আজ একবছর পূর্ণ হল। দেখতে গেলে এই তো সেদিনের কথা মনে হয়। হ্যাঁ, তখন দু চার কলম পদ্য, কবিতা ও অন্যান্য অভিজ্ঞতার কথা লিখতুম বটে। যখন যেমন মনে আসতো.....গান লেখার ভারী শখ ছিল, লিখেওছিলুম খানকতক সেসময়। কিন্তু গল্প, প্রবন্ধ ? নাহ, সেসব লেখার কথা দুঃস্বপ্নেও মনে হয়নি কখনো। তবু কি করে যেন বসন্তের খেয়ালী হাওয়ার মতো আপনা আপনি কলম চলতে লাগলো। কখনো মৃদু গতিতে, কখনো কাঁচভাঙ্গা ঝড়ের দাপটে। কালির নদীপথ পেরিয়ে গল্পের মোহনা ছুঁয়ে কখন যে সাহিত্যের সমুদ্রে ঝাঁপ দিলুম মনে পড়ে না। হয়তো এর শিকড় খুঁজতে গেলে দেখা যাবে ৩০শে মার্চ ২০১৬য় এই কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনাই এর মূল কারণ। সেবার সংবাদ মাধ্যমের চ্যানেলে চ্যানেলে আমরা লাইভ দেখেছিলাম মৃত্যুর মিছিল, আর্তের হাহাকার, কংক্রিটের ছাদের তলায় প্রতি মিনিটে পিষে যাওয়া শেষ প্রাণটুকুর নিস্পন্দ আর্তনাদ। আর দেখেছিলাম উদ্ধারকার্যে দলে দলে বিবিধ মানুষের তৎপরতা, আগুপিছু না ভেবে পাথরের আড়াল থেকে খুঁজে বের করা প্রাণের শেষ আধার, স্তব্ধ হয়ে যাওয়া হাতের দিকে জলের বোতল বাড়িয়ে দেওয়ার অন্তিম চেষ্টা। পোস্তা ব্রিজের ভগ্নাংশে তখন রাজদণ্ড সিঁড়ি ভাঙার অঙ্ক কষছে। প্রতিবাদের ঝঞ্ঝা বয়ে গিয়েছিলো শহরের বুকের ওপর দিয়ে। মনে হয়েছিল আমারও কিছু করা প্রয়োজন, যে করেই হোক যতটুকু সামর্থের মধ্যে পড়ে। সেই লিখতে শুরু করি। কিন্তু সে লেখা যে কখন চেতনার কানাগলি ছুঁয়ে গল্পের ছাঁচে গড়ে উঠেছিল বুঝে উঠতে পারিনি। পুরোটা লেখার পর মনে হল, বেশ হয়েছে, এমনটাই তো চেয়েছিলুম। অস্ত্র নিয়ে ছুটে যেতে না পারি, বাকিদের সাথে বিদ্রোহের পতাকাটা তো চেপে ধরে রাখতে পারি।
পোস্ট হল আমার প্রথম ছোট গল্প - "ফেরার' । অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিলাম......... দাদা, দিদি ,বন্ধু, আত্মীয় পরিজন, ছোট, বড় সকলে প্রশংসা করেছিলেন। সাহস জুগিয়েছিলেন।
সেই শুরু.................................................
সেই শুরু.................................................
'সাপ্তাহিকীর' হাত ধরে একে একে বের হতে থাকল 'টিকিট' ,'পয়লা দা', 'লাইন', 'কলরব' , 'একুশ টাকা ভাড়া' ,'আড়বাঁশি' প্রভৃতি। পাল্লা দিয়ে চলতে লাগলো কবিতা, অনুপদ্য, প্রবন্ধ ও অন্যান্য লেখা। পাশাপাশি ছিল পাঠকদের নিরন্তর ভালোবাসা ও উৎসাহ । ছোটগল্প - প্রবন্ধের সাথে তাঁরা যুক্ত হতে থাকলেন এক এক করে, নিজস্ব ভাবভঙ্গিতে জীবনের সাথে সংযোগ খুঁজে পেলেন অনেকেই । আমাকে মন খুলে বললেন সেকথা। নিয়মিত আসতে লাগলো তাঁদের মন্তব্য, প্রশ্ন, সঙ্গে বিভিন্ন গল্পের ঘটনা উল্লেখ করে তার দরদী বিশ্লেষণ। এক দৈব আনন্দে কানায় কানায় ভরে গিয়েছিলো হৃদয়। বন্ধুরা ভরসা দিলেন যেমন, অভিজ্ঞরা ছোটখাট ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে কলমের ভিতটাকে আরও মজবুত করে তুললেন। ক্রমে 'মলাট' নাম দিয়ে ব্লগ খুলে ফেললুম। কল্পনার ধোঁয়া উড়িয়ে হৈহৈ করে এগিয়ে চলল গল্পের রেলগাড়ি। এক একটা স্টেশন অতিক্রম করে আজ সর্বসাকুল্যে ২৫টা ছোটগল্প বিদ্যমান যার মধ্যে ৪টা সিরিজ 'মলাটের' পেজের ডান দিকে দিব্য জায়গাজুড়ে বসে আছে। এছাড়াও ২৪টা কবিতা, ১১টা অনুপদ্য ও ১৩টা প্রবন্ধ নিয়ে 'মলাটের' ভাঁজ আরও দৃঢ় হয়েছে। আজও দেরি হলে মেসেজ আসে, 'পরের সাপ্তাহিকীটা কবে আসছে' ? এই পরম পাওয়ার সত্যিই কোনো বিকল্প নেই।
এক বছর অনেকটা সময়। এই একবছরে পেয়েছিও অনেক, হারিয়েছিও বেশ কিছু। কিছু লিখতে পেরেছি কিছু ইচ্ছে করেই লিখিনি। এমন আনন্দঘন মুহূর্তে সে লাভ লোকসান বিচার করার সময় নয় হয়তো। তবু কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করে, তবু কিছু ঋণ শোধ হয়না কখনো........
সময় এগিয়ে চলেছে........ আমিও........একবছর আগের ফেলে আসা দীর্ঘ ছায়ার অবয়ব দেখে আজ অবাক লাগে বৈকি........
ভালো থাকবেন সকলে................
![]() |
| বিন্যাস : নিজস্ব |
#bengaliarticles #experience #readers #bengaliwriteups #anniversary

No comments:
Post a Comment