Tuesday, March 28, 2017
দহন
Labels:bengali short stories articles poems molat
কবিতা
Tuesday, March 21, 2017
আজ কিন্তু বিশ্ব কবিতা দিবস - সুবোধ সরকার
কবিতা আবার কোন কাজে লাগে? কবিতার কোনও সেনসেক্স হয় না, কবিতার কোনও বাজার নেই। কবিতা কি এক ইঞ্চিও উপকার করতে পেরেছে মানুষের? জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ— এই তিনটি সময়ে তিনটি ল্যাটিন শ্লোক আর তিনটি সংস্কৃত পদ্য প্রয়োজন পড়ে বটে, তবে তার জন্য একটা বিশ্ব-কবিতা দিবস? ‘ইউনেস্কো’ যখন প্রস্তাব দিয়েছিল, তখন এ ভাবেই প্রশ্ন উঠে এসেছিল কবিতার বিরুদ্ধে। আড়াই হাজার বছর আগে আরও মারাত্মক কথা উঠেছিল, কবিদের নির্বাসন দেওয়া হোক। যে প্রাচীন গ্রিসে কথাটা উঠেছিল, সেই গ্রিসই ছিল ইউরোপীয় কবিতার তলপেট।
একটা পেসমেকার যেমন কাজে লাগে, একটা হুইলচেয়ার যেমন কাজে লাগে, কবিতা কি তেমন কোনও কাজে লাগে? কবিতা লিখে তো কবিরা কিছুই পান না। টাকা নেই, পয়সা নেই, মান নেই, মর্যাদা নেই। এক ভাঁড় চা আর গলায় একটা ন্যাতা ছাড়া কবিদের কপালে কিছুই জোটে না। কবি-খ্যাতি? সে-ও তো আজ আছে, কাল নেই। তা হলে পৃথিবী জুড়ে পাঁচ শতাধিক ভাষায় কেন প্রতি দিন লেখা হয়ে চলেছে কবিতা? কবিতাই কি মনুষ্য প্রজাতির আদিমতম ও আধুনিকতম শিল্প যা মুদ্রাকে, টাকাকে, ক্যাপিটালকে তাচ্ছিল্য করে এল নিঃশব্দের তর্জনি দিয়ে?
আলাবামায় পিটার বললেন— গত দশ বছর আগে আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম কালো মানুষের সুবিচার চেয়ে। তার পিছনে ছিল একটি কবিতা, মায়া এঞ্জেলু-র ‘হোয়াই দ্য কেজেড বার্ড সিঙ্গস।’ সান্তিয়াগোর রাস্তায় যেমন এক দিন পাবলো নেরুদার কবিতা শুনে মানুষ রাস্তায় নেমেছিল, ধর্মতলার মোড়ে যেমন সুভাষ মুখোপাধ্যায় শুনে পদাতিক হয়েছিল, তেমনই ‘বিদ্রোহী’ শুনে রক্ত গরম হয়নি এ রকম কোনও বাঙালি ছিল না পরাধীন ভারতে। চারশো বছর আগে শূদ্র কবি তুকারামকে খুন করেছিল মরাঠি ব্রাহ্মণেরা। তাঁর কবিতা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পাণ্ডুলিপি জলে ফেলে দিলেই কি কবিতা ডুবে যায়? সারা ভারতে যে গরিব মানুষ, দলিত মানুষ উঠে এসেছেন, তার পিছনে কি তুকারামের কবিতা নেই? হার্লেম রেনেসাঁসের সময় কি ল্যাংস্টন হিউজের কবিতা আগুন দেয়নি?
![]() |
| ছবি : আনন্দবাজার পত্রিকা |
জীবনানন্দ দাশ (ছবিতে) লিখেছিলেন ‘পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন।’ তখন পৃথিবী জুড়ে দার্শনিক থিয়োডর অ্যাডোর্নোর কথা হেডলাইন হয়ে উঠে এসেছিল। ‘আউশভিৎস-এর পর আর কবিতা লেখা সম্ভব নয়।’ গত ৬৮ বছরে কথাটি প্রায় সমস্ত কবি উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু কবিতা লেখা আরও পাঁচগুণ বেড়েছে। এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসুখের নাম ‘জেনোফোবিয়া’। তুমি কি আমার মতো দেখতে? তুমি কি আমার মতো কথা বলো? তুমি কি আমার মতো করে ধর্মাচরণ করো? উত্তর ‘না’ হলে আমি তোমাকে ঘৃণা করব। এই অসুখ আটলান্টিক টপকে ইউরোপ হয়ে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বা উলটোটা।
মাহমুদ দারউইশ প্যালেস্টাইনের কবি। তিনি ইজরায়েলে ঢুকতে পারতেন না। পৃথিবীর সবচেয়ে বিষণ্ণ হাইফেনের নাম প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল। তিনি সেই হাইফেন মাথা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাঁড়াতে চেয়ে লিখলেন সেই কবিতা, ‘আমি এক জন আরব, আমার কার্ড নম্বর ৫০০০০, আমার চুল চারকোল, চোখ ব্রাউন, আমার আটটা ছেলেমেয়ে।’ তারপরই লিখলেন, ‘অলিভ গাছ যদি জানত তাকে কারা বড় করেছে, তা হলে অলিভ থেকে তেল বেরত না। বেরিয়ে আসত চোখের জল।’ ইজরায়েল অধিকৃত প্যালেস্টাইনের লেখক ওডেহর কাছে শুনেছি, এই কবিতা কত মানুষকে কথা বলতে শিখিয়েছে। আমরা তো বেশির ভাগ সময়ই কথা বলতে পারিনি। কবিতা তা হলে ভয়কে অতিক্রম করতে পারে? আতঙ্কের কাঁধে বসে কৌতুক করতে পারে ‘ইউএসএ/ হোয়্যার/ দ্য লিবার্টি ইজ আ স্ট্যাচু।’
বেঙ্গালুরু থেকে মাত্র একশো কিলোমিটার দূরে এক জন লেখককে বাড়ি ঢুকে গুলি করে গেল ওরা। বিচার হল কই? হল না বলেই তো আবার সেই কর্নাটকে অসহিষ্ণুতা রাস্তায় নেমে এল গত সপ্তাহে। লেখক যোগেশ নাকি ‘ভগবান গণেশ’কে খারাপ ভাবে দেখিয়েছেন, তাই তাঁর মুখে কালি দিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে চলে গেল সাত জন বাইক আরোহী।
কবিতা ফ্যাসিজমের সামনে উঠে দাঁড়িয়েছে বার বার। কিন্তু কবিতার ক’টা মাথা? দারউইশ বলছেন, কবিরা ভেবেছিলেন, কবিতা লিখে সমাজ পালটে দেবেন। দূর বোকা ছেলের দল। কবিতা লিখে কাউকে পালটানো যায় না। শুধু চোখের কোনায় একটা অশ্রুবিন্দুর অর্ধেক বেরিয়ে আসে। আর অর্ধেক থেকে যায়— দুই অর্ধেক নিয়ে মানবজাতির কবিতা। পাঁচ হাজার বছরের দুর্যোগ তাকে বিনাশ করতে পারেনি, জেনোফোবিয়া থেকে যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়, তখনও এক জন উইলফ্রেড আওয়েন বুকপকেটে ‘গীতাঞ্জলি’ নিয়ে যুদ্ধবিমানে উঠবেন।
সুন্দরবনের কালো মেয়েটি, কালচিনি চা বাগানের রোগা ছেলেটি যদি একটা কবিতা পড়ে উঠে দাঁড়ায়, তা হলেই কবিতা আরও পাঁচ হাজার বছর বাঁচবে। এখনও একটা কবিতা পেসমেকার, এখনও একটা কবিতা হুইলচেয়ার, এখনও একটা কবিতা আগ্নেয়গিরির ওপর বসে থাকা প্রজাপতি, এখনও একটা কবিতা হলুদ লাগা মায়ের আঁচল।
#anandabazarpatrika #article #worldpoetryday #bengaliarticles #jibananandadas #subodhsarkar #bengaliwriteups
Labels:bengali short stories articles poems molat
প্রবন্ধ
Saturday, March 18, 2017
সূর্যতপা তুমি
কত শতাব্দী ধরে আকাশ মিশে গিয়েছে জলে
মেঘ জড়ো করে সোঁদা মাটির ঘ্রাণ নেবে বলে
মরুপ্রান্তর থেকে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শিখরে
আরব সাগর হতে সুগভীর পালামৌয়ের জঙ্গলে......
সূর্যতপা দেখেছি তোমায়, একবিংশ শতকের নারী
সূর্যতপা তোমায়, অল্প হলেও কি ভালোবাসতে পারি ?
তমসাবৃত, ছিন্নমুল আমি, সাধারন একজন
অট্টালিকা আকাশকুসুম, স্বল্প আয়, অল্প আয়োজন
আমার উঠোন ঘেরা ঘাসের ওপর বসত করে সুখ
পুকুরডোবা সূর্যালোকে দেখেছি তোমার আবিররাঙা মুখ
সূর্যতপা তুমি নভস্পর্শী, শত নক্ষত্রের সারি..........
সূর্যতপা তোমায়, অণুমাত্র কি ভালোবাসতে পারি ?
#bengalipoetry #bengalipoems #love #romance
মেঘ জড়ো করে সোঁদা মাটির ঘ্রাণ নেবে বলে
মরুপ্রান্তর থেকে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শিখরে
আরব সাগর হতে সুগভীর পালামৌয়ের জঙ্গলে......
সূর্যতপা দেখেছি তোমায়, একবিংশ শতকের নারী
সূর্যতপা তোমায়, অল্প হলেও কি ভালোবাসতে পারি ?
তমসাবৃত, ছিন্নমুল আমি, সাধারন একজন
অট্টালিকা আকাশকুসুম, স্বল্প আয়, অল্প আয়োজন
আমার উঠোন ঘেরা ঘাসের ওপর বসত করে সুখ
পুকুরডোবা সূর্যালোকে দেখেছি তোমার আবিররাঙা মুখ
সূর্যতপা তুমি নভস্পর্শী, শত নক্ষত্রের সারি..........
সূর্যতপা তোমায়, অণুমাত্র কি ভালোবাসতে পারি ?
![]() |
| ছবি : গুগল |
Labels:bengali short stories articles poems molat
কবিতা
Thursday, March 16, 2017
সাপ্তাহিকী ২৫ # সুলভ ইন্টারন্যাশনাল
রমাপদ ভীষণ খাইতে ভালোবাসে। উৎকৃষ্ট মানের সুস্বাদু রান্না হইলে তাহার আর কিছুই লাগে না। খাবার সময় থালার পাশে চার পাঁচটি বাটি যদি না থাকে তাহা হইলে তাহার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। সেদিন তাহার মনে হয় সে যেন আধপেটা খাইয়া রহিয়াছে। উত্তরোত্তর ক্ষুধা পাইতে থাকে তখন। তাহার সাধের ভুঁড়িটি গ্যাসহীন বেলুনের ন্যায় চুপসিয়া যায় যেন। এহেন রমাপদ ভদ্রেশ্বরে শ্বশুরবাড়ি গিয়াছিলো। পরীক্ষার ছুটিতে তাহার স্ত্রী ও কন্যাকে যত্নসহকারে গ্যারেজ করিয়া চব্যচষ্য উদরস্থ করিয়া সে ফিরিয়া আসিতেছিল। কিয়দকাল একাকী থাকিবার প্রলোভনে রমাপদ বেশ ফুরফুরে মেজাজে ট্রেনে চাপিয়া বসিল।
ট্রেন ভদ্রেশ্বর স্টেশন ছাড়িয়া হাওড়া অভিমুখে যাত্রা আরম্ভ করিল। দুপুরের দিকে ভিড় কম থাকার দরুন রমাপদ খুব সহজেই জানলার সিট্ পাইয়া আরাম করিয়া পা মেলিয়া দিল। মনে মনে ভাবিল, প্রায় পৌনে একঘন্টা মতো লাগিবে পৌঁছাইতে, তাই দু চোখের পাতা এক করিয়া কিঞ্চিৎ বিশ্রাম করিতে পারিলে মন্দ হয় না। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। বসন্তের মিঠে হাওয়ায় ও ট্রেনের যুগপৎ দুলুনিতে সবে নিদ্রার যোগ আসিতেছিল এমন সময় ভয়ঙ্কর রূপে রমাপদর পেট কামড়াইয়া উঠিল।
ট্রেন ভদ্রেশ্বর স্টেশন ছাড়িয়া হাওড়া অভিমুখে যাত্রা আরম্ভ করিল। দুপুরের দিকে ভিড় কম থাকার দরুন রমাপদ খুব সহজেই জানলার সিট্ পাইয়া আরাম করিয়া পা মেলিয়া দিল। মনে মনে ভাবিল, প্রায় পৌনে একঘন্টা মতো লাগিবে পৌঁছাইতে, তাই দু চোখের পাতা এক করিয়া কিঞ্চিৎ বিশ্রাম করিতে পারিলে মন্দ হয় না। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। বসন্তের মিঠে হাওয়ায় ও ট্রেনের যুগপৎ দুলুনিতে সবে নিদ্রার যোগ আসিতেছিল এমন সময় ভয়ঙ্কর রূপে রমাপদর পেট কামড়াইয়া উঠিল।
সে ধড়মড় করিয়া সোজা হইয়া বসিল। এমন তো হইবার কথা নহে। তাহা হইলে ব্যাপারখানা কি ? বলিতে না বলিতেই পুনরায় বিকট এক কামড়। নিমেষে রমাপদ ঘামিয়ে উঠিল। এ কামড় রমাপদ বিলক্ষণ চেনে। এ কোনো সাধারণ উদর পীড়া নহে। অম্বল, গ্যাস, চোঁয়া ঢেঁকুর, বুকজ্বালা কোনো প্রজাতির ব্যথার সহিত ইহার কোনোরূপ কোনোপ্রকারের মিল নাই। সকালবেলার এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে অনুরূপ ব্যাথা অনুভূত হয়। এবং সে ব্যাথা হইলেই রমাপদ বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ করিতে পারে না। উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়াইয়া, আট মিটারের দূরত্ব এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে অতিক্রম করিয়া এক ঝটকায় বাথরুম বন্ধ করিয়া সে কমোডের শূন্যস্থান পূরণে তৎপর হইয়া ওঠে।
তাহার পর সমস্ত ব্যাথা খালি হইলে পর সে প্রসন্নচিত্তে বাহির হইয়া আসে। কিন্তু এখন এই চলমান ট্রেনে সে কি করিবে ? কোথায় যাইবে ? কাহাকে বলিবে ? এই সমস্ত চিন্তা করিয়া ঘামিয়া অস্থির হইয়া উঠিল। তাহার উপর লোকাল ট্রেন, টয়লেটের কোনোরকম বন্দোবস্ত নাই, সুতরাং রমাপদ যে নিশ্চিন্তে কাজ হাসিল করিয়া হালকা হইয়া চলিয়া আসিবে তেমন কোনো সম্ভাবনাও নাই। সেইটে চিন্তা করিয়া রমাপদ আরও মুষড়িয়া পড়িল। একবার ভাবিল সামনের স্টেশনে নামিয়া টয়লেট খুঁজিয়া লইবে। পরক্ষনেই ভাবিল একবার নামিয়ে পড়িলে পরের ট্রেন আসিতে প্রায় একঘন্টা লাগিবে, হাওড়া পৌঁছাইতে দেরি হইবে বিস্তর। তাহার চেয়ে কোনোরূপ পেট চাপিয়া ধরে পরপর স্টেশনগুলি পার করিতে পারিলে একেবারে হাওড়ায় গিয়াই কাজ সারিয়া লইবে।
সেইমতো কষ্ট করিয়া রমাপদ কিছু স্টেশন পার করিল। উপায়ন্তর না দেখিয়া অনিচ্ছাকৃতভাবে বার দুয়েক বায়ু নির্গমনও করিল। ছুটন্ত ট্রেনে ঝড়ের বেগে সে বায়ু ছড়াইয়া পড়িল দিগ্বিদিগ। সহযাত্রীরা চমকাইয়া উঠিয়া যে যার মতো রুমাল চাপিয়া ধরিল নাকে। রমাপদ সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করিল না। দাঁতে দাঁত চাপিয়া যুদ্ধ জয়ের আশায় বসিয়া রহিল। কিন্তু প্রকৃতির ডাক বড় কঠিন ডাক। যতই বলিষ্ঠ মানুষ হোক না কেন সে নিশির ডাক উপেক্ষা করিবে এই ধরাধামে এরূপ দুঃসাহস দেখাইবার মতো মানুষ খুঁজিয়া পাওয়া দুস্কর। অতএব রমাপদর মতো সাধারণও নিজেকে বেশিক্ষণ ধরিয়া রাখিতে পারিল না। কোন্নগর আসিবার পূর্বেই সে চক্ষে সর্ষেফুল দেখিতে লাগিল।
তাহার পর সমস্ত ব্যাথা খালি হইলে পর সে প্রসন্নচিত্তে বাহির হইয়া আসে। কিন্তু এখন এই চলমান ট্রেনে সে কি করিবে ? কোথায় যাইবে ? কাহাকে বলিবে ? এই সমস্ত চিন্তা করিয়া ঘামিয়া অস্থির হইয়া উঠিল। তাহার উপর লোকাল ট্রেন, টয়লেটের কোনোরকম বন্দোবস্ত নাই, সুতরাং রমাপদ যে নিশ্চিন্তে কাজ হাসিল করিয়া হালকা হইয়া চলিয়া আসিবে তেমন কোনো সম্ভাবনাও নাই। সেইটে চিন্তা করিয়া রমাপদ আরও মুষড়িয়া পড়িল। একবার ভাবিল সামনের স্টেশনে নামিয়া টয়লেট খুঁজিয়া লইবে। পরক্ষনেই ভাবিল একবার নামিয়ে পড়িলে পরের ট্রেন আসিতে প্রায় একঘন্টা লাগিবে, হাওড়া পৌঁছাইতে দেরি হইবে বিস্তর। তাহার চেয়ে কোনোরূপ পেট চাপিয়া ধরে পরপর স্টেশনগুলি পার করিতে পারিলে একেবারে হাওড়ায় গিয়াই কাজ সারিয়া লইবে।
সেইমতো কষ্ট করিয়া রমাপদ কিছু স্টেশন পার করিল। উপায়ন্তর না দেখিয়া অনিচ্ছাকৃতভাবে বার দুয়েক বায়ু নির্গমনও করিল। ছুটন্ত ট্রেনে ঝড়ের বেগে সে বায়ু ছড়াইয়া পড়িল দিগ্বিদিগ। সহযাত্রীরা চমকাইয়া উঠিয়া যে যার মতো রুমাল চাপিয়া ধরিল নাকে। রমাপদ সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করিল না। দাঁতে দাঁত চাপিয়া যুদ্ধ জয়ের আশায় বসিয়া রহিল। কিন্তু প্রকৃতির ডাক বড় কঠিন ডাক। যতই বলিষ্ঠ মানুষ হোক না কেন সে নিশির ডাক উপেক্ষা করিবে এই ধরাধামে এরূপ দুঃসাহস দেখাইবার মতো মানুষ খুঁজিয়া পাওয়া দুস্কর। অতএব রমাপদর মতো সাধারণও নিজেকে বেশিক্ষণ ধরিয়া রাখিতে পারিল না। কোন্নগর আসিবার পূর্বেই সে চক্ষে সর্ষেফুল দেখিতে লাগিল।
স্টেশন আসিবামাত্র সে বিদ্যুৎবেগে ট্রেন থেকে নামিয়া উর্দ্ধশ্বাসে ধাবমান হইল সম্মুখের দিকে। এক জিআরপিএফকে দেখিতে পাইয়া তাহাকে কাতর হইয়া বলিল, 'দাদা, স্টেশনের টয়লেটটা কোনদিকে বলুন, জলদি...... '। জিআরপিএফ রমাপদর দিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি হানিয়া গম্ভীরস্বরে কহিল, 'স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাঁ দিকে'। রমাপদ বেশি জোরে দৌড়াইতে পারিল না, তাও যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি হাঁটিয়া, সিঁড়ি টপকাইয়া শৌচালয়ের সম্মুখে উপস্থিত হইল। কপাল খারাপ থাকিলে মানুষের যা যা ঘটিতে পারে রমাপদর ক্ষেত্রে তখন ঠিক তাহাই ঘটিল।
শৌচালয়ের গেটে একটি বড় তালা ঝুলিতেছে। তাহার মুখ শুকাইয়া পাংশু হইয়া গেল। এই করুণ অভিজ্ঞতা রমাপদর জীবনে খুব বেশি ঘটে নাই। সুতরাং তালা দেখিয়া তাহার একেবারে মরিয়া যাইতে ইচ্ছা করিল। কারণ পেটের ভিতর ততক্ষণে উদ্দাম তাণ্ডবনৃত্য শুরু হইয়া গেছে। সুনামীর ঢেউয়ের ন্যায় সে মরণ বেগ তাহার উদরের ভিতর একের পর এক আছড়াইয়া পড়িতে লাগিল। সামান্য অসাবধানে এক বিরাট গোলযোগ ঘটিবার সম্ভাবনা প্রবল হইয়া উঠিল। আশেপাশে খুঁজিয়াও যখন শৌচালয়ের কাহাকেও সে দেখিতে পাইল না তখন সে অনন্যোপায় হইয়া এক রিক্সাওয়ালাকে পাকড়াও করিল।
রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞাসা করিল, 'বাবু কোথায় যাবেন' ? রমাপদ মুখ দিয়া কোনো কথা কহিতে পারিল না, শুধু করুণভাবে ইশারায় শৌচালয়ের দিকে আঙ্গুল তুলিয়া দেখাইল। রিক্সাওয়ালা সেদিকে তাকাইয়া কহিল, 'কি মুস্কিল, তা ওখানে যেতে আমাকে টানছেন কেন ? এর জন্য আবার রিকশা করে নাকি কেউ' ? রিক্সাওয়ালার তাচ্ছিল্যে রমাপদ ভীষণ বিরক্ত হইয়া কিছু একটা বলিতে যাইতেছিলো। পরক্ষনেই পেট চাপিয়া ধরিয়া অস্ফুটে কহিল, 'ওখানে লোক কই, কখন খুলবে' ? রিক্সাওয়ালা সে বিপদভঞ্জন ঘরের দিকে ভালো করিয়া তাকাইয়া ফিক করিয়া হাসিয়া ফেলিল, বলিল, 'ওহ, বন্ধ বুঝি ? ওর লোক তো খেতে গেছে, ঘন্টাখানেক বাদে আসবে'।
রমাপদর মাথায় যেন বজ্রাঘাত হইল। প্রায় মাটিতে বসিয়া পড়িবার উপক্রম হইল, মিহিস্বরে কহিল, 'তাহলে' ? রিক্সাওয়ালা বলিল, 'আপনি এক কাজ করুন, প্ল্যাটফর্মে চলে যান, স্টেশনকর্মীদের একটা বাথরুম আছে। জিজ্ঞাসা করুন, বলে দেবে'। রমাপদ সেকথা শুনিয়া প্রায় হামাগুড়ি দিয়া প্ল্যাটফর্মে আসিয়া উপস্থিত হইল। সটান ঢুকিয়া পড়িল স্টেশনমাস্টারের রুমে। সম্মুখে এক ভদ্রলোককে দেখিতে পাইয়া বিকৃত মুখে কোনোরকমে কয়েকটা শব্দ বাহির করিল, 'দাদা, আপনাদের টয়লেটটা.........'
শৌচালয়ের গেটে একটি বড় তালা ঝুলিতেছে। তাহার মুখ শুকাইয়া পাংশু হইয়া গেল। এই করুণ অভিজ্ঞতা রমাপদর জীবনে খুব বেশি ঘটে নাই। সুতরাং তালা দেখিয়া তাহার একেবারে মরিয়া যাইতে ইচ্ছা করিল। কারণ পেটের ভিতর ততক্ষণে উদ্দাম তাণ্ডবনৃত্য শুরু হইয়া গেছে। সুনামীর ঢেউয়ের ন্যায় সে মরণ বেগ তাহার উদরের ভিতর একের পর এক আছড়াইয়া পড়িতে লাগিল। সামান্য অসাবধানে এক বিরাট গোলযোগ ঘটিবার সম্ভাবনা প্রবল হইয়া উঠিল। আশেপাশে খুঁজিয়াও যখন শৌচালয়ের কাহাকেও সে দেখিতে পাইল না তখন সে অনন্যোপায় হইয়া এক রিক্সাওয়ালাকে পাকড়াও করিল।
রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞাসা করিল, 'বাবু কোথায় যাবেন' ? রমাপদ মুখ দিয়া কোনো কথা কহিতে পারিল না, শুধু করুণভাবে ইশারায় শৌচালয়ের দিকে আঙ্গুল তুলিয়া দেখাইল। রিক্সাওয়ালা সেদিকে তাকাইয়া কহিল, 'কি মুস্কিল, তা ওখানে যেতে আমাকে টানছেন কেন ? এর জন্য আবার রিকশা করে নাকি কেউ' ? রিক্সাওয়ালার তাচ্ছিল্যে রমাপদ ভীষণ বিরক্ত হইয়া কিছু একটা বলিতে যাইতেছিলো। পরক্ষনেই পেট চাপিয়া ধরিয়া অস্ফুটে কহিল, 'ওখানে লোক কই, কখন খুলবে' ? রিক্সাওয়ালা সে বিপদভঞ্জন ঘরের দিকে ভালো করিয়া তাকাইয়া ফিক করিয়া হাসিয়া ফেলিল, বলিল, 'ওহ, বন্ধ বুঝি ? ওর লোক তো খেতে গেছে, ঘন্টাখানেক বাদে আসবে'।
রমাপদর মাথায় যেন বজ্রাঘাত হইল। প্রায় মাটিতে বসিয়া পড়িবার উপক্রম হইল, মিহিস্বরে কহিল, 'তাহলে' ? রিক্সাওয়ালা বলিল, 'আপনি এক কাজ করুন, প্ল্যাটফর্মে চলে যান, স্টেশনকর্মীদের একটা বাথরুম আছে। জিজ্ঞাসা করুন, বলে দেবে'। রমাপদ সেকথা শুনিয়া প্রায় হামাগুড়ি দিয়া প্ল্যাটফর্মে আসিয়া উপস্থিত হইল। সটান ঢুকিয়া পড়িল স্টেশনমাস্টারের রুমে। সম্মুখে এক ভদ্রলোককে দেখিতে পাইয়া বিকৃত মুখে কোনোরকমে কয়েকটা শব্দ বাহির করিল, 'দাদা, আপনাদের টয়লেটটা.........'
ভদ্রলোক ভুরু কুঁচকাইয়া চশমার ভিতর হইতে কহিলেন, 'টয়লেটটা কি' ? রমাপদ কোনোপ্রকার একপায়ের ওপর আরেক পা ভর দিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, 'একবার যাব.......'।
ভদ্রলোক তৎক্ষণাৎ মাছি তাড়াইবার মতো করিয়া হাত নাড়িয়া কহিলেন, 'না নাঃ, ও বাইরের লোকের জন্য নয়, আর তাছাড়া যাত্রীদের জন্য তো বাইরে শৌচালয় আছে, সেখানে যান'। রমাপদ বলিল, 'আজ্ঞে, সেইটে বন্ধ, এক্ষুনি ঘুরে এসেছি, দয়া করে যদি আপনাদের টয়লেটটা একবার.........'।
সেই ভদ্রলোক এবার মুখ না তুলিয়াই বলিলেন, 'বন্ধ থাকলে একটু ওয়েট করুন, খুললে যাবেন, আমাদেরটা ব্যবহার করা যাবে না, স্যরি'। একথায় রমাপদ একেবারে হাঁউমাঁউ করিয়া কাঁদিয়া পড়িল। সামনে আসিয়া ভদ্রলোকের হাত জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, 'স্যার, প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করুন, সেই শৌচালয় ঘন্টাখানেক বাদে খুলবে, কিন্তু ততক্ষণে আমার বাঁধের লকগেট খুলে গিয়ে সমস্ত কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে একেবারে তছনছ করে চলে যাবে। আপনি কি তাই চান' ? ভদ্রলোক তখনও না না করিতে লাগিলেন, রমাপদর কাকুতিমিনতি কর্ণপাত পর্যন্ত করিলেন না।
এইবার রমাপদ সম্পূর্ণ বেসামাল হইয়া গেল। সে আর ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে পারিল না, সমস্ত সাহস সঞ্চয় করিয়া, অকুতোভয় হইয়া কহিল, 'তবে আমি এই চেয়ারের ওপর বসলুম উবু হয়ে, আমি এইখানেই করব, আপনার যা করার করে নিন'। বলিয়াই সে অনতিদূরে একটি চেয়ারের নিকট নিজের প্যান্টের বেল্ট খুলিতে লাগিল। ভদ্রলোক হাঁ হাঁ করিয়া উঠিলেন, ভীষণ ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া বলিলেন, 'একি করছেন, একি করছেন, এটা তো অফিস ! আরে ওই চেয়ারটা যে বড়বাবুর......'। রমাপদ চোখ মুখ কুঁচকাইয়া কহিল, 'আমার আর কিচ্ছু করার নেই স্যার, বড়বাবুর জন্য নতুন চেয়ার আনিয়ে নেবেন'।
ভদ্রলোক তৎক্ষণাৎ মাছি তাড়াইবার মতো করিয়া হাত নাড়িয়া কহিলেন, 'না নাঃ, ও বাইরের লোকের জন্য নয়, আর তাছাড়া যাত্রীদের জন্য তো বাইরে শৌচালয় আছে, সেখানে যান'। রমাপদ বলিল, 'আজ্ঞে, সেইটে বন্ধ, এক্ষুনি ঘুরে এসেছি, দয়া করে যদি আপনাদের টয়লেটটা একবার.........'।
সেই ভদ্রলোক এবার মুখ না তুলিয়াই বলিলেন, 'বন্ধ থাকলে একটু ওয়েট করুন, খুললে যাবেন, আমাদেরটা ব্যবহার করা যাবে না, স্যরি'। একথায় রমাপদ একেবারে হাঁউমাঁউ করিয়া কাঁদিয়া পড়িল। সামনে আসিয়া ভদ্রলোকের হাত জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, 'স্যার, প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করুন, সেই শৌচালয় ঘন্টাখানেক বাদে খুলবে, কিন্তু ততক্ষণে আমার বাঁধের লকগেট খুলে গিয়ে সমস্ত কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে একেবারে তছনছ করে চলে যাবে। আপনি কি তাই চান' ? ভদ্রলোক তখনও না না করিতে লাগিলেন, রমাপদর কাকুতিমিনতি কর্ণপাত পর্যন্ত করিলেন না।
এইবার রমাপদ সম্পূর্ণ বেসামাল হইয়া গেল। সে আর ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে পারিল না, সমস্ত সাহস সঞ্চয় করিয়া, অকুতোভয় হইয়া কহিল, 'তবে আমি এই চেয়ারের ওপর বসলুম উবু হয়ে, আমি এইখানেই করব, আপনার যা করার করে নিন'। বলিয়াই সে অনতিদূরে একটি চেয়ারের নিকট নিজের প্যান্টের বেল্ট খুলিতে লাগিল। ভদ্রলোক হাঁ হাঁ করিয়া উঠিলেন, ভীষণ ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া বলিলেন, 'একি করছেন, একি করছেন, এটা তো অফিস ! আরে ওই চেয়ারটা যে বড়বাবুর......'। রমাপদ চোখ মুখ কুঁচকাইয়া কহিল, 'আমার আর কিচ্ছু করার নেই স্যার, বড়বাবুর জন্য নতুন চেয়ার আনিয়ে নেবেন'।
ভদ্রলোক ত্বড়িৎগতিতে ড্রয়ার খুলিয়া চাবি বাহির করিয়া রমাপদর হাতে দিয়া বলিলেন, 'এই নিন, এই নিন, ডানদিকে ওই কোণের দরজাটা, সোজা চলে যান, কিন্তু এখানে প্লিজ না'। রমাপদ আর কালক্ষেপ করিল না। চাবিটা প্রায় ছিনিয়া লইয়া বিশেষ ঘরের অভিমুখে হনহন করিয়া হাঁটা লাগাইল। পশ্চাতে শুনিতে পাইল ভদ্রলোক বলিতেছেন, 'হয়ে গেলে জলটা ঠিক করে দেবেন কিন্তু..................' ।
Monday, March 13, 2017
এই বসন্তে
বসন্ত আজ দিয়েছে ডাক
কলরবে সব তফাত যাক
চল, আঁকাবাকা ওই পথের গলিতে ভিড় হয়ে যাই
হুল্লোড়ে আজ উঠুক তুফান
তোর আর আমার স্বপ্নের গান
গেয়ে যাব তবু ক্লান্ত যতই হোক না সবাই
চল, ফাগুন ওড়াই দুহাত দিয়ে
একতারাতে গান শুনিয়ে
তুষের আগুন জ্বলবে সেথায় নির্নিমেষ
রঙের খেলায় মাতব যত
রঙিন হবে হৃদয় তত
দোলের দিনে তোর্ সাথে হব নিরুদ্দেশ..............
#bengalipoems #poetries #love #romance #dolyatra #holi #basantautsav
কলরবে সব তফাত যাক
চল, আঁকাবাকা ওই পথের গলিতে ভিড় হয়ে যাই
হুল্লোড়ে আজ উঠুক তুফান
তোর আর আমার স্বপ্নের গান
গেয়ে যাব তবু ক্লান্ত যতই হোক না সবাই
চল, ফাগুন ওড়াই দুহাত দিয়ে
একতারাতে গান শুনিয়ে
তুষের আগুন জ্বলবে সেথায় নির্নিমেষ
রঙের খেলায় মাতব যত
রঙিন হবে হৃদয় তত
দোলের দিনে তোর্ সাথে হব নিরুদ্দেশ..............
![]() |
| ছবি : 'রামলীলা' পোস্টারের সৌজন্যে |
#bengalipoems #poetries #love #romance #dolyatra #holi #basantautsav
Labels:bengali short stories articles poems molat
কবিতা
Thursday, March 9, 2017
সাপ্তাহিকী ২৪ # নারী কথা
- কিরে কাঁকন, আবার পড়তে বসেছিস বুঝি ? এই যে টিউশন পড়িয়ে এলি........বলিহারি.....
- হ্যাঁ গো মিতিনকাকী, সামনেই পরীক্ষা তো, একদম সময় নেই হাতে.......সন্ধের এই সময়টুকুই যা পাই।
- ওওও......তা তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি, কিছু মনে করবিনে তো ?
- না না, বলো না........
- তোর স্কুলের সেই বান্ধবী, কি যেন নাম......হ্যাঁ মনে পড়েছে স্বপ্না। ওরই তো বিয়ে ছিল গত সপ্তাহে, তাই না ?
- হ্যাঁ, গিয়েছিলাম তো, খুব মজা করেছি জানো......
- আর তোর কলেজের সেই মেয়েটি, দেবিকা, সেই যে রে খুব আসতো তোদের বাড়ি, ওর বিয়ে হয়ে গেছে ?
- হ্যাঁ, ওর তো গত বছরই বিয়ে হয়ে গেছে। মনে নেই বৌভাতের সেই গল্পটা শুনিয়েছিলাম।
- আচ্ছা, আরেকজন ছিল না, তোর সাথে ইউনিভার্সিটিতে পড়তো, খুব সুন্দরী, তারও কি বিয়ে হয়েছে ?
- হ্যাঁ তো, ওর তো সেই কবে...... একটা মেয়েও হয়েছে। কিন্তু, হঠাৎ এদের কথা জিজ্ঞেস করছো যে ?
- কিছুই না, আসলে তোরও তো বিয়ের বয়েস পেরিয়ে যাচ্ছে কিনা। তাও প্রায় ঊনত্রিশ হতে চলল, তাই না রে ?
- হ্যাঁ, কিন্তু আমার তো বিএড ফাইনাল আছে এখন। সামনের এসএসসিটা দিয়ে চাকরি পেয়ে তবে তো বিয়ে করব।
- সে নাহয় হলো, কিন্তু তাই বলে কি আর ভালো ভালো পাত্ররা হাঁ দাঁড়িয়ে থাকবে বল দেখি ? তুই কবে পাশ করবি, চাকরীর পরীক্ষা দিবি তারপর চাকরী করবি.......বেলা যে অনেক গড়িয়ে যাবে ততদিনে।
- গড়িয়ে গেলে গড়িয়ে যাক কাকী, কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপরই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেব, তার আগে নয়।
- কি জানি বাপু, তোদের রকম সকম বুঝি না, একেই এতো বয়েস হয়ে গেছে, ঊনত্রিশ পেড়িয়ে ত্রিশের কোঠায় যখন পড়বি তখন কে যে তোকে বিয়ে করবে বাপু কে জানে।
- কেউ বিয়ে না করলে না করবে, তাই বলে পড়াশোনাটা ছেড়ে দেব নাকি?
- শোনো মেয়ের কথা ! তা এতো দিনরাত পড়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার জোগাড় করতে পারবি তো ? দেখিস তখন যেন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসিস নে আবার।
- বেশ তো, তাতে তোমার কি সমস্যাটা হবে সেটা একটু বুঝিয়ে বলো দেখি আমায়।
- ট্যারা ট্যারা কথা চারটি বলতে শিখেছিস বটে। আমার আর কি, তোর বাড়ির পাশে থাকি, ছোটোর থেকে দেখে আসছি তোকে, তোর ভালো চাই তাই বললুম......নাহলে আমার আর কি দায় পড়েছে বল যে তোর মতো শিক্ষিত মেয়েকে বাড়ি বয়ে এসে চারটি ভালো উপদেশ দেব। আমরা কি আর তোদের মতো বিদ্বান রে ভাই ?
- আচ্ছা কাকী, ঝুমার তো খুব অল্প বয়েসে বিয়ে হয়েছে না ?
- হ্যাঁ, সে আর বলতে, কলেজের পর পরই খুব ভালো একটা পাত্র দেখে ছাদনাতলায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলুম। বলেছিলো কি সব নাকি এমএ ফেমে করবে। আমি পষ্ট বলে দিয়েছিলুম, দ্যাখ, ওসব ছাইপাঁশ পড়ে তোর কোন শাক চচ্চড়ি রাঁধতে কাজে লাগবে শুনি ? তাই শুনে মেয়ের কি কান্না ! পরে অবশ্য ওর বাবার দাবড়ানিতে সুড়সুড় করে বিয়ের পিঁড়িতে গিয়ে বসেছিল। ওহ ! সে এক হ্যাঙ্গাম বটে, বাব্বাঃ.........
- ঝুমা তো এখন তোমাদের সাথেই থাকছে কয়েক মাস ধরে, তাই না ? শুনলুম, জামাইকে তোমরা গাড়ি কিনে দিচ্ছ না বলে ওকে নাকি খুব মারধর করে..........সত্যি ?
- ইয়ে.....মানে, আমি এখন উঠি রে কাঁকন, ওদিকে আবার মেলা কাজ পড়ে আছে। ভাতটা বসাতে হবে নাহলে আবার তোর কাকা এসে.......
![]() |
| চিত্র বিন্যাস : নিজস্ব |
Wednesday, March 1, 2017
স্বপ্নের মতো
অফিস থেকে ফিরে, ড্রয়িং রুমে অভ্যাসমতো কাঁধ থেকে ব্যাগটা রাখতেই মা বললেন, 'তোর একটা ক্যুরিয়ার এসেছে, ভেতরের ঘরে দেরাজের ওপর রাখা আছে'। মনে পড়তেই বুকের মধ্যে মৃদু কম্পন অনুভব করলুম। একটা পার্সেল আসার কথা ছিল বটে। জিজ্ঞেস করলাম, 'কখন এসেছে' ?
- ওই দুপুরের দিকে.......আড়াইটে তিনটে নাগাদ হবে।
- ও........আচ্ছা।
পায়ে পায়ে ভিতরের ঘরে গিয়ে ঢুকলুম। দেরাজের ওপর থেকে সাদা খামটা নিয়ে এক ঝটকায় মুখটা ছিঁড়ে ফেললুম। যেটা বেরিয়ে এলো সেটা আমার এতদিনকার নিরন্তর কলম পিষে চলার প্রথম স্বীকৃতি, আমার গোপন প্রেমের স্থির অক্ষরচিহ্ন। তবে বসন্ত বোধহয় সত্যিই এলো। আসবে যে, তার আগাম খবর পেয়েছিলুম, কিন্তু সে যে আমার তালুবন্দী হয়ে আমারই হৃদস্পন্দন দ্বিগুন বাড়িয়ে তুলবে এ আমার কল্পনাতীত ছিল। একটা মাঝারি সাইজের কবিতার বই যার রঙিন প্রচ্ছদের জলরঙে আমার মধ্যবয়সী বাউন্ডুলে আবেগ মিলেমিশে এক হয়ে যেতে লাগলো। কাঁপা কাঁপা হাতে সূচিপত্র খুঁজে বের করে ফেললুম আটচল্লিশ নম্বর পাতাটা। সে পাতার ওপর সারি সারি কালো কালির বিন্যাস যেন আমার বুকের ভেতর কালবৈশাখীর ঝড় হয়ে বইতে শুরু করে দিলে। আর আমি স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঠায় চেয়ে রইলুম আমার শব্দসন্তানের দিকে। 'ঘুম আসছে' - আমার প্রথম ছেপে আসা কবিতা।
বাড়ি বসেই যে এমন ম্যাজিক দেখতে পাবো ভাবিনি কখনো। তাই সম্পাদক সুরজিৎ হালদারকে শুকনো ধন্যবাদ দেব না। আমার কবিতা ও লেখা পড়ে আপনি যে অঙ্কুরের কবিতা সংকলনে আমার কবিতাটি মনোনীত করেছেন তার জন্য চিরতরে ঋণী হয়ে রইলুম আপনার ও সংস্থার অন্যান্য সদস্যদের প্রতি। আপনাদের মঙ্গল হোক। আর কি বলি ? এই অনুভূতি প্রথম প্রেম নিবেদনেই বাজিমাত করার মতো কতকটা, ভাষায় বুঝিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আমার 'মলাটের' পাঠক পাঠিকাদের অনুরোধ করি এভাবেই পাশে থাকুন..........আপনাদের উৎসাহতেই এটি সম্ভব হলো।
পুনশ্চ : বইয়ের মূল্য চল্লিশ টাকা। এটি সংগ্রহ করার জন্য সম্পাদক সুরজিৎ হালদারের সাথে যোগাযোগ করুন সত্ত্বর।
#bengaliarticles #bengaliwriteups #respect #gratitude
| ছবি : নিজস্ব |
| ছবি : নিজস্ব |
Labels:bengali short stories articles poems molat
সম্মান
Subscribe to:
Comments (Atom)





