দেখতে দেখতে এসে গেলো। আকাশ জুড়ে তুলতুলে মেঘের জলছবি আঁকা হয়ে আছে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। মনছুপছুপ ভিজে হাওয়ায় শহর জুড়ে খুশির মন্তাজ। অসীম ব্যস্ততার ফাঁকেও পাড়ায় পাড়ায় আবাহনের সঙ্গীতে মুখর ছোট বড় প্যান্ডেলগুলো। সারা বছরের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর উৎসবের আমেজে তাথৈ নেচে উঠছে কচিবুড়ো সকলেই। এমনটা হলেই যেন বুকের ভেতরটা গুড়গুড় করতে থাকে। কতকটা যেন সুখবর পাওয়ার অপেক্ষায় আস্তিনের খুঁটটা খামচে ধরে চেয়ে থাকার মতো। আর মাত্র কটা দিন। তারপরেই ঢাক আর কাঁসর ঘন্টার মেজাজী গুঞ্জনে কেঁপে উঠবে রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামটাও। ধুপ ধুনোর গন্ধে ম ম করবে বাঙালীর দিন পাঁচেকের শান্তির অবকাশ। পুজো আসছে........
পুজোর ছুটিতে কলকাতার জনসমুদ্রে গা ভাসাবার পরিকল্পনা করছেন এখন অনেকেই। কোন মণ্ডপটা ভোর ভোর ঢুঁ মারতে হবে আর কোনটায় রাতের নক্ষত্রে চোখ সার্থক হবে তার কলরব এখন কান পাতলেই দিব্যি পাওয়া যাবে। যাঁরা দুদণ্ড শান্তির খোঁজ করছেন অন্য কোথাও, তাঁরা হয়তো এতক্ষনে একটা একটা করে জামা কাপড় ভরছেন ব্যাগের মধ্যে, টিকিট তো তিন মাস আগেই কাটা হয়ে গেছে। যাঁরা বলছেন, 'ওরেব্বাবা এই ভিড়ে রাস্তায় ? রক্ষে করো !', তাঁরা মিনে করা ধুতি পাঞ্জাবি বা জমকালো শাড়িতে চালচিত্রের মতো এমাথা থেকে ওমাথা আলো করে বসবেন চাঁদের হাটে। ঢালাও খিচুড়ি ভোগ আর বেগুন ভাজা চাটনির জিভে জল আনা রন্ধনশৈলীর মশলা চেটে দেখছেন হয়তো অনেকেই মনে মনে। লাস্ট মিনিট সাজেশনের মতো কেউ আবার নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানে চত্ত্বরে, কোমরের বেল্ট, পায়ের চটি, মাথার ক্লিপ, গলার পোড়ামাটির হার, শাড়ির ফলস-পিকো, চশমার ফ্রেম, জিন্স কাটানো, ইত্যাদি টুকিটাকি কাজ সেরে রাখছেন। শেষবেলার শপিং এর আঁচে দোকানিরা সেঁকে নিচ্ছেন কাস্টমারের ফরমায়েশী উত্তেজনা। পুজো আসছে........
যাঁরা রাজ্যের বা দেশের বাইরে আছেন তাঁদের জন্য জানলার গরাদে পড়ছে কতশত উৎসুক মুখের ছায়া। অপেক্ষায় আর উৎকণ্ঠায় নিস্পলক তাকিয়ে আছেন আপনজনের ফিরে আসার পথে। জাঁকজমকের পরিবেশের ফাঁকে ব্যস্ত ফোনের এপার থেকে শুনে নিতে চাইছেন পরম আত্মীয়ের ঘরে ফেরার আশ্বাস। যাঁরা ফিরছেন তাদের ঘরে জ্বলে উঠছে হাজার তারার রোশনাই। যাঁদের ফেরার উপায় নেই তাঁরা দূরভাষের উত্তাপে ছুঁয়ে নিচ্ছেন একে অপরকে, নিঃশ্বাসে ভরে নিচ্ছেন বোধনের মিঠে ঘ্রান। বহু দূর থেকেও হাত জোর করে মায়ের পায়ে ছুঁড়ে দিচ্ছেন বেলপাতা তুলসী দুব্বোর প্রণামী ফুল। ভক্তিভরে আউড়ে নিচ্ছেন 'যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতাঃ, নমস্ত্যশৈ নমস্ত্যশৈ, নমস্ত্যশৈ নমো নমঃ'। বিভিন্ন দুর্ঘটনা জনিত কারণে যাঁদের পুজো খানিক হলেও ম্লান, শিউলি ফুলের টুপটাপ ঝরে পড়ার শব্দ মঙ্গলশাঁখের মতো তাদের কানেও বাজছে। বাকি সকলের মতো উচ্ছাসের স্রোতে গা না ভাসালেও আশ্বিনের শারদ প্রাতে ঘুমজাগানিয়া রোদের উষ্ণতায় তাঁরাও স্নাত হবেন। এমন নানাবিধ ঘটনার পঞ্চপ্রদীপ জ্বলবে শহর, গ্রাম, মফস্বল জুড়ে।
তবু, পুজো আসছে......আর এমন করেই পুজো আসে প্রত্যেক বছর। শারদীয়ার পুণ্যিপুকুরে এমন করেই ধুয়ে যাবে সারা বছরের হতাশা, গ্লানি, বিদ্বেষ আর বিষাদের ধুলোমাটি। লক্ষ কোটি মানুষের অস্থিমজ্জায় গেঁথে যাওয়া একটা উৎসবের চাঁদোয়ায়, কিছুদিনের জন্য হলেও, ঢাকা পড়ে থাকবে ব্যক্তিগত রোষ, শত্রুতা, বিরোধ, বৈপরীত্য। দিকে দিকে বেজে উঠবে আলোর বেণু, ভুবন জুড়ে ফুটে উঠবে সর্বজাতি সর্বধর্মের হৃদকমল। সপ্তমী অষ্টমী নবমী দশমীর চড়ুইভাতিতে পাত পড়বে বাঙালী অবাঙালীর একসাথে। পাশাপাশি আসনে প্রসাদী ফলে কামড় বসাবেন আস্তিক নাস্তিক দু তরফেই। চন্ডীপাঠের স্তোত্র আকাশ বাতাস ফুঁড়ে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়বে গুঁড়ো আবিরের মতো, মানুষের মনে যার রেশ থেকে যাবে বিসর্জনের পরেও।
পুজো আসছে............যাঁদের 'আসছে' শব্দটায় বুক কাঁপে, যাঁরা 'আসছে' শব্দটার দিকে তাকিয়ে থাকেন সারা বছর তাঁরা জানেন পুজো আসবে..... এমনি করেই...... বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, যতদিন না পৃথিবীর শেষ আসে, ততদিন পর্যন্ত মহামায়ার পদধ্বনি শুনতে পাবো মননে, স্বপনে, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে কারণ আমরা যে চাই জাগ্রত, জ্যোতির্ময়ী, জগন্মাতার আবির্ভাব ঘটুক, কারণ আমরা যে সকলেই অপেক্ষায় থাকি 'মা'................
পুজোর ছুটিতে কলকাতার জনসমুদ্রে গা ভাসাবার পরিকল্পনা করছেন এখন অনেকেই। কোন মণ্ডপটা ভোর ভোর ঢুঁ মারতে হবে আর কোনটায় রাতের নক্ষত্রে চোখ সার্থক হবে তার কলরব এখন কান পাতলেই দিব্যি পাওয়া যাবে। যাঁরা দুদণ্ড শান্তির খোঁজ করছেন অন্য কোথাও, তাঁরা হয়তো এতক্ষনে একটা একটা করে জামা কাপড় ভরছেন ব্যাগের মধ্যে, টিকিট তো তিন মাস আগেই কাটা হয়ে গেছে। যাঁরা বলছেন, 'ওরেব্বাবা এই ভিড়ে রাস্তায় ? রক্ষে করো !', তাঁরা মিনে করা ধুতি পাঞ্জাবি বা জমকালো শাড়িতে চালচিত্রের মতো এমাথা থেকে ওমাথা আলো করে বসবেন চাঁদের হাটে। ঢালাও খিচুড়ি ভোগ আর বেগুন ভাজা চাটনির জিভে জল আনা রন্ধনশৈলীর মশলা চেটে দেখছেন হয়তো অনেকেই মনে মনে। লাস্ট মিনিট সাজেশনের মতো কেউ আবার নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানে চত্ত্বরে, কোমরের বেল্ট, পায়ের চটি, মাথার ক্লিপ, গলার পোড়ামাটির হার, শাড়ির ফলস-পিকো, চশমার ফ্রেম, জিন্স কাটানো, ইত্যাদি টুকিটাকি কাজ সেরে রাখছেন। শেষবেলার শপিং এর আঁচে দোকানিরা সেঁকে নিচ্ছেন কাস্টমারের ফরমায়েশী উত্তেজনা। পুজো আসছে........
যাঁরা রাজ্যের বা দেশের বাইরে আছেন তাঁদের জন্য জানলার গরাদে পড়ছে কতশত উৎসুক মুখের ছায়া। অপেক্ষায় আর উৎকণ্ঠায় নিস্পলক তাকিয়ে আছেন আপনজনের ফিরে আসার পথে। জাঁকজমকের পরিবেশের ফাঁকে ব্যস্ত ফোনের এপার থেকে শুনে নিতে চাইছেন পরম আত্মীয়ের ঘরে ফেরার আশ্বাস। যাঁরা ফিরছেন তাদের ঘরে জ্বলে উঠছে হাজার তারার রোশনাই। যাঁদের ফেরার উপায় নেই তাঁরা দূরভাষের উত্তাপে ছুঁয়ে নিচ্ছেন একে অপরকে, নিঃশ্বাসে ভরে নিচ্ছেন বোধনের মিঠে ঘ্রান। বহু দূর থেকেও হাত জোর করে মায়ের পায়ে ছুঁড়ে দিচ্ছেন বেলপাতা তুলসী দুব্বোর প্রণামী ফুল। ভক্তিভরে আউড়ে নিচ্ছেন 'যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতাঃ, নমস্ত্যশৈ নমস্ত্যশৈ, নমস্ত্যশৈ নমো নমঃ'। বিভিন্ন দুর্ঘটনা জনিত কারণে যাঁদের পুজো খানিক হলেও ম্লান, শিউলি ফুলের টুপটাপ ঝরে পড়ার শব্দ মঙ্গলশাঁখের মতো তাদের কানেও বাজছে। বাকি সকলের মতো উচ্ছাসের স্রোতে গা না ভাসালেও আশ্বিনের শারদ প্রাতে ঘুমজাগানিয়া রোদের উষ্ণতায় তাঁরাও স্নাত হবেন। এমন নানাবিধ ঘটনার পঞ্চপ্রদীপ জ্বলবে শহর, গ্রাম, মফস্বল জুড়ে।
তবু, পুজো আসছে......আর এমন করেই পুজো আসে প্রত্যেক বছর। শারদীয়ার পুণ্যিপুকুরে এমন করেই ধুয়ে যাবে সারা বছরের হতাশা, গ্লানি, বিদ্বেষ আর বিষাদের ধুলোমাটি। লক্ষ কোটি মানুষের অস্থিমজ্জায় গেঁথে যাওয়া একটা উৎসবের চাঁদোয়ায়, কিছুদিনের জন্য হলেও, ঢাকা পড়ে থাকবে ব্যক্তিগত রোষ, শত্রুতা, বিরোধ, বৈপরীত্য। দিকে দিকে বেজে উঠবে আলোর বেণু, ভুবন জুড়ে ফুটে উঠবে সর্বজাতি সর্বধর্মের হৃদকমল। সপ্তমী অষ্টমী নবমী দশমীর চড়ুইভাতিতে পাত পড়বে বাঙালী অবাঙালীর একসাথে। পাশাপাশি আসনে প্রসাদী ফলে কামড় বসাবেন আস্তিক নাস্তিক দু তরফেই। চন্ডীপাঠের স্তোত্র আকাশ বাতাস ফুঁড়ে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়বে গুঁড়ো আবিরের মতো, মানুষের মনে যার রেশ থেকে যাবে বিসর্জনের পরেও।
পুজো আসছে............যাঁদের 'আসছে' শব্দটায় বুক কাঁপে, যাঁরা 'আসছে' শব্দটার দিকে তাকিয়ে থাকেন সারা বছর তাঁরা জানেন পুজো আসবে..... এমনি করেই...... বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, যতদিন না পৃথিবীর শেষ আসে, ততদিন পর্যন্ত মহামায়ার পদধ্বনি শুনতে পাবো মননে, স্বপনে, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে কারণ আমরা যে চাই জাগ্রত, জ্যোতির্ময়ী, জগন্মাতার আবির্ভাব ঘটুক, কারণ আমরা যে সকলেই অপেক্ষায় থাকি 'মা'................
![]() |
চিত্রবিন্যাস : নিজস্ব |
#bengaliarticles #durgapujadiaries #bengalipujawriteups #durgapuja

No comments:
Post a Comment