্বখুরের শব্দ, অস্ত্রের ঝনঝনাণি এক আশ্চর্য সুরেলা কোলাহল তৈরী করেছে গোটা প্রান্তর জুড়ে। কিসের এক অপেক্ষায় দম বন্ধ করে সময় গুনছে সারি সারি সিপাহীরা। দ্বিতীয় সারিতে অশ্ব যোদ্ধাদের পরিচালনায় তৈয়ার জামাল। তৃতীয় সারিতে মাঝামাঝি স্থানে খতরনাক যোদ্ধার বেশে এক বৃহদাকায় হাতির ওপর প্রস্তুত হয়ে বসে আছেন রাজিয়া। অতন্দ্র প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে সালতানাতের বাছাই করা সেনারা। বহুদূরে উত্তরের প্রান্তে একফালি সরু সুতোর মত কিছু একটা চোখে পড়ে জামালের। চিৎকার করে জানান দেয় সবাইকে, 'হুঁউউশিয়াআআআর' !!!!!!

ধমনীর মধ্যে দুরন্ত বেগে রক্ত ছুটতে থাকে সবার। চোখের পলক পড়ে না কারো। শিকারী চিতার মত তাকিয়ে থাকে সবাই সেই একফালি রেখার দিকে। ক্রমে ক্রমে সেই রেখা দৃশ্যমান হতে থাকে। দূর থেকে যা সরু সুতো বলে ভ্রম হয়েছিল, ধীরে ধীরে সেটাই বিরাট সেনানীর আকার ধারণ করতে থাকে।

দেখতে না দেখতেই আধ মাইলের মধ্যে এসে দাঁড়ায় ইখতিয়ার ও মালেক পরিচালিত অসংখ্য সৈন্যবাহিনীর দলবদ্ধ শব্দ। দূর থেকে রাজিয়ার হস্তিধ্বজা নজরে পরে ইখ্তিয়ারের। হিংস্র শ্বাপদের মত জ্বলজ্বল করে ওঠে চোখদুটো। চোখের ইশারায় জানান দেয় পাশের অশ্বরোহী মালেককে। করুণ আর্তিতে রাজিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে মালেক। মহব্বত ও দিললগীর মায়া জড়ানো থাকে দুচোখে। নজর ঘুরিয়ে দ্বিতীয় সারিতে জামালকে দেখতে পেয়েই মাথায় রক্ত চড়ে যায় তৎক্ষণাৎ। ইখতিয়ারকে বজ্রকঠিন স্বরে বলে ওঠে, 'সিপাহিদের হুকুম দাও ইখতিয়ার, জামালের পাঁজরটা ছিন্নভিন্ন না করা অবধি শান্তি নেই'।

ছিলার মধ্যে আটকে থাকা তীরের মত টানটান দাঁড়িয়ে থাকে সবাই। একটা হুকুমের অপেক্ষা, একটা মর্মভেদী ইশারা। তারপরই ক্ষুধার্ত বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়বে শিকারের ওপর। ডান হাতে নিজের ভল্লটা তুলে ধরে ইখতিয়ার, আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে ওঠে, 'ইন্কিলাআআব !!! বান্দেগাআআআন - ই - চেহলগনিঈঈই'।

উল্টোদিকে রাজিয়াও তলোয়ার উঠিয়ে গগনভেদী গর্জন করেন, 'দিল্লীঈঈঈ সালামত রহেএএ এ !!! দুশমন খতম করোওওওও'।

মুহুর্তের মধ্যে রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ে সহস্রাধিক সিপাহী। জমিন দুলে ওঠে সৈন্যদের পায়ের চাপে। দিগন্ত বিস্তৃত ধুলোর ঝড়ে দিগ্বিদিক অন্ধকার হয়ে আসে। তীব্র, তীক্ষ্ণ কোলাহলে কেঁপে ওঠে পৃথিবী। জামালের যুদ্ধাস্ত্রের নিপুণ প্রয়োগে চেহলগনির সেনারা ছিন্নভিন্ন হতে থাকে। একের পর এক ঘায়েল হতে থাকে প্রতিপক্ষের সৈন্য। প্রবল বিক্রমে একা হাতে পরিচালনা করতে থাকে নিজের অশ্বারোহী সৈনিকদের যারা সমূদ্রের ঢেউ এর মত ঝাপিয়ে পড়ে চেহলগনির ওপর।

অল্প সময়ের মধ্যেই নাস্তানাবুদ হয়ে যায় ইখ্তিয়ারের পদাতিকরা। বিপদ বুঝে মনে মনে অন্য পরিকল্পনা করে ইখ্তিয়ার। তিরন্দাজদের নিশানা লাগাতে বলে রাজিয়ার ওপর, কারণ সে জানে রাজিয়া খতম মানেই জামালের সেনা খতম। আর দিল্লী মুঠোর মধ্যে। দু সারি তিরন্দাজ সামনে এগিয়ে আসে। হাঁটু গেঁড়ে নিশানা করে রাজিয়াকে ঘিরে থাকা সিপাহিদের ওপর। বারিধারার মত শয়ে শয়ে তীর উড়ে আসে। সামনের অশ্বারোহীরা ছত্রাকার হতে থাকে।

রাজিয়া বুঝতে পারেন হাতির পিঠে বসে এই যুদ্ধ পরিচালনা করা অসম্ভব। তাই এক লাফে নেমে পড়েন জমির ওপর। একটা তেজী ঘোড়ায় চেপে কয়েকশো পদাতিক নিয়ে প্রবল পরাক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিরন্দাজদের ওপর। বিদ্যুৎ বেগে ফালা ফালা করতে থাকেন তলোয়ারের মুহূর্মুহু কোপে, রুপোলী ধাতুর ধারালো আঘাতে উড়তে থাকে কাটা মুন্ডু। লন্ডভন্ড করে দিতে থাকেন ইখ্তিয়ারের পরিকল্পনা অদম্য অসিচালনায়।

অন্য দিকে মালেক সুযোগ খুঁজতে থাকে জামালের কাছে পৌঁছনোর। প্রতিপক্ষ অশ্বারোহীদের অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় কিছুতেই নাগাল পায়না সে জামালের। ইখ্তিয়ার প্রমাদ গোনে। যুদ্ধ করতে করতেই নজর রাখে রাজিয়ার গতিবিধির ওপর। কোনো এক অতর্কিত আক্রমনের সুযোগ খুঁজতে থাকে শিকারী হায়নার মতো। খুব তাড়াতাড়ি সে বুঝে যায় যে রাজিয়া অবধি পৌঁছোনো প্রায় অসম্ভব। তাই গোপনে পিছন থেকে ভল্ল তাক করে ছুঁড়ে মারার ছক কষে। পদাতিকদের এগিয়ে যেতে বলে রাজিয়ার দিকে। ...........পাল্টা আক্রমণে পদাতিকরা অগ্রসর হয়.......... রাজিয়ার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। ক্রমশ যুদ্ধ ভয়ংকর আকার ধারণ করে। খেপা কুকুরের মত ঘুরে বেড়ায় ইখতিয়ার। সামান্যতম একটা সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করতে থাকে মরিয়া হয়ে। কোনভাবেই একটা মওকা খুঁজে পায়না সে।

'খোদা মেহেরবান ! একটা মওকা চাই আল্লাহ' ! মনে মনে বলে ইখতিয়ার.....

অবশেষে আচম্বিতেই সেই সুযোগ এসে যায় ইখ্তিয়ারের হাতে। যুদ্ধ করতে করতে কয়েক গজের দুরত্বে সামনা সামনি চলে আসে মালেক আর রাজিয়া। দুজনেই দুজনকে দেখে থমকে যায়। হাতের অসি মুহুর্তের জন্য স্থির হয়। দৃষ্টি আবদ্ধ হয় একে অপরের ওপর। আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলা পুরনো রংচটা আবেগ ঘনীভূত হয় ভাতিন্ডার আকাশে। পলকের জন্য আনমনা হয়ে যান রাজিয়া............ এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল ইখ্তিয়ার....... আর কালক্ষেপ না করে ডান হাত তুলে বিদ্যুৎ গতিতে রাজিয়ার দিকে নিশানা করে ছুঁড়ে দেয় শানিত বর্শা। মালেক সেটা দেখতে পেয়েই হাত তুলে চিৎকার করে থামাতে যায় ইখ্তিয়ারকে।

- 'সুলতাআআআআআন'............অচানক কোথা থেকে দুরন্ত গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে রাজিয়ার দিকে দুহাত বাড়িয়ে উড়ে আসে জামাল।

চোখের পলক ফেলার আগেই আমূল বিঁধে যায় প্রাণঘাতী অস্ত্র। এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায় জামালের হৃদপিণ্ড। কাটা কলাগাছের মত গড়িয়ে পড়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে। শুধু একটিমাত্র শব্দ বের হয় মুখ থেকে, 'সুলতাআন'। পরক্ষণেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে দিল্লীর তখ্ত-ও-তাজের সর্বক্ষণের অনুচর।
ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্ময়ে নিশ্চল হয়ে যায় দিল্লীর সিপাহীরা..........
'জামাআআআআল !!!' আর্তনাদ করে তলোয়ার ফেলে ছুটে আসেন রাজিয়া। জমিনের ওপর বসে প্রবলভাবে ঝাঁকাতে থাকেন জামালের দেহ।

- চোখ খোলো জামাল, তাকাও আমার দিকে...................

জামালের নিথর দেহে কোনো সাড় পাওয়া যায় না। মালেকের দিকে তাকিয়ে বলেন, 'এ তুমি কি করলে মালেক ? গুপ্ত ষড়যন্ত্রের আক্রোশে আমার বিশ্বস্ত সঙ্গীকে হত্যা করলে তুমি ?? তুমি কি এখনো বোঝোনি যে জামালকে নয়, ওরা খুন করতে চেয়েছিল আমাকে, তোমার রাজিয়াকে, একটা ঝুটা কিসসা শুনিয়ে তোমাকে উস্কিয়েছে ওরা, এই যুদ্ধ শুধুমাত্র তোমার চোখে পট্টি পড়ানোর জন্য ছিল, আর এইটাই কি তুমি চেয়েছিলে ? এইবার কি তোমার ইনকিলাব হাসিল হলো, বল আমায়, বল মালেক ?

মালেকের বুকে আছড়ে পড়েন রাজিয়া। তলোয়ার খসে পড়ে মালেকের হাত থেকে। স্তব্ধ হয়ে যায় চারিপাশ। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত দাঁড়িয়ে থাকে রাজিয়ার সেনা। ধীরে ধীরে চেহলগনিরা ঘিরে ধরে রাজিয়াকে।

রাজিয়াকে নজরবন্দী করা হয়। রাজিয়ার সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে চেহলগনির কাছে। দিল্লীর দিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বন্দীদের। শুধু ভাতিন্ডার রুক্ষ প্রান্তরে জন্নতের অপেক্ষায় একলা পড়ে থাকে সুলতানের নির্ভীক, বিশ্বস্ত ছায়াসঙ্গী............

-------------------------------------------------------------------------------------------

(এর বহু পরে রাজিয়া আর মালেকের নিকাহ হয় এবং তারও পরে চেহলগনির বিরুদ্ধে দুজনে যুদ্ধে যায় ও মারা যায়। পরের ঘটনার আর বিবরণ দিলাম না ইচ্ছে করেই যেহেতু এই গল্পটা জামালউদ্দিন ইয়াকুত কে নিয়ে।

পুনশ্চঃ এই গল্পে উপন্যাসের রসদ আছে নিঃসন্দেহে। যেহেতু আমি ছোট গল্প লিখি তাই যতটা সম্ভব ছোট করে বলার চেষ্টা করেছি। কোনো ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থনীয়।)                      

#bengalishortstories #drama #lovestories #romanticstories #sadstories #bengalihistory #raziasultan
#jamaluddinyakut #thriller     

ছবি : গুগল 
     

Saturday, June 11, 2016

ক্যামোফ্লাজ

ছবি : গুগল 
বিজ্ঞাপনী ঢঙে সূর্যাস্তের রঙে কোনো এক
মন খারাপের দেশ...........
সাঁটানো পোস্টারে তোর মুখ খুঁজে বেড়ানো
আমার চিরকালীন অভ্যেস...........

মরিচিকার ক্লান্তি যদি একটিবারও জানতি
তবে বিবর্ণ মুখবন্ধ খামে...........
একুশ শতকের চিঠি নিলামে হত বিক্রী
নজরকাড়া চড়া দামে। 




#bengalishortpoems

Friday, June 10, 2016

জষ্ঠি মাসের ষষ্ঠী পুজো

শ্বশুর মশাই ফোন করেছেন, মধুর পরোয়ানা
জামাইবাবু বেজায় খুশি, আহ্লাদে আটখানা
ইলিশ চিকেন, চিংড়ি মাটন, আছে আরো কতই
মানুষটা কি যেমন তেমন? জামাই ছেলের মতই !

অর্ডার দিয়ে স্পেশাল করে, গোলাপজামের হাঁড়ি
দিলখুশ আর দইও সাথে, কেমন করে ছাড়ি ?
শালা শালী কাকা মেসো, নানা রকম লোক
শপিং ব্যাগে বাড়তে থাকে, মানি ব্যাগের শোক !

গিন্নির আবার স্পেশাল হুকুম,কোয়ালিটিটাই নিও
বাপের ঘরে মুখটা রেখো, কোয়ানটিটি তেও দিও
গলদঘর্ম রোদের তাপে, শরীর নাজেহাল.........
ট্রামে বাসে ছোটাছুটি, ধুতি বেসামাল !!

শাঁখ বাজিয়ে উলু দিও, পুড়ছে শহর জ্বরে
জষ্ঠি মাসের ষষ্ঠী পুজো, জামাই এলো ঘরে
পাঁজির মতে পঞ্চ রীতি, উদর জুড়ে চাপ
গ্রামবাংলার ঘরের ছেলে, জামাই লাজবাব !!!!


ছবি : গুগল 


















#bengalishortpoems #jamaishasthi #funpoems

Thursday, June 9, 2016

অনুপদ্য - ৪

ছবি : নিজস্ব 
অপেক্ষাতে সময় গুনি 

কংসাবতীর চর.......... 

বসন্তরাগ উঠলো বেজে 

তোর চিঠি পাবার পর 







#bengalishortpoems

Tuesday, June 7, 2016

অনুপদ্য - ৩

নীরবে মেঘ আসে..... আমার মনের আকাশে 
নিভৃতে গোপনে পায়ে পায়ে... বিস্তীর্ণ মন্থর নিস্তব্ধতায় 
সে এসে বলে, "তোমায় বৃষ্টি দিলাম...... 
আর বদলে একখানি চিঠি লিখো,
যেমন করে আগে লিখতে আমায়
তাতে কি বা আসে যায় !
হোক না সে চিঠি বড় বা ছোট....হোক না সে কবিতার মত
তবু লিখো তোমার কথা..... আমাদের সময় "......
নীরবে নিভৃতে বারে বারে.......মেঘ আসে যায়.....

ছবি : নিজস্ব 
















#bengalishortpoems

Monday, June 6, 2016

সাপ্তাহিকী ১১ # ছায়াসঙ্গী - প্রথম পর্ব





লাহোর - পটোহার মালভূমির প্রান্তর

পাহাড়ের ঘন অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘদেহী কৃষ্ণকায় যুবক। পিড়হান পাগড়ির নিচে সন্দিহান চোখে যেন কোনো গোপন সংবাদ ঝিলিক দিচ্ছে। এদিক ওদিক ভালো করে দেখে নিয়ে ত্রস্ত পায়ে তাঁবুর সামনে চলে আসে সে। রক্ষীর দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, 'সুলতানকে খবর দেওয়ার আছে'। যুবককে আপাদমস্তক জরিপ করে নেয় পাহারাদার, পাস্তুনী জোব্বার খাঁজে তলোয়ারটা চোখে পড়ে। কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে, 'তারিফ'?

যুবক আবারও ফিসফিস করে বলে, 'জামাল.....জামালউদ্দিন ইয়াকুত'। রক্ষী হাত দেখিয়ে দাঁড়াতে বলে, তারপর ঢুকে যায় তাঁবুর ভেতর। পরক্ষনেই বেরিয়ে এসে বলে, 'সুলতান অপেক্ষা করছেন, আসুন'।

পর্দা সরিয়ে তাঁবুতে ঢোকে জামাল। পিঠ ঝুঁকিয়ে লম্বা কুর্নিশ করে বলে, 'আল্লাহ সালামত রাখুন সুলতানকে'।

- এ কি চেহারা হয়েছে তোমার জামাল !! তোমায় বিধ্বস্ত লাগছে যে !!
- অনেক কসরত করে লুকিয়ে চুরিয়ে এসেছি সুলতান, একটা ভয়ংকর খবর আছে !!
- ভয়ংকর !!!.......হাহাহাহা....... কি খবর শুনি ?
- আপনি হাসছেন সুলতান !!......ওদিকে ইখতিয়ার বাকি ওমরাহদের ফুঁসলাচ্ছে...........জোট পাকাচ্ছে সবাই মিলে, বলছে নাকি আপনার বিরুদ্ধে ইনকিলাবের আগুন জ্বালাবে।

জামালের কথা শুনে তাঁবুর জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন সুলতান। রেশমি পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। আকাশে মেঘ আর চাঁদের লুকোচুরি চলছে, পটোহারের মালভূমির বাঁ দিকটা রুপোলি জোছনায় থৈ থৈ করছে অথচ ডান দিকের তরাইটা গাঢ় কাজলের মত তমসাবৃত। লাহোরের সমস্যা মিটেছে এতদিনে, আবার নতুন করে দিল্লির ঝামেলা শুরু হয়েছে। জামালের দিকে ঘুরে তাকান সুলতান, বলেন, 'এটা আমার কাছে নতুন কিছু নয় জামাল। অনেকদিন আগে থাকতেই এর এহ্সাস হয়েছিল আমার। চেহলগণির ওমরাহরা যে আমাকে সুলতান হিসেবে মেনে নিতে পারবে না এ আমি জানতাম। দিল্লির তখ্ত এই প্রথম একজন জেনেনার দখলে, ওদের তো তকলিফ হবেই'।

- আপনি এটা নজরান্দাজ করবেন না সুলতান !!, চেহলগণিরা এবার জবরদস্ত সাজিশ করেছে। আমার অনুরোধ, আপনি দিল্লী ফিরবেন না। অন্য কোথাও চলে যান, আমি বন্দোবস্ত করে দিচ্ছি।

- নাআআআআআআআ...............আমার অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না জামাল, কারণ তোমাদের সুলতান কোনো নাদান নয় যে সাজিশের ভয় করবে। আমি ইলতুতমিশ এর যোগ্য ওয়ারিস, মামলুক বংশের উত্তরাধিকারী, আমি রাজিয়া সুলতান।

গর্জন করে ওঠেন দিল্লীর তখ্ত-ও-তাজের একনায়িকা সম্রাজ্ঞী। তাঁবুর মোলায়েম আবছা হলদেটে আলোয় জ্বলজ্বল করে ওঠে তাঁর চোখ। উত্তরের হাওয়ায় পিঠ ছাপানো চুল দুলতে থাকে বিষধর সাপের মত। এক অপার্থিব তেজের দ্যুতি ঠিকরে বেরিয়ে আসে যেন শরীরের আশপাশ থেকে। শ্রদ্ধায় ভক্তিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে সুলতানের বফাদার অনুচর জামালউদ্দিন। রাজিয়াকে কোনো এক ফেরেস্তার চেয়ে কম কিছু মনে হয় না তার। অজান্তেই ঝুঁকে আসে মাথা, আমতা আমতা করে বলে, 'গুস্তাখি মাফ করবেন সুলতান, কিন্তু সামনের বিপদটা যে অনেক বড়'।

- জামাল, ভুলে যেও না, আব্বাজানের মৃত্যুর পর দিল্লীর তামাম সালতানাতকে একা হাতে সামলে এসেছি আমি। এরকম অনেক ইনকিলাব আমার মুট্ঠীর মধ্যে গুঁড়িয়ে গেছে। লাহোরের বান্দা আমার পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে কাল। চেহলগণির ওমরাহদের কি করে মাত দিতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি। তুমি শুধু আমার সঙ্গে থাক। বাকিটা আমি দেখছি.........
- জো হুকুম সুলতান ! তবে এর সাথে আরেকটা খবরও দেওয়ার আছে।
চোখ সরু হয়ে যায় রাজিয়ার, জিজ্ঞেস করেন, 'কি'? জামাল মাথা না তুলেই বলে, 'জনাব মালেককেও দলে টানার চেষ্টা করছে ওরা, আপনার বিরুদ্ধে ওনার ক্ষমতাকে কাজে লাগাবে বলে'।
- মালেক !!! কি বাকোয়াস করছ জামাল ?? তুমি জানো কার বিরুদ্ধে কথা বলছ?? খবর ভুল হলে তোমার গর্দান নেব আমি !!
- খবর ভুল নয় সুলতান, আমার নিজের কানে শোনা, কয়েকদিন বাদেই চেহলগনির সভা বসবে ভাতিন্ডায়.....জনাব মালেকের দরবারে। আপনি অন্য জায়গা থেকেও পরখ করতে পারেন।
- ইয়া আল্লাহ !!!!

পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যায় রাজিয়ার। মখমলের গদির ওপর বসে পড়েন কাঁপতে কাঁপতে। তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে জামাল কখনই ভুল খবর দেওয়ার লোক নয়। এতদিনের বফাদার ছায়াসঙ্গী সে, তামাম সাম্রাজ্যের হাল হকিকত তার নখদর্পণে, মুর্দার পেটের ভেতর থেকেও খবর বার করে আনতে পারে সে। তার কথায় অবিশ্বাস করা প্রায় অসম্ভব।

গভীর বেদনায় হৃদপিণ্ড ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হতে থাকে পটোহারের নির্জন প্রস্তর প্রান্তরে। শেষ পর্যন্ত, মালেক !!! সেই ছোট্ট বয়েস থেকে দুজনে দুজনকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে এসেছে এতদিন, হৃদয়ের দরওয়াজায় যার নাম খোদাই করা, নিকাহ করার স্বপ্ন দেখেছে যাকে, ছদ্দবেশের আড়ালে আজ সেই ছোরা বসাবে বুকে ! কোন আকাঙ্খায় ! কিসের প্রলোভনে? দিল্লী সালতানাত !! একবার মুখ ফুটে তো বলতে পারতো, দিল্লীর তখ্ত পায়ে লুটিয়ে দিত রাজিয়া.......

দু চোখ ঝাপসা হয়ে আসে অচিরেই। ব্যর্থ প্রেমের বাষ্পে তাঁবুর পরিবেশ গুমোট হয়ে ওঠে.....

জামাল কোনো কথা না বলে লম্বা সেলাম করে পায়ে পায়ে বেরিয়ে আসে তাঁবু থেকে। নিজের ওপর রাগ ধরে অযথাই। কি দরকার ছিল সুলতানকে মালেকের কথা বলার ! মনে মনে ভাবে, বেওকুফের মত কাজ করে ফেলেছে। বক বক করতে করতে সব উগরে দিয়েছে। আসলে সুলতানকে মনে মনে গভীর শ্রদ্ধা করে, তাই কোনো কিছু লুকোনোর কথা ভাবতেই পারে না। সুলতানও যে তাকে পরম স্নেহে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছেন এতকাল। তখ্ত পাওয়ার আগে থেকেই রাজিয়ার বাধ্য অনুচর, এক হুকুমে জান দিতে পারে সে। সেই কিনা সুলতানের হৃদয় ভারী করে এলো ?

মনটা খারাপ হয়ে যায় জামালের। কিছুটা দুরে একটা বড় পাথরের ওপরের গিয়ে বসে পড়ে। পাগড়িটা খুলে রাখে পায়ের কাছে। বহু দুরে রাতের পাহাড়ের গা বেয়ে মেঘের ছায়া সরে যাচ্ছে একের পর এক। বন্য শূন্যতা নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে জামাল.......... ধীরে ধীরে চোয়াল শক্ত হতে থাকে, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিশোধ সে নেবেই। চেহলগণির পান্ডাকে ছাড়বে না সে। ইখ্তিয়ারের পাঁজরে তলোয়ারটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতে পারলে তবেই তার শান্তি। চাপা আক্রোশে ভেতরে দাবানল জ্বলতে থাকে জামালের। কোমরে গোঁজা স্বর্ণালী বাঁটটায় হাত বুলিয়ে নিয়ে একটানে খাপ থেকে বের করে আনে কঠিন ক্ষুরধার ধাতুটাকে। চাঁদের আলোয় ঝলসে ওঠে রুপোলি বিদ্যুৎ। বিড়বিড় করে ওঠে জামাল, 'ইন্শাল্লাহ'.......

(ক্রমশ)
 
#bengalishortstories #drama #lovestories #romanticstories #sadstories #bengalihistory #raziasultan
#jamaluddinyakut #thriller

Saturday, June 4, 2016

আর কেউ না

ঝরাপাতার দিনগুলো সব
বর্ষা ডেকে আনে
নির্ভেজাল সত্যিগুলো
হৃদয় শুধু জানে...........আর কেউ না !

কবর খুঁড়ে বের করে দিই
তপ্ত বিষম জ্বালা
ইতিহাসরা খুলতে জানে
বর্তমানের তালা ........আর কেউ না।

বন্ধু ছিল, স্বপ্ন ছিল
সাজানো চিত্রপটে
পরিচিত মানুষ যারা
এখন অপিরিচিত বটে.....আর কেউ না।

ছবি : নিজস্ব 




















#bengalipoems

Friday, June 3, 2016

ঘুম আসছে

আজ পদ্মপাতায় পদ্য লিখব
শব্দেরা জ্বলজ্বল করবে মুক্তোর মতো
সেইখানে রেখে যাবো অনুস্বর বিসর্গের মাত্রা
যা আগে দেয়নি কেউ, যা আগে লেখা হয়নি কখনো
কারণ, আজ যে বৃষ্টি পড়বে।

জলের ছায়ায় দেখে নেব শঙ্খচিলের শেষ প্রতিচ্ছবি
গড়িয়ে পড়ে যাবার আগে ছুঁয়ে যাব মেঘের ধূসর
কতক্ষন বিন্দু হয়ে থাকতে পারবো জানি না
মৌমাছির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ব হঠাৎ
কারণ, আজ যে বৃষ্টি পড়বে।

ছবি : নিজস্ব 
















#bengalipoems

Thursday, June 2, 2016

বার্ষিকী

ছবি : নিজস্ব 
আবার চলো প্রেমে পড়ি, ছায়াপথের বাঁকে
স্বপ্নে কাটুক দিনগুলো সব, রাত্রি কথার ফাঁকে
শেষের কথায় ছিল শুরু, শুরুর থাকুক রেশ
এমন করেই চলুক না হয়, এমনটাই তো বেশ....

ঘুম ভেঙ্গে যাক অন্ধকারে, জ্যোৎস্না গড়াক এসে
আলগা ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে যাক ঠুনকো কথার শেষে
শেষ আকাশে চিবুক ছুঁয়ে বর্ষা আসুক নেমে
খুনসুটিতে পথ চলা হোক একটুকু না থেমে......

হৃদয় জুড়ে সময় ছোটে, সোনার থেকেও খাঁটি
বার্ষিকীতে লেপ্টে থাকুক নতুন ধুলো মাটি।


#bengalishortpoems #marriageanniversarypoems

Wednesday, June 1, 2016

অনুপদ্য - ২

ফাগুন রঙের আগুন পাখি
ছবি : গুগল 
আঁধার রাতের আলো....
মনের মানুষ খোঁজা দায়
কে যে মন্দ....আর কে ভালো.....

ঠিক ভুল গুলো হিসেব বাড়ায় 
আছে মোমবাতিরও কালো...
মন্দ যতই হই না আমি 
তবু তাদের থেকো তো ভালো !!





#bengalishortpoems