Wednesday, April 27, 2016

সাপ্তাহিকী ৫ # গড়শালবনীর জঙ্গলে - প্রথম পর্ব

ক্রিং ক্রিং ......ক্রিং ক্রিং......ক্রিং ক্রিং
-হ্যালো....
-হ্যালো, আমি কি মিঃ নীলাভ বসুর সাথে কথা বলছি?
-হ্যা, নীলাভ বলছি...
-গুড মর্নিং মিঃ বসু, আমি সামার ভেকেশন প্রাইভেট লিমিটেড থেকে পত্রালিকা বলছি।
-হ্যাঁ বলুন..কি ব্যাপার......
-স্যার, আপনি আমাদের লাকি ড্র কনটেস্ট এ উইনার হয়েছেন। আপনি পেয়ে যাচ্ছেন ফিফটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্টে আমাদের রিসর্টে থাকার ৩দিন ২রাত্রির উইকেন্ড ট্রিপ।
-সরি..., কিন্তু আমার তো মনে পড়ছে না এরকম কোনো কন্টেস্টে পার্টিসিপেট করেছি বলে।
-মিঃ বসু, গত সপ্তাহে শনিবার সাউথ সিটি মলে আমরা ক্যাম্পেন করেছিলাম। আপনি সেখানে ফর্ম ফিলাপ করেছিলেন। সেখান থেকেই লাকি ড্র......
-হ্যাঁ বুঝলাম....., কিন্তু আমার সময় হবে না........ দুঃখিত।
-আমি জানি আপনি ভীষণ ব্যস্ত মানুষ। কলকাতার অন্যতম নামী ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজার আপনি। তবু যদি একবার আমাদের অফারটা একটু শুনে নিতেন প্লিজ।
-ওরেব্বাহ !! আমায় নিয়ে বিস্তর হোমওয়ার্ক করেছেন দেখছি !.......
-হ্যাঁ (সামান্য হেসে) ওটা তো আমাদের কাজের মধ্যেই পড়ে। ক্লায়েন্ট এর ডিটেলস রাখাটা খুব জরুরী........
-সে যাইহোক ম্যাডাম, আই এয়াম রিয়েলি সরি, আমার পক্ষে এখন যাওয়া সম্ভব হবে না।
-ওকে স্যার, আমি এখন আর বিরক্ত করছি না আপনাকে। তবু শুধুমাত্র জানার জন্য বলে রাখি আমরা গড়শালবনী তে আপনার উইকেন্ড ট্রিপের ব্যবস্থা করেছিলাম। আপনি আরো একবার ভেবে দেখতে পারেন। আমি বিকেলের দিকে নাহয় একবার ফিডব্যাক নিয়ে নেব আপনার, কেমন ?

লাইনটা কেটে দিয়ে জানলার বাইরে তাকায় নীলাভ। স্বচ্ছ কাঁচের ওপারে বৈশাখের দাবানলে পুড়ে যাচ্ছে গোটা শহর। জানলার পাশে অতবড় রাধাচুড়া গাছটাও কেমন যেন ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। একটা ঝুঁকে পড়া ডালের নিচে একটা চড়ুই বাসা বেঁধেছে। চোখ চলে যায় সেই দিকে। নীলাভর বাসা বাঁধা হয়নি। বাবা মা গত হবার পর বেহালার বনমালী নস্কর লেনের ফ্ল্যাটটায় এখন নিজের ছায়ার সাথে সহবাস করে সে। অবসর সময়ে বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা মেরে আর সিনেমা দেখে দিন চলে যায়। ফটোগ্রাফির একটা ঝোঁক আছে অবশ্য তবে বহুদিন ট্যুরে না যাওয়ার ফলে সময়ের ধুলো পড়েছে ওটার ওপর। গত মাসে ইয়ার এন্ডিং এর পর এখন বেশিরভাগটাই কলকাতায় কনসেন্ট্রেট করতে হচ্ছে। দেরাজ থেকে ডিএসেলার টা বের করে আনে নীলাভ। তোয়ালে দিয়ে একবার হালকা করে মুছে নেয় সাধের ক্যানন ৫৫০ডি টা। অভ্যস্ত হাতে লেন্স ক্যাপটা সরিয়ে ভিউ তে চোখ রাখে। জানলার মধ্যে দিয়ে ফোকাস পায় রাধাচূড়া গাছে চড়ুইয়ের বাসাটা। শাটারে তর্জনীর চাপ পড়ে.......ফ্রেমবন্দী হয় স্বপ্ন।
'কি যেন নাম বলছিল জায়গাটার? হ্যা, গড়শালবনী। কেমন যেন একটা বেয়াড়া, বাউন্ডুলে নাম', বিড়বিড় করতে করতে বাথরুমে ঢোকে নীলাভ। রোববার হওয়ার দরুন আজ একটু দেরিই হলো। ...........................................................................................

ক্রিং ক্রিং ......ক্রিং ক্রিং......ক্রিং ক্রিং
-হ্যালো.....
-গুড আফটার্নুন মিঃ বসু, আমি পত্রালিকা, সামার ভেকেশন থেকে বলছি।
-ও হ্যাঁ বলুন............(দ্বিপ্রাহরিক নিদ্রার রেশ কাটে নীলাভর)
-আমাদের অফারটা কি ভেবে দেখলেন আরেকবার ?
-দেখুন আমি এখনো কিছু ডিসাইড করিনি। তবে ওই জায়গাটা.........গড়শালবনী না কি যেন........ এটা কোথায় ?
-গড়শালবনী কলকাতা থেকে একশো সত্তর কিলোমিটার দূরে। ঝাড়গ্রামের খুব কাছেই।
-কিন্তু এমন একটা অদ্ভূত জায়গায় কেন বলুন তো? মানে, কি আছে সেখানে ?
-ঠিকই বলেছেন। আসলে কি জানেন, আমরা সেইসব জায়গা খুঁজে বের করি যেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে নি। যেখানে ঘুম ভাঙ্গে ময়না দোয়েলের গানে। যেখানে গাছের ছাওয়ায় দু দন্ড ঠেস দিয়ে বসলে মনের সমস্ত গ্লানি, ক্লান্তি বুদবুদের মত মিলিয়ে যায় হাওয়ায়। যেখানে রাত্রি নামে অরণ্যের নিঃস্তব্ধতায়, যেখানে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়, যেখানে প্রতিদিন বাঁচা যায়, প্রতিদিন শান্তিতে মরা যায়।........তেমনই কিছু জায়গার খোঁজ করি আমরা............
-বাহ্ আপনি তো ভারী সুন্দর কথা বলেন,.. নাকি এগুলো সব প্রমোশনাল গিমিক?
-না মিঃ বসু,....... গড়শালবনী আমি গেছি (দৃঢ় কন্ঠে)। ইন্টারেস্টিংলি জায়গাটার একটা রোমাঞ্চকর ইতিহাস আছে। আজও সেই ইতিহাসের চিহ্ন বহন করে চলেছে সেখানকার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, একটা সাল, টিক, মহুয়া, হিজলীর জঙ্গল, একটা পুরনো দূর্গা মন্দির এবং ডুলুং নদীর পাড়।
-আচ্ছা !!!!! কিরকম ?? (গল্পের গন্ধে বিছানার ওপর নড়ে চড়ে বসে নীলাভ)

-গড়শালবনী মূলত জঙ্গলে ঘেরা একটা জায়গা। সাল, টিক, মহুয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক গুনাবলী সম্পন্ন গাছগাছালির মেলা সেখানে। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি মল্ল রাজাদের নন্দন কানন ছিল এই গড়শালবনী। আদিমল্লর সুযোগ্য পুত্র জয়মল্ল তখন এক প্রতাপশালী রাজা। সেখানকার এক অনামী গ্রামের কোনো এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় পরশি রাজ্যের সুদর্শনা রাজকুমারী নীহারিকার সাথে। যশ ও খ্যাতির গুনে খুব সহজেই নীহারিকার মনে গভীর রেখাপাত করে সুঠামদেহী যুবক জয়মল্ল। প্রেমের আঁচে জ্বলতে সময় লাগেনি রাজবংশীয় ক্ষত্রিয়দের। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দুই হৃদয়ের সুর একই যন্ত্রে বাঁধা পড়ে যায়। আদিমল্লর সাথে পুরনো কলহের জেরে নীহারিকার বাবা রাজা বীরভদ্র এই সম্পর্ক অস্বীকার করেন। বিষন্নতার অতলে ডুবে যান নীহারিকা। মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে জয়্মল্লর। নীহারিকা জয়ের জেদ চেপে যায় সহস্রগুন। পরশি রাজ্য আক্রমনের ছক তৈরী করে ফেলেন তড়িঘড়ি। যুদ্ধের আগে জয়্মল্লকে গোপনে ডেকে পাঠান নীহারিকা, কোনো এক গোধুলির বিকেলে, এই গড়শালবনীর জঙ্গলে, ডুলুং নদীর পাড় ঘেঁষা কনকদুর্গা মন্দিরে। জয়্মল্লকে যুদ্ধ থেকে নিরস্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলেন নীহারিকা, রাজবংশ ও নিরীহ প্রজাদের প্রাণ ভিক্ষা করেছিলেন সেদিন। কিন্তু জয়্মল্ল শোনেননি, নিজের জেদ এবং সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। উপায়ন্তর না দেখে ওড়নার আড়াল থেকে হাতির দাঁতের ভোজালি বের করে আমূল বসিয়ে দিয়েছিলেন জয়মল্লর বুকে। নিজেও বিষ খেয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন জয়মল্লর পায়ে। অব্যক্ত হাহাকারে ভরে ওঠেছিল সেদিন কনকদুর্গা মন্দিরের প্রস্তর ভূমি, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গড়শালবনীর জঙ্গল।.............. আজও ডুলুং নদীর পাড়ে কান পাতলে ইতিহাসের ফিসফিসানি শোনা যায়। শোনা যায় নীহারিকা জয়মল্লর প্রানোচ্ছল প্রেমের গল্প। .......................বলুন মিঃ বসু আপনি কি যেতে চান সেখানে? আপনি কি শুনতে চান সেই মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি, আপনি কি দেখতে চান জয়মল্লর অশ্বখুরের চিহ্ন ?

বিহ্বলতার ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারে না নীলাভ। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, 'এমন নিখুঁত বর্ণনা, এরকম জীবন্ত ইতিহাসের গল্প !.......আপনি জানলেন কি করে? কে আপনি' !!!?
-আমি একজন সামান্য ইতিহাসের ছাত্রী মিঃ বসু, ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করব বলে ভেবেছিলাম। কপাল ফেরে ট্যুর কোম্পানিতে চাকরি করছি। তবে হ্যাঁ, ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমন বরাবরই আমার প্রিয় বিষয়ের মধ্যে একটা। তাই বিভিন্ন জায়গার ইনফরমেশন রাখি। নতুন কিছু জানতে পারি আবার কর্মসূত্রে কাজেও লাগে .......
-আমার একটা শর্ত আছে পত্রালিকা.......
-শর্ত !!!!!! .
-হ্যাঁ, গড়শালবনী আমি যেতে পারি। কিন্তু গাইড হিসেবে সঙ্গে যেতে হবে আপনাকে, এমন আরো গল্প শোনার সুযোগটা যে আমি কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারব না।

কয়েক মুহুর্তের নিস্তব্ধতা...........

-আমার সাথে যে আপনি যেতে চাইবেন না মিঃ বসু।
-কেন, কি সমস্যা ?
-আপনার যদি কাল সময় হয়, তাহলে টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনে আসুন। বিকেল ৫টা। বাকিটা সচক্ষে দেখে নেবেন।

ছবি : নিজস্ব 

ঘড়ির কাঁটায় চারটে পঞ্চাশ। এখনো দশ মিনিট সময় আছে হাতে। প্রত্যেকটা মিনিট এক একটা দীর্ঘ বছরের মত লাগছে নীলাভর। কাল রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি। সারারাতই প্রায় পত্রালিকার কথা চিন্তা করেছে। কেমন যেন একটা জাদু আছে মেয়েটার কথায়। কেমন রহস্যের মোড়কে, কি সাবলীল ভঙ্গিতে একটা ইতিহাসের পটচিত্রর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল কাল। একে চোখে না দেখা অবধি শান্তি নেই........

পাঁচটা পাঁচ। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ........কি ব্যাপার? তাহলে কি ভুলে গেল ! নাকি মেট্রোর সামনে দাঁড় করিয়ে একটা বড় রকমের রসিকতা করলো কেউ ? তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরোনোটা বোধহয় ভুল হয়ে গেল। কিন্তু দুপুরে তো ফোন করে কনফার্ম করে নিয়েছিল সে। অধৈর্য হয়ে পড়ে নীলাভ। সহসা দু হাত দুরে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়ায়। দরজা খুলে বেরিয়ে আসে সালোয়ার কামিজ পরিহিত বছর পচিশের একটি তরুণী। লম্বা বিনুনি, বগলে ক্রাচ, এদিক ওদিক তাকায় মেয়েটি, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে চলে যায় সামনের দিকে। নাহ ! মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরায় নীলাভ। আর পাঁচ মিনিট ওয়েট করবে সে, তারপর বেরিয়ে যাবে ..........

-আপনি কি মিঃ নীলাভ বসু?
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নীলাভ,......সেই মেয়েটি......কোনরকমে একহাতে ক্রাচ সামলিয়ে অন্যহাতে কপালের অবিন্যস্ত চুল ঠিক করছে।
- হ্যা আমিই নীলাভ। আপনিই........ ?
-পত্রালিকা.........................
এক মিনিট থমকায় নীলাভ, ভালো করে চেয়ে দেখে নরম বিকেলের গোধুলির আলো পড়েছে পত্রালিকার মুখে। এক মায়াবী অবয়বে নীহারিকার আর্তি খুঁজে পায় পত্রালিকার কাজলটানা চোখে। সেই চোখ একরাশ প্রশ্ন আর অনাবিল সারল্য নিয়ে তাকিয়ে থাকে নীলাভর দিকে।
- আমি বলেছিলাম না, আপনি যেতে চাইবেন না আমার সাথে। .......
পত্রালিকা নয়, এ যেন নীহারিকার করুণ মর্মস্পশী আকুতি, কোনো এক অতলান্ত খাদ থেকে উঠে এসে ধোঁয়ার মত পাক খেতে খেতে আকাশে বিলীন হয়ে যায়।
-না, (দৃঢ় কন্ঠে বলে নীলাভ)....... আপনি ভুল বলেছিলেন, আমাকে আর নিজেকেও...............(একটু হেসে) চলুন কোথাও বসে একটু চা খাই, অনেক গল্প শোনার আছে, অনেএএএক.............. সাবধানে আসুন .......
দুজনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যায় সামনের দিকে। ইতিহাসের কলরব জীবন্ত হতে থাকে বর্তমানের কথোপকথনে.................

(ক্রমশ)

#bengalishortstories #drama #lovestories #romance #thriller #adventurestories #suspense

Tuesday, April 19, 2016

সাপ্তাহিকী ৪ # লাইন

আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেছে অরূপের। অন্যান্য দিন নটার আগে সূর্য ওঠেনা। আজ অবশ্য একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছে মনে মনে। সেটাই বোধহয় ব্যতিক্রমের কারণ। আড়মোড়া ভেঙ্গে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে বাবা টিভি খুলে বসেছে।

'কি বলছে গো ? কোথাও কোনো গন্ডগোল বলছে ?' চাপা গলায় বাবাকে জিজ্ঞেস করে অরূপ।
'নাহ তেমন কিছু নয়, বালিগঞ্জ আর কসবার দু একটা জায়গায় একটু ঝামেলা চলছে। বাকি তো ঠিকই আছে, তাছাড়া এই তো সবে শুরু, বেলা বাড়ুক... তবে তো' ! বিড়বিড় করে ওঠেন মলয়।

সামান্য চিন্তার ভাঁজ পড়ে অরূপের কপালে, ব্যস্ত হয়ে বলে, 'শোনো আমি কিন্তু একাই যাব, একদম আতুপুতু করবে না'।

সামান্য একটু ঘাড় ঘুরিয়ে অরূপের আকস্মিক বড় হয়ে যাওয়াটা দেখেন মলয়, স্মিত হেসে বলেন, 'যেমন বুঝবে...'। 

অভ্যস্তহাতে সোফার পাশের টেবিলে চায়ের কাপ রাখেন পরমা, বলেন, 'তাই ভালো, আমরা বরং দুজনে গিয়ে কাজটা মিটিয়ে আসি, তারপর ও ওর সময়মত যাবে। আমায় আবার রান্না চড়াতে হবে এসে, বেশি দেরি করলে চলবে না'।

'হুমম, তাই চলো', চায়ের কাপে তাড়াতাড়ি দুচুমুক দিয়েই উঠে পড়েন মলয়। ফতুয়াটা গলিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পরমাকে সঙ্গে নিয়ে ।

অরূপের বেশ ফুরফুরে লাগছে হঠাৎ করে। আজকের দিনটা অন্যরকম। অন্যান্য বছরে বারান্দার ধাপিতে বসে বাবা মাকে, বাড়ির লোকজনকে, পাড়ার সকলকে একসাথে যেতে দেখত। আজ সেও যাবে...... একা..........ভোট দিতে। আজ সেও হয়ে উঠবে এই রাজ্য, এই দেশ গড়ার কারিগর। রাজনীতির মসনদে তারও আঙুলের ছাপ থাকবে। গত বছরের শেষের দিকে আঠারো কমপ্লিট করে কিশোর অরূপ এখন যুবক। ফিনফিনে লতার মত বাবা মার ছায়ায় বেড়ে উঠেছে সে এতকাল। মুঠোয় এখন তার পরিবর্তনের শক্তি, বিপ্লবের অঙ্গীকার। এক মুহুর্তে ওলট পালট করে দেবার ক্ষমতা এখন তার হাতে। বেশ রোমাঞ্চই হচ্ছে মনে মনে। দ্রুত বাথরুমে ঢুকে পড়ে অরূপ। রেডি হতে হবে...........................

বাইরে বড্ড রোদ। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডান দিকের গলিটা নিলেই বড় রাস্তা। দুচার মিনিট হেঁটে চন্ডীতলার দিকে এগোলেই বাঁ দিকে স্কুলটা পড়ে। বরাবর ওখানেই পোলিং বুথটা হয়। একটু ছায়ায় ছায়ায় যেতে হবে। ছাতাটা নিয়ে বেরোলেই হত, কিন্তু ভীষণ বোকা বোকা দেখতে লাগে, তাই সানগ্লাসটা পড়ে নিয়েছে সে। মানানসই টিশার্ট আর জিন্স এ মন্দ দেখাচ্ছে না। দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে যায় অরূপ..................

বুথের কাছাকাছি আসতেই দেখা যায় বিরাট লাইন। তেঁতুল বিছের মত কোমর বাঁকিয়ে এ যে স্কুল ছাড়িয়ে একবারে রাস্তায় এসে পড়েছে। ভারী মজা লাগে অরূপের। হাজার হোক প্রথমবার। হোক না বড় লাইন, কি আসে যায় তাতে। লাইন হোক বা রোদ, কোনো কিছুই আজ দমিয়ে রাখতে পারবে না তাকে। এদিক ওদিক চেয়ে দেখে অরূপ, পাড়ার কোনো বন্ধুটন্ধু লাইনে দাঁড়িয়ে আছে কি ? নাহ। ফেসবুকে একটা পোস্ট দেওয়া যাক বরং। একটা ছবি তুলে পোস্ট করে, 'ফিলিং এক্সাইটেড ইন আ পোলিং কিউ'.........

এমন সময়, হঠাৎ কোথা থেকে এক পশলা বৃষ্টির মত হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসে একটি মেয়ে। কাছে এসে শশব্যস্ত হয়ে বলে, 'দেখি দাদা, একটু দেখি। আমার লাইন ছিল এখানে'।

'কি আশ্চর্য আপনার লাইন কি করে হয় ? আমি তো আগে এসে দাঁড়িয়েছি', অবাক হয়ে যায় অরূপ।

-'হয় দাদা হয়। ওই আপনার সামনের কাকুকে জিজ্ঞেস করুন না, আমি ছিলাম কিনা.......কি কাকু? আমি ছিলাম তো ?

সামনের পাজামা পাঞ্জাবি পরিহিত গোলগাল মাঝবয়সী ভদ্রলোকের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় অরূপ। খয়েরী দাঁত বের করে উনি বলেন, 'হ্যাঁ হ্যাঁ ও ছিল তো'। 

অগত্যা ব্যাজার মুখে দু কদম পিছিয়ে আসে অরূপ । ফাঁক দিয়ে টুক করে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে মেয়েটি। হাতে সামান্য বড় সাইজের একটা লেডিজ ব্যাগ। সেটা নামিয়ে রাখে পাশে। বিরক্তি ফুটে ওঠে অরূপের চোখে মুখে। 

মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, 'সরি কিছু মনে করবেন না, আসলে ওই সামনের দোকানে জল কিনতে গিয়েছিলাম। তারমধ্যেই আপনি ...........' বলেই অবাক হয়ে অরূপের দিকে এক মুহূর্ত তাকিয়ে বলে, 'আপনাকে কোথায় দেখেছি যেন, সবুজ সংঘের কাছেই আপনার বাড়ি না' ? 

ভারী অপ্রস্তুতে পড়ে যায় অরূপ। একে অনধিকার প্রবেশ তার ওপর আবার অযাচিত প্রশ্ন, আমতা আমতা করে বলে, 'হ্যাঁ , কিন্তু আপনি......?? 

-'আরে আমি তো একটু এগিয়ে ওই শিবমন্দিরের গলিতে দুটো বাড়ির পরেই থাকি'।

হ্যাঁ মনে পড়েছে অরূপের, গতবার সরস্বতী পুজোয় ওই গলির সামনেই ফাংশন হয়েছিল। মেয়েটি গিটার বাজিয়ে গান গেয়েছিল সেদিন। কি নাম যেন................কিছুতেই মনে করতে পারে না অরূপ।

-'আমি বিদুলা' , হাত বাড়িয়ে দেয় মেয়েটি।

-'ওহ, আমি অরূপ', বলে মৃদু চাপ দেয় মেয়েটির হাতে। লক্ষ্য করে, মেয়েটি ডান হাতে অনেকগুলো কালো চুড়ি পড়েছে, বাঁ হাতে একটা পোড়ামাটির বালা। ভারী অদ্ভূত লাগে অরূপের। মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে, 'ইয়ে মানে, আপনি কি এখনো গিটার বাজান'?

-'হ্যাঁ, বাজাই তো', বিদুলা হেসে বলে, 'আমার একটা ব্যান্ডও আছে, আমরা তো বিভিন্ন জায়গায় শো করি'........

লাইন এগোতে থাকে। 

অরূপ লক্ষ্য করে বিদুলার ঘাড়ের ঠিক নিচে একটি ট্যাটু করা আছে। খুব ছোট করে লেখা -'প্রেসলি'। জিজ্ঞেস করে, 'আপনি এলভিস প্রেসলির ভক্ত, তাই না'? মুখে চোখে বৈশাখের বিস্ময় নিয়ে বিদুলা বলে, 'কি করে জানলেন' ?......... ' 
'এই যে আপনার ট্যাটু টা', আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে অরূপ। 
-'ওও, হাহাহাহাহা........হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। আমি প্রেসলির ভীষণ ভক্ত .........বিশেষ করে হার্টব্রেক হোটেল.......আমার ফেভারিট। তবে কি জানেন তো প্রেসলি নামের একটা গুপ্ত জঙ্গি সংগঠনও আছে। এটা সেটাও হতে পারে'।.........

-'জঙ্গি সংগঠন' ???!!!!! স্বগতোক্তির মত করে বলে অরূপ, বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।

অরুপের মুখের ভাব দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ে বিদুলা। ভুরু নাচিয়ে বলে, 'কি ভয় পেলেন নাকি? আপনি তো ভারী ভিতু দেখছি, এত ভয় পেলে আলাপ জমাবেন কি করে,' ? 

কি বলবে ভেবে পায়না অরূপ, সারা মুখে লালচে আভা ছড়িয়ে পড়ে, আলাপ জমানোর কথা বলছে বিদুলা.......ও কি কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে?

বৈশাখের তীব্র দহনে কালবৈশাখীর আভাস পাওয়া যায় দুজন সদ্য যুবক যুবতীর মনে। স্বভাবে লাজুক, মুখচোরা অরূপ স্নাত হয় বিদুলার চোরা খুনসুটিতে। মধ্য গগনে অনুরাগের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে জমাটি আলাপচারিতায়। 

লাইন এগোতে থাকে.....................

-'আপনি একটু লাইনটা রাখুন। আমি চট করে কোল্ড ড্রিঙ্কস কিনে নিয়ে আসি। খুব তেষ্টা পেয়েছে। আপনি খাবেন তো' ? অরূপ সম্মতির আশায় তাকায় বিদুলার দিকে।

-'হ্যাঁ খাব', বিদুলা ঘাড় এলায়। 'বেশি দেরী করবেন না যেন'। 

'আসছি', বলে কয়েক পা এগিয়ে যায় অরূপ .................

আচমকা বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজে গোটা এলাকা থরথর করে কেঁপে ওঠে। প্রায় দশ হাত ধুরে ফুটপাথের ওপর ছিটকে পড়ে অরূপ। চোখের সামনে যেন কালো রঙের প্রলেপ দিয়ে যায় কেউ। চারিদিকে নিবিড় অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। কানের মধ্যে ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ হতে থাকে একনাগাড়ে। বুকের মধ্যে হৃদপিণ্ডের গতিবেগ বেড়ে যায় সহস্র গুন। 

মিনিট কয়েক বাদে সম্বিত ফিরে পেতেই হাত বাড়িয়ে রাস্তার ওপর ভর দিয়ে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করে অরূপ। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা। মাথার পেছনে হাত দেয়। রক্ত !!!!............ আবছায়া চোখে চারপাশটা দেখার চেষ্টা করে। শীতের কুয়াশার মত জমাট ঘোলাটে হয়ে আছে চারিদিক। 

লাইনের জায়গাটাতে এক বিরাট ধোয়ার কুন্ডলী পাক খেয়ে উঠছে আকাশের দিকে। ধীরে ধীরে চোখের ঝাপসা ভাবটা কাটতে থাকে। আস্তাকুঁড়ের জঞ্জালের মত ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে আছে দুহাত অন্তর অন্তর। রাস্তার দুধারে রক্তের স্রোত। ভয়ানক চিৎকার আর কান্নার কোলাহলে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।

কোনরকমে টলতে টলতে স্কুলের সামনেটাতে আসে অরূপ। এইখানে ........এইখানেই তো দাঁড়িয়েছিল সে........হ্যাঁ মনে পড়েছে। কোল্ড ড্রিঙ্কস আনতে গিয়েছিল............মুহুর্তে মনে পড়ে যায় বিদুলার কথা । বিদুলা কই ......বিদুলা ?........চিৎকার করে সে ডাকে, 'বিদুলাআআআআআ'...........................

খানিক দূরে দশ পনেরোটা বাড়ির পরে একটা গলির মুখে বিদুলা আড়াল থেকে মুখ বাড়ায়। চোখে পৈশাচিক উল্লাসের ছাপ স্পষ্ট। স্কুলের অনতিদূরেই চূড়ান্ত অবিন্যস্ত অরূপকে দেখতে পায়। ধীরে ধীরে গলির ভিতরে মিশে যায় বিদুলা। অরূপ পাগলের মত চর্কিপাক খেতে থাকে রাস্তা জুড়ে........মনে পড়ে বিদুলার বলা প্রেসলির গুপ্ত জঙ্গি সংগঠনেই কথা। চিৎকার করে ওঠে 'বিদুলাআআআআআ'.................



বিন্যাস : অর্ণব দাশগুপ্ত 

#bengalishortstories #drama #lovestories #romance #separation

Wednesday, April 13, 2016

সাপ্তাহিকী ৩ # পয়লা দা

আমার এক দাদা ছিল। ছিল বলাটা বোধহয় একটু অতিসোয়াক্তি হচ্ছে, তবে বর্তমানে ঠিক কোথায় ঘাঁটি গেঁড়ে বসে আছে আমার জানা নেই। না, কোনো নিকট দূরে বা কোনো রক্তারক্তির সম্পর্কও নয়। এক নিপাট নির্ভেজাল পাতানো পাড়াতুতো দাদা। ডাকনাম পয়লা। আমরা ডাকতুম পয়লাদা বলে। ভালো নাম অবশ্যি একটা ছিল বটে তবে আমরা কেউই তেমন ভালো ছিলুম না বলে ওই অদ্ভূত নামেই ডাকতুম। নিরীহ, ভদ্র ছেলে, ফর্সা মেদহীন গড়ন। তখন ওর ২৬ - ২৭ বছর বয়েস হবে বড়জোর। উদ্ভট চিন্তাভাবনা, বিচিত্র কার্যকলাপ আর আমুদে স্বভাবের জন্য আমাদের সকলেরই ভীষণ প্রিয় পাত্র ছিল পয়্লাদা। আমায় খুবই স্নেহ করত। সচরাচর বাবা মায়েরা ছেলেদের এমন নাম রাখে না, তাই আমার কাছে একটু অদ্ভূতই লেগেছিল। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'আচ্ছা, তোমার নাম পয়লা কেন গো? পৃথিবীতে তো আরো নাম আছে, এরকম একটা নাম কে দিলে তোমায়' ? আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে বলেছিলো, 'ধুর বোকা ! ভারী তো একটা নাম, কি আসে যায় তাতে' ?
পরে জেনেছিলাম পয়লা বৈশাখে জন্ম বলেই...........।

মনে আছে কোনো এক বিকেলবেলায় পয়্লাদার বাড়ি গেছি। দেখি কতকটা লোকনাথ বাবার স্টাইলে বিছানার ওপর বসে জানলার বাইরে তাকিয়ে বেভুল হয়ে কি যেন ভাবছে। পরনে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর একটা কুঁচকানো সাদা পাজামা, যার দড়ির একদিকটা কোমর থেকে বেরিয়ে হাঁটুর ওপর নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। এমন কঠিন আত্মহারা ভাব আমার কাছে নতুন কিছু নয় । তাই সেদিকে পাত্তা না দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'কি ভাবছ পয়্লাদা' ? স্বপ্নাবিষ্টের মতো বলেছিল, 'ভাবছি না রে......... শুনছি'। একটা চেয়ার টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'কি ? মহাজাগতিক শব্দের কোনো আবহ প্যাটার্ন শুনতে পেলে বুঝি' ? ফাজলামি করার অভ্যেস ছিল আমার বরাবরের। সেটা বোধহয় ক্ষমা ঘেন্না করেই বলেছিলো, 'ওই যে শোন, একটা পাখি ডাকছে'। পয়্লাদার ভাব গতিক হাড়ে হাড়ে চিনি বলেই গলায় আরও বেশ কতকটা ছ্যাবলামি মিশিয়ে বললাম, 'কি পাখি পয়্লাদা ? জটায়ু' ?

একথায় আমার দিকে কটমট করে তাকিয়েছিল এক পলক, তারপরেই মুখ ঘুরিয়ে কোমলস্বরে বলেছিল, 'না..........বেনেবউ.......কেমন যেন একটা সুর করে জিজ্ঞেস করছে দ্যাখ ! কি পরিচয় ......কি পরিচয়' ? সেই প্রথম জানলাম বেনেবউ নামের একটা পাখি আছে। এক নিবিড় ভালোলাগায় আশ্চর্য হয়ে গেছিলাম সেদিন। বড় মন ভালো করা একটা নাম - বেনেবউ।

জিজ্ঞেস করলাম, 'পাখিটা কি কোনো গান গাইছে' ? বলল, 'না, সুর করে থেমে থেমে ডাকছে'।
বলেই এক লাফ দিয়ে ঘরের কোনে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো গীটারটা বের করে আনলো। তারপর বিছানার ওপর বসে, স্ট্রিং এ আঙুল ছুঁইয়ে বলল, 'শোন এটা..........'। চোখ বন্ধ করে শুনতে পেলাম গীটারে সঙ্গত করে দরাজ গলায় পয়্লাদা গাইছে, 'মুসাফির হু ইয়ারো, না ঘ্যর হ্যায় না ঠিকানা, মুঝে চ্যলতে জানা হ্যায় বাস চ্যলতে জানা'..........................

বৈশাখের সেই বিকেলে এক অপার মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল বেনেবউ এর সুরের মূর্ছনা প্রাঞ্জল ভাষায় অনুবাদ করে দিচ্ছে পয়্লাদা। একের পর এক গান গেয়েছিল সেদিন, আর আমি কোনো এক খেয়ালী যুবকের মন্ত্রবলে নিশ্চুপ শুনে গিয়েছিলাম সেসব। গান শেষ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, 'কিরে, তুই যে একেবারে স্পিকটি নট হয়ে গেলি !! চাউমিন খাবি' ?
ঘোর কাটিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'চাউমিন !! এখন ? না মানে এত ভালো গান হচ্ছিল যে'..............
সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল, 'চল চল, ভবানী সিনেমার উল্টোদিকে একটা ছোট রেস্টুরেন্ট খুলেছে, সাত টাকায় এক প্লেট চাউমিন.......হেব্বি টেস্ট........একবার খেলে ভুলতে পারবি না'।
প্রায় টানতে টানতে নিয়ে গেছিল সেদিন।

এতক্ষণ পড়ে যাঁরা ভাবছেন যে পয়্লাদা আর পাগলা দাশু সমার্থক শব্দ, তাদের বলি পাগলা দাশুর কিছু বৈশিষ্টতা ছিল বটে তবে উচ্চশিক্ষিত এবং যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল পয়্লাদা। যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে কেমিস্ট্রি নিয়ে এম এস সি পাশ করে বিদেশে পি এইচ ডি করার প্ল্যান করছিল সেসময়। বিভিন্ন বিদেশী ইউনিভার্সিটির ম্যাগাজিন আর জার্নাল নিয়মিত আসতো বাড়িতে। আমি অভিমান করে বলতাম, 'তুমি কি সত্যি চলে যাবে একদিন ? পি এইচ ডি তো এখানেও করা যায় নাকি ? আর বাইরে গেলে কত খরচ হবে বলো তো' !! আমায় থামিয়ে দিয়ে হেসে বলেছিল, 'ধুর পাগল ! বিদেশে পড়াশোনার কত সুযোগ সুবিধে জানিস ? আর তাছাড়া স্কলারশিপটা পেয়ে গেলে চিন্তা কি' ?

কপট রাগ দেখিয়ে বলেছিলাম, 'তাহলে আমি আর আসছি না কাল থেকে, আমায় আর কেমিস্ট্রি পড়াতেও হবে না, তুমি বরং বাইরেই যাও'।

- আর তোর্ পরীক্ষা ? তার কি হবে ? ফার্স্ট ইয়ারের অ্যানুয়ালটা তো দিবি ঠিক করে নাকি !!.........
- সে খোঁজে তোমার দরকার কি, তুমি তো চলেই যাবে........

এর বেশ কয়েকদিন বাদে আমার সমস্ত অভিমান, মন-খারাপ, রাগ, মিথ্যে করে পয়্লাদার বাড়িতে এসেছিল এক নামকরা বিদেশী ইউনিভার্সিটির চিঠি। সারা বাড়ি নেচে কুদে মাতিয়ে দিয়েছিল পয়্লাদা। ফোন করে সুখবর দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছিল আমায়। সেদিন কি ভীষণ অনিচ্ছা সত্বেও গিয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারব না........শেষ বারের মত।

যেদিন ফ্লাইট ছিল তার আগের দিন ফোন করে বলেছিল, 'শোন পড়াশোনাটা চালিয়ে যাস, যতদুর পারবি, মনে রাখিস ওটাই সম্বল, অসময়ের হাতিয়ার.......আর মন খারাপ করিস না, আমি তো আসব মাঝে মাঝেই, তখন দেখা হবে'। 'সাবধানে যেও' কথাটাও ভালো করে বলতে পারিনি সেদিন। পেটের ভেতর থেকে কে যেন জোর করে গলাটা চেপে ধরে রেখেছিল। স্বজন হারানোর বেদনার থেকেও কঠিন ছিল সেই ফোন। নির্বাক নিস্তব্ধতায় ল্যান্ড লাইনের রিসিভার ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম ঠায়। শুধু বলেছিলাম, 'আচ্ছা..........'

এরপর বহু বৈশাখ এসেছে আর গেছে। পড়াশুনা শেষ করে চাকরি আর তারপর কালের নিয়মে সংসার হয়েছে। ভবানী সিনেমার উল্টোদিকের সেই ছোট রেস্টুরেন্ট বেশ কয়েক বছর হলো বন্ধ। জরাজীর্ন টিনের চার দেওয়ালে আমাদের যে কত সুখস্মৃতি ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে, তার ইয়ত্তা নেই। ফুড কোর্টের চাউমিনে আজ আর সেই সাত টাকার স্বাদ পাইনা কোথাও। বহুবছর হল যোগাযোগ একেবারে স্তব্ধ। ফোন নম্বর জানিনা, তার কারণ পয়লাদার বাড়ির লোকজন অন্যত্র শিফট হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও খুঁজেছি অনেক, পাইনি। একটা পুরোনো মেল্ আইডি ছিল বটে তবে একবার মেল্ করে উত্তর না পাওয়ায় অভিমানে আর চিঠি লিখিনি কখনো। বুকের খাঁজে পয়্লাদার অমোঘ শূন্যতা ঘিরে ধরে মাঝে মাঝেই। রোজের অফিস আর বাড়ির ব্যস্ততার ফাঁকে কখনো কখনো পুরনো বিকেলগুলোর অতীতগুলো পুঁটি মাছের মত বুর্বুরি কেটে ভেসে ওঠে স্মৃতির পুকুরে.............

প্রতিদিনের মত নিয়ম করে আজও সকালে অফিসে এসেছি। অভ্যাসবশে মেলের ইনবক্স ঘেঁটে দিনের শুরু হয় নিয়ত। একঢোঁক জল খেয়ে স্ক্রিনের দিকে চোখ রেখেছি আজও ।
কিন্তু একি !!!! আজ একি দেখছি চোখের সামনে !!!! স্ক্রীনের সাদাটে আলোয় জ্বলজ্বল করছে এ কার নাম ?? অম্লান মজুমদার !!! ঠিক দেখছি তো ? দু চার বার চোখ ঘষে আবার স্ক্রিনের দিকে তাকালাম।বুকের ধুকপুকানি এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে গতি বাড়াচ্ছে। কেমন অবশ মত লাগছে নিজের।চারপাশের লোকজন, দেয়াল, জানলা, কেমন ঘোলাটে হয়ে অফ ফোকাসে মিলিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে...........

পয়্লাদা !!!!!!..........পয়্লাদার মেল.........এত বছর পর !!!........চোখের সামনে সেই পুরনো বিকেলগুলো স্ন্যাপশটের মত সরে যাচ্ছে একের পর এক। কাঁপা কাঁপা হাতে নামের ওপর কার্সরটা নিয়ে গিয়ে ক্লিক করি। মেল্ খুলছে........আমার অতীত বর্তমান নিমেষে একাকার হয়ে যাচ্ছে। একটা অলীক স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি যেন আস্তে আস্তে। বাঁ হাত দিয়ে জলের বোতলটা খুঁজতে থাকি। পাচ্ছি না......................

ছবি : গুগল 
#bengalishortstories #drama #poilaboisakh #bengalinewyear #molat

Thursday, April 7, 2016

সাপ্তাহিকী ২ # টিকিট

অভিনয় করবে শুনে ঠাস করে এক চড় কষিয়েছিলেন হেম। 'সিনেমায় নামবি !! তুই সিনেমায় নামবি?', চিৎকার  করে উঠেছিলেন সারা বাড়ি কাঁপিয়ে। 'নামবি' শব্দটায় বোধহয় মরমে মরে গিয়েছিল সদ্য গ্রাজুয়েট পাশ করা তন্বী প্রত্যাশা। চোয়াল শক্ত করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল বেশ কিছুক্ষণ। তারপর আস্তে আস্তে বলেছিল ..........
'কিন্তু মা, আমার যে স্বপ্ন অভিনয় করার'.....
'আর আমাদের স্বপ্ন ! তার বুঝি কোনো মূল্য নেই ? দাঁতে দাঁত চেপে বলেছিলেন হেম। রান্নাঘরে আগুনের আঁচে চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। সে চোখের দিকে তাকাতে পারেনি প্রত্যাশা। তবু কোনোরকম ভাবে অস্ফুটে বলেছিল, 'একবার আমার কথাটা....................'
'না আআআআআ !!!!!!!!!'......

ছিটকে বেরিয়ে এসেছিল প্রত্যাশা রান্নাঘর থেকে। একছুটে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানার ওপর লুটিয়ে পড়েছিল। কখনো ভাবতে পারেনি মা এভাবে কথা বলবে। জ্ঞান হওয়া অবধি মাকেই সবচেয়ে কাছের বন্ধু মেনে এসেছিল এতদিন। কোনো এক অযান্ত্রিক কারণে ছোটবেলা থেকে মায়ের আঁচলের তলাতেই বেশি ঘুরঘুর করত সে বরাবর। ছোটবেলার সমস্ত কথা, আবদার, বায়না, জেদ এককথায় মিটিয়ে এসেছেন হেম। এমনকি দুদিন আগের সদ্য আলাপ হওয়া যুবকের কথাও প্রত্যাশা অবলীলায় আলোচনা করেছিল মায়ের সাথে। সেখানে নিজের স্বপ্নের খেলাঘর যে হেমের কঠিন সংস্কারের দেওয়ালে আঘাত লেগে চুরচুর হয়ে যাবে এমনটা সে ভাবেনি কখনো।

সন্ধেবেলায় বাবা ফিরতে ড্রয়িং রুমের চৌকাঠের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল প্রত্যাশা। একটা শেষ চেষ্টা। বাবার মুখ দেখেই আন্দাজ করেছিল দুপুরবেলার ঘটনাটা বাবার অজানা নয়। একপলক হেমের দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলেছিল, 'বাবা একটু কথা আছে'। প্রমথেশ জুতো খুলতে খুলতে মুখ না তুলেই বলেছিলেন, 'জানি'। এক মুহূর্ত থমকে প্রত্যাশা বলেছিল, 'আমারও তো ইচ্ছে, অনিচ্ছে, ভালোলাগা, এম্বিশন থাকতে পারে, তার কি কোনো গুরুত্বই নেই তোমাদের কাছে? আর তাছাড়া আমি অন্যায় তো কিছু করছি না। তাহলে কেন ...........'। হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে প্রমথেশ বলেছিলেন, 'প্রত্যাশা নামটা রেখেছিলেন তোমার দাদু। আমাদের বিশ্বাস ছিল তুমি আমাদের স্বপ্নপূরণ করবে। তোমার দাদু চেয়েছিলেন নাতনি পি এইচ ডি করবে, কলেজের প্রফেসর হবে। আজ তোমার দাদু বেঁচে থাকলে কি হত জানি না, তবে চলে গিয়ে এই লজ্জার হাত থেকে বেঁচেছেন এটা হলপ করে বলতে পারি। তাছাড়া সিনেমায় রোল পেতে গেলে কি করতে হয় সে বিষয়ে তোমার ধারণা আছে আশা করি। তুমি যদি সে ব্যাপারে প্রিপেয়ার্ড থাকো তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছি নিজের মেয়ে হিসেবে তোমার ওপর ঘেন্না হচ্ছে আমার'। 

পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল প্রত্যাশার। কখনো ভাবেনি বাবার মুখ থেকে এরকম কদর্য শব্দ বেরিয়ে আসতে পারে। নিজের জামার খুঁটটা খামচে ধরে রেখেছিল সে আর চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা বেরিয়ে এসেছিল অব্যক্ত গ্লানি আর অপমান। তখনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবাড়িতে আর নয়............................................

আজ সকাল থেকেই ঝোড়ো হওয়া বইছে। কোথাও কোনো মেঘের আনাগোনা নেই তবুও। বসন্তের এই শেষের দিনগুলোয় যেখানে গ্রীষ্মের চাবুক পড়ছে সেখানে এই হাওয়াটা মন্দ লাগছে না প্রমথেশের। গত সপ্তাহতেই রিটায়ার্ড হয়েছেন। এখন প্রতিদিনই ছুটির দিন। বছর ন' দশেক আগে প্রত্যাশার বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি আজও। কানাঘুষয় শুনেছিলেন মেয়ে মুম্বইতে অভিনয় করছে। প্রথম দিকটায় খোঁজাখুঁজি করলেও পরে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। ইদানীং বারান্দায় আয়েশ করে হেমের সাথে চা খাওয়াটা নতুন একটা অভ্যেসে তৈরী হয়েছে। বাংলা কাগজটা শেষ করে ইংরেজিটার দিকে হাত বাড়াতেই ডোরবেল বেজে উঠলো। সেদিকে তাকাতেই হেম বললেন, 'আমি দেখছি'। দরজা খুলতে একটি ছেলে একটা চিঠির খাম ধরিয়ে দিল। 'ক্যুরিয়র আছে, প্রমথেশ বসু ও হেমলতা বসুর নামে'। সই করে দরজা বন্ধ করলেন হেম।

'কার চিঠি '? প্রমথেশ বারান্দা থেকে জিগ্গেস করলেন।
'জানিনা, দিল্লি থেকে এসেছে'।
চিঠিটা খুলেই স্তব্ধ হয়ে গেলেন হেম। ধপ করে বসে পড়লেন চেয়ারে। প্রমথেশ উঠে এসে জিগ্গেস করলেন, 'কি হল, খারাপ কিছু'? কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠির খামটা এগিয়ে দিলেন প্রমথেশের দিকে। খামের ভেতর থেকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড সেরেমনির দুটো ইনভিটেশন কার্ড বের করলেন প্রমথেশ....... সঙ্গে ফ্লাইটের দুটো টিকিট। চিঠিতে লেখা শুধু চারটে শব্দ, 'পারলে এসো.....ইতি প্রত্যাশা'।.................

স্তম্ভিত হয়ে বারান্দায় চলে এলেন প্রমথেশ। দক্ষিনের আকাশে মেঘ করে এসেছে।
আজ বোধহয় বৃষ্টি হবে.........
ছবি : গুগল 
#bengalishortstories #drama #successstory

Saturday, April 2, 2016

সাপ্তাহিকী ১ # ফেরার

এদিকের রাস্তাটা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে এসেছে এখন। পনেরো কুড়ি গজ দূরের স্ট্রিট ল্যাম্পের আলো এসে ঢুকেছে জানলার পর্দার পাশ দিয়ে। তাই দিয়েই মোটামুটি ঘরের ভেতরটা দেখা যাচ্ছে। পাশ ফিরে টেবিল ক্লকটার দিকে তাকালেন সুকুমার। পৌনে দুটো। গলাটা শুকিয়ে এসেছে। বিছানার পাশে রাখা বোতল থেকে দু ঢোঁক জল খেয়ে পায়ে পায়ে জানলার সামনে এসে দাঁড়ালেন। সিমেন্ট কংক্রিটের ধুলো ওড়া গন্ধ এসে লাগলো নাকে। রায়দের বাড়ির রকটার সামনে তিনটে কুকুর একটা রুটির টুকরো নিয়ে সমানে চেঁচাচ্ছে। পাশের বাড়িতে নিউজ চ্যানেল চলছে বোধহয়। ব্রেকিং নিউজ কানে আসে সুকুমারের। চোখের পাতা ভারী হয়ে ওঠে অজান্তেই। অজানা আশঙ্কায় ঢোঁক গেলেন সুকুমার। অন্যসময় পাড়াটা নিঃঝুম থাকে, আজ আশপাশ থেকে গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কোথা থেকে চারটে ভিখিরি এসে জড়ো হয়েছে। লোহার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন। দেখা যাচ্ছে না। ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। কিন্তু সুকুমারের চোখে ঘুম নেই আজ। বয়েস হওয়ার দরুন ঘুমের ওষুধ খেতে হয় বটে, তবে রোজ নয়।

বয়েস !!......তা অনেকটাই হলো বটে। গত মাঘে চুয়াত্তর পেরিয়ে পঁচাত্তরে পড়লেন। এর মধ্যেই দু বার ছানি অপারেশন হয়ে গেছে। স্মৃতির সাথে সাথে দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে আসছিল, ছেলে জোর করে করিয়ে দিল।

সুকুমারের একমাত্র ছেলে, পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, মস্ত বড় কোম্পানিতে চাকরি। বেশির ভাগ সময়ই কলকাতার বাইরে কাটাতে হয়। বড় কোম্পানি, বিস্তীর্ণ কাজ। তাতে অবশ্য সমস্যা হয় না সুকুমারের। অলোকা মারা যাবার পর চৌধুরী বাড়ির দোতলার ঘরে একা থাকাটা একরকম অভ্যেসই হয়ে গেছে। জীবনের কাছে আজ আর কোন অভিযোগ অনুযোগ নেই, শুধু ছেলেটার একবার বিয়ে হয়ে গেলেই নিশ্চিন্তি। একমাত্র ছেলেকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসেন সুকুমার। বুকে আগলে মানুষ করেছেন একা হাতে। প্রাইমারি স্কুলের মাঝারি বেতন থেকে জমিয়ে জমিয়ে ছেলের উচ্চ শিক্ষার জন্য সঞ্চয় করেছেন। তবেনা আজ ছেলে নামী কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার। গর্বে বুক চওড়া হয়ে গিয়েছিল যখন রাজকুমার এর নামটা জয়েন্ট এন্ট্রান্স এর লিস্টে দেখেছিলেন।

ছেলের কথা ভাবলেই বুকের ভেতরটা এখন মোচড় দিয়ে উঠছে। কাল থেকে কোনো পাত্তা নেই। দুপুরবেলা ফোন করে সেই যে বলল দিল্লী যাচ্ছি তারপর থেকে প্রায় সতেরোবার ফোন করেছেন, প্রত্যেকবারই সুইচ্ড অফ বলছে। কি হলো, কোথায় গেল, ঠিকঠাক পৌছল কিনা, কিছুই বুঝতে পারছেন না। নাহ, এমন তো কোনো বার হয়নি। তাহলে কি কোনো বিপদ হলো ? নাকি নিউজ চ্যানেলগুলো যা বলছে সত্যি ? বিশ্বাস করতে মন চায় না। ধীরগতিতে দোতলার বারান্দায় এসে পশ্চিম দিকে তাকালেন সুকুমার। ভেঙে পড়া পোস্তা ব্রিজের বিধ্বস্ত কঙ্কালটা এখান থেকে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। প্রায় সবকটা নিউজ চ্যানেলেই ছেলের কোম্পানির নামটা বলছে বারে বারে। গলা বুজে আসছে, স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোটা এসে পড়েছে মুখের ওপর......কঙ্কালের মতই বিবর্ণ ফ্যাকাশে লাগছে এখন। 

ছবি : গুগল 
#bengalishortstories #drama