Friday, October 28, 2016

সাপ্তাহিকী ১৯ # প্রান্তিকা

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কপালের টিপটা ঠিক করে নেয় প্রান্তিকা। ভালো করে নিজের মুখটা দেখে নেয় বারকতক। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শাড়ির কুঁচি আর আঁচলটা সমান করতে থাকে সে। আজকের দিনটা ভীষণ ইম্পরট্যান্ট। কোনোভাবেই আজকের দিনে যেন খুঁত থেকে না যায় কোনোখানে। শিফন শাড়ির ভাঁজে আঙ্গুল চালিয়ে পরিপাটির চিহ্ন ফুটিয়ে তোলে সে যত্ন করে। আনন্দ আর উত্তেজনায় জ্বর জ্বর ভাব লাগে যেন শরীরের ভেতর। আজ যে তার বিশেষ বন্ধুর সাথে অফিসিয়াল ডেটে যাওয়ার দিন। 

মধ্যবিত্ত হলেও সচ্ছল পরিবারে মানুষ হয়েছে প্রান্তিকা। তবুও একবিংশ শতাব্দীর চৌকাঠে এসে তাকে হোঁচট খেতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। সম্পর্কটা অন্তর থেকে মেনে নিতে পারেননি প্রান্তিকার বাবা মা কেউই, সে যতই তাঁরা আগের থেকে আন্দাজ করতে পারুন না কেন। শেষটায় রাজি হয়েছেন একরকম অনন্যোপায় হয়েই। প্রান্তিকার অফিসের সিনিয়র কলিগ। অন্য ডিপার্টমেন্ট হলেও কাজের সূত্রে কথার লেনদেন, আলাপ, ভালোলাগা ও পরবর্তীকালে প্রেম হয়। আগাগোড়াই মিতভাষী প্রান্তিকা এক অপার্থিব আবেশে আকর্ষিত হয়েছিল তার সহকর্মীর নিয়মবহির্ভূত দৃষ্টিভঙ্গিতে। জীবনের সরলরেখায় পা মেপে পথ চলায় যার প্রবল অনীহা, সমাজের শিকড়ে বাসা বেঁধে থাকা নিয়মাবলী যে দূরে নিক্ষেপ করে প্রতি মুহূর্তে, এহেন মানুষের সংস্পর্শে এসে যেন প্রাণ পেয়েছিলো বছর চব্বিশের তরুণী প্রান্তিকা। সম মনোভাবের মানুষকে পেয়ে সে ঠিক করে নিয়েছিল যদি গাঁটছড়া বাঁধতে হয় তাহলে এর সাথেই বাঁধবে, বাবা মা র পছন্দ করা বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ পাত্রের সাথে নয়। তার মনের মানুষ অবশ্য তাকে সাবধান করেছিল অনেক আগেই, লৌকিকতার কাঁটাতারের জ্বালা মনে করিয়ে দিয়েছিলো বারেবার। কিন্তু প্রান্তিকাকে নিরস্ত করা যায় নি। কোনো এক সন্ধের লঞ্চঘাটে আশমানি চাঁদের আলো ও রুপোলী নক্ষত্রদের সাক্ষী রেখে সে জিজ্ঞেস করেছিল, 'তোমার আপত্তি নেই তো' ? মৃদু হেসে পরম আদরে তাকে বুকে টেনে নিয়েছিল তার সিনিয়র সহকর্মী। মাথায় নরম আঙ্গুল ছুঁইয়ে বলেছিলো, 'সামনের বুধবার, চল্ আমরা অফিসিয়াল ডেটে যাই, তোকে নিয়ম মেনে, যাকে বলে একেবারে অফিসিয়ালি প্রপোজ করব'।

আজ সেই দিন। ঘড়ির কাঁটার দিকে চোখ যায় প্রান্তিকার। আর একটু বাদেই সে আসবে। ত্রস্ত হাতে চুল বাঁধতে থাকে সে। পাশের ঘর থেকে পায়ে পায়ে দময়ন্তী এসে দাঁড়ান ড্রেসিং টেবিলের পাশে। আলতো স্বরে বলেন, 'তুই কিন্তু আরেকটিবার ভেবে দেখতে পারতিস, বড্ডো তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে না কি' ? প্রান্তিকা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, 'আমি তো অপরাধ কিছু করছি না মা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্য করে তুললে যখন, তখন সেই সিদ্ধান্তটাই নিতে দাও। তোমরা তো আমাকে সুখী করতে চেয়েছিলো। বিশ্বাস করো আমি সুখ খুঁজে পেয়েছি। শুধু এটুকুই বলার, তোমরা আমার পাশে থেকো, আগের মতোই '। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন দময়ন্তী। চিরুনিটা নিয়ে প্রান্তিকার চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলেন, 'তোর কি আজ দেরি হবে আসতে' ?  'না, খুব বেশি হবে না, তবে তোমরা খেয়ে নিও', আস্তে আস্তে বলে তাঁর একমাত্র কন্যা। 

নিচে গাড়ির হর্ন বাজে। পর্দার আড়াল সরিয়ে জানলা দিয়ে নিচে তাকায় প্রান্তিকা। চাপা উত্তেজনায় ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে, 'আমি তাহলে আসি' ? ঠোঁটে আলগা হাসি ঝুলিয়ে সামান্য ঘাড় কাত করেন দময়ন্তী। মাকে একপলক জড়িয়ে ধরে বেরিয়ে যায় সে। সদর দরজা খুলে দেখে ইস্পাত রঙের সিডান গাড়িটা অপেক্ষা করছে একেবারে দোরগোড়ায়। পিছন ফিরে মুখ তুলে তাকায় সে। দক্ষিণের জানলায় বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। বাঁ হাতটা জানলার কাঁচের ওপর পাতা। দূর থেকে আশীর্বাদের মতো মনে হয় যেন প্রান্তিকার। বিড়বিড় করে বলে, 'আমার প্রণাম নিও' । তারপরেই ঘুরে গাড়ির সামনের দরজাটা খুলে উঠে পড়ে সে। ড্রাইভারের সিটে রূপকথা তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। গোধূলি রঙা কুর্তিতে পরীর মতো দেখতে লাগছে সহকর্মীকে। রূপকথা চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, 'কি রে ? সব ঠিক আছে তো'? প্রান্তিকা ঘাড় নাড়ে। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে রূপকথা বলে, 'বেশ, আজ তাহলে তুই বল, কোথায় যাবো.......? প্রান্তিকা সলাজ গলায় বলে, 'লঞ্চঘাট.......... ' ।

 ছবি : গুগল 

#bengalishortstories #bengalilovestories #bengaliromanticstories #love #romance #drama                

Tuesday, October 25, 2016

সম্মান

পাজামারও বুকপকেট ! গুবরে পোকাও এরোপ্লেন ! আর আমিও নাকি লেখক !
নাহয় কদিন লেখালিখির দরুণ কজন পাঠক পাঠিকা জুটেছে, তাই বলে একেবারে ফুলকারীর আসন বিছিয়ে মাথায় মৃদুমন্দ তালপাখার বাতাস ! বলেন কি কত্তা ! এমন অসম্ভব কাণ্ডও হয় ? আর যাঁরা এই অসম্ভব কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমার অফুরান ভালোবাসা ও সশ্রদ্ধ প্রণাম। কলমের আঁচড় তরবারির শানিত ফলার চেয়েও মোক্ষম এ আমরা সকলেই জানি। ফেসবুকের দেওয়ালে যাঁরা নিয়মিত লেখালিখি করেন তাঁরা একাধারে গুণীজন এবং বেশ জনপ্রিয়ও বটে, সেখানে আমার কলম সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর বেশি কিছু নয়। তবু আমার কপালে যে এমন প্রাণকাড়া জলখাবারের আয়োজন ছিল আর তার জন্য যে মনের মধ্যে বেশ ফুরফুরে ভালোলাগার স্রোত বয়ে গেছে তা সর্বসমক্ষে বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। তাই অঙ্কুরের সমস্ত সদস্যদের জন্য আমার অকুন্ঠ মঙ্গলকামনা। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য - সুরজিৎ হালদার, যিনি আমার কথা আলাদা করে ভেবেছেন ও ডাকযোগে এই সম্মান পত্রটি পাঠিয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই সুরজিৎবাবু। শুধুমাত্র সমৃদ্ধ হয়েছি বললে ভুল বলা হবে বরং এহেন কর্মকাণ্ডে স্তব্ধ হয়ে গেছি। 

আমার ব্লগের যে কতিপয় পাঠক পাঠিকা আছেন এই সম্মানের সিংহভাগ দাবিদার তাঁরাই । তাঁদের উৎসাহ ও পরামর্শতেই আমায় কলমের কালি আরও মসৃন হয়। তাঁদের সকলকে আমার কুর্নিশ ও সেলাম।  


#bengaliarticles #bengaliwriteups #respect #gratitude #certificate

Thursday, October 20, 2016

অনুপদ্য - ১১

নে বাপু, হয়েছে অনেক গুরুগম্ভীর তক্কো বিতক্ক,
এ জগতে কি আর কিছুই বলার নাই !
দে না চাড্ডি নারকেল নাড়ু, খই মুড়কি যাহোক এট্টু
খানকতক তাই নাহয় চিবিয়ে চিবিয়ে খাই...........

ছবি : গুগল 
















#bengalipoems #shortpoems

Monday, October 17, 2016

ছুটির একদিন

মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। ওই যে সেই কে যেন বলে গিয়েছিল...... 'Man proposes, God disposes'..............এক্কেরে খাঁটি কথা যা হোক। কি রকম ? এই যেমন ধরুন না একটা ছুটির দিন। যেই আপনি ভেবে বসে আছেন আজ তো নটার আগে ওঠাই নেই.......... ব্যাস ! অমনি কিছু না কিছু কারনে ভোর ছটায় আপনার ঘুমটা ভাঙবেই ভাঙবে ! হাই তুলে, নিতাই গৌরাঙ্গর মত দুহাত ছড়িয়ে কাঁচা ঘুমের জাবর কাটতে কাটতে ভাবছেন, যাই হোক ঘুমটা যখন ভেঙেই গেল তাহলে একটু এফ এম চালিয়ে প্রভাতি গানের অনুষ্ঠানটা শুনে নেওয়া যাক। অমনি ঘরের ভেতর থেকে অর্ডার আসবে, 'হাঁ করে বসে থেকো না, ব্রাউন ব্রেডটা নিয়ে এস তাড়াতাড়ি, আজকে একটু স্যান্ডুইচ করব ভাবছি' ! আপনি হয়ত মনে মনে ভাবছেন, 'আপদ ! আর বলার সময় পেলে না, দুদণ্ড যে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে দিনের শুরুটা একেবারে শিশির ভেজার মত করে প্রান জুড়ানো হবে তা নয়, মুডের ওপর দিলে একেবারে স্যান্ডুইচের পাতিলেবু ঘষে'। অমনি আরেকদফা আওয়াজ, 'চা দিয়েছি, জুড়িয়ে গেল, খেয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢোকো, তুমি তো আবার বাথরুম না করে এক পা নড়তে চাওনা মোটে'। আপনি ততক্ষনে নিমপাতা গেলার মত মুখ করে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন. আর মনে মনে ভাবছেন, 'বাদামি রুটি ! উফফফ, এর চাইতে অফিস চলে গেলে মানসিক ছুটিটা পাওয়া যেত খানিক ' ! 
এখনি কি হয়েছে ভাবচেন, এই ত সবে শুরু হল !

ছুটির দিনে এরকম অভিজ্ঞতা কম বেশি সকলেরই হয়। যখনি আপনি আয়েস করে মউরি চিবিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে দিন কাটানোর চিন্তা করছেন তখনি আপনার কপালে উটকো কাজের ঝুরি নিয়ে কেউ না কেউ হাজির হয়ে যাবে ঠিক। 'দাদা, পাড়ায় অনুষ্ঠান আছে, একটু সভাপতির বক্তৃতাটা লিখে দিন না' অথবা 'দাদা, এবারের কালী পুজোর চাঁদাটা একটু বাড়িয়ে.......',  নিদেনপক্ষে, 'আমার খুড়তুতো বোনের জন্য একটা ভালো পাত্রর কথা বলেছিলুম, পেলেন নাকি' ?............., ইত্যাদি। দুদণ্ড শান্তিতে কোলবালিশ জড়িয়ে জিরোবার কথা ভেবেছেন কি আপনাকে একেবারে ঘরছাড়া করে ছাড়বে আপনারই ঘরের লোক। যেন এ ধরাধামে আপনি সে অধিকার নিয়ে আসেন নি । ওসব বিলাসিতা আপনার মত অজাত কুজাতের ললাটে মানায় না। আপনি হচ্ছেন কলুর সাবালক বলদ, নাকে দড়ি দিয়ে সংসারের চরকিপাক দেওয়াটাই আপনার একমাত্র ভবিতব্য। তবু সে যদিবা হাতের কাজগুলো আপনি সেরে রাখলেন, টিভির রিমোটটা কিছুতেই হাতাতে পারবেন না।............ কেন ? প্রশ্ন করে শত্তুর বাড়াবেন নাকি মশাই ! তার চাইতে সিগারেট জ্বালিয়ে বারান্দায় চলে যাওয়া ভাল। মনে মনে গুনগুন করুন, 'সেই ভাল, সেই ভাল, আমারে নাহয় না জানো.............'। হয়ত আপনি বারান্দার আরাম কেদারায় বসে বসে ভাবছেন, 'যাক........এইবার বাকি সময়টুকু নিশ্চিন্তি.................', সম্পূর্ণ ভুল ভাবছেন। কারন ঠিক সেই সময়,  'ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে' এর মতো আপনার কানের কাছে দরদী গলায় মৌমাছির গুঞ্জনে ভেসে আসবে,.......... 'এই শোনো, মিলন মেলায় টেরাকোটার ভালো কাজ এসেছে, চলো একবার ঢুঁ মেরে আসি' .......বা........ 'এই জানো ? দক্ষিণাপণে কি ভালো সেল দিচ্ছে, এরকম চমকদার ডিস্কাউন্টে শাড়ি সালোয়ার না কেনাটা বৃথা বুঝলে' ?..... না, না, চমকানোর কিছু নেই, 'হাড়িকাঠে গলা দিয়েছ পেতে, এখন তো সাগরসঙ্গমে হবেই যেতে' । বিকেলের বকলমে আপনি নিচুতলার কর্মী শ্রেণীভুক্ত বেশি বই নয়, অমন দুচারটে ডিস্কাউন্টের ডিসকাস থ্রো আপনার এড়িয়ে যাওয়ার জাস্ট কোনো উপায় নেই। যদি না আপনি ঠিক সেই সময়, পেট চেপে ধরে, 'উফফফ কি ভয়ানক ব্যাথা' বলে বিছানায় শুয়ে কাতরাতে থাকেন। তাহলে হয়তো ঢাকুরিয়ার অটোটা আপনি এড়ালেও এড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তাও সাময়িক। আপনাকে শপিং রেডি করে নেওয়ার জন্য গোটা দুয়েক ডেকোলিক ট্যাবলেট ততক্ষনে আপনার পেটে চালান হয়ে গেছে দিব্যি। আর আপনি ঘুড়ন্ত সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আপনার দুরন্ত জীবনের কভার ড্রাইভের মিসটাইম হয়ে যাওয়াটা দেখে চলেছেন নিস্পলক।   

কোথায় আপনি ভেবেছিলেন আধবেলার অবসরে সাধের গীটারটা নিয়ে একটু টুংটাং করবেন, অথবা টিভিতে ইন্ডিয়া নিউজিল্যান্ডের ওয়ান ডে ম্যাচটা সাপ্টে চেটেপুটে খাবেন, বা কমপ্লেক্সের কমিউনিটি হলে তাসের আড্ডা বা ক্যারামের ঘুঁটি সাজিয়ে তুলবেন, তা নয় আপনাকে হয়তো কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে ফলের ঝুড়ি নিয়ে হাজির হতে হবে, তিনি সদ্য হাসপাতাল থেকে ফলতঃ ফেরত এসেছেন বলে। অথবা কোনো এক বিয়ের নিমন্ত্রণে না গেলে সে হয়তো বিয়ের পিঁড়ি থেকেই লাফিয়ে উঠে চলে যাবে, ইত্যাদি, যাবতীয় কাজে হাতযশ না প্রমান করা অবধি আপনার নামযশের আশা খুবই ক্ষীণ। আবার এমনও হতে পারে, আপনার যদি দু কলি গাওয়া বা লেখার অভ্যেস থাকে এবং আপনি সেটা করবেন বলে ভাবছেন এমন সময় হৈ হৈ করে আপনার পাশের বাড়ির জ্যাঠিমা বা মাসিমা পান দোক্তা চিবোতে চিবোতে এসে বলবেন, 'কি গো শুনলুম নাকি তুমি বাবা হবে !! আমাদের কাছেই সুখবরটা চেপে গেলে ?' এবং এই সময় হবু বাবা মায়ের ঠিক কি কি করা দরকার তার সমস্তটা একেবারে ফর্দ করে বুঝিয়ে দিয়ে চা, চানাচুর, ডিমের ডেভিল খেয়ে তবে ক্ষান্ত হবেন। সে যতই আপনি ভাবলেশহীন মুখ করে বসে থাকুন না কেন, যতই আপনি নীরবে বলার চেষ্টা করুন না কেন, 'আচ্ছা বেশ, আমার একটু কাজ আছে', তবু সে অযাচিত টিউশন ছেড়ে উঠে যাবার জো নেই। সে দুষ্প্রাপ্য, অমোঘ বক্তিমে আপনাকে শুনতেই হবে....... 'না চাহিলে যারে পাওয়া যায়' এর মতো করে।   

এহেন সমস্ত গুরু দায়দায়িত্ব পালন করে যতক্ষণে আপনি 'পথভোলা এক পথিক' আবার ফিরে আসবেন আপনার একান্তে, ততক্ষনে হয়তো সারা দিনের ছুটিটা আঙুলের ফাঁক গলে কখন বালির মতো পড়ে গেছে ঝুরঝুর করে আপনার খেয়ালও থাকবে না। রাতের ডিনার টেবিলে বসে আপনি মনে মনে হিসাব কষবেন, 'এই রে ! এটা তো করা হলো না, যাহ !, ওটা তো বাকি রয়ে গেল' তখন আপনার কল্পনায় কপাল চাপড়ানোটা অদৃশ্যই থেকে যাবে, সারাদিনে করা অন্যান্য কাজের মতোই। গালে হাত দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে আবার কবে এমন ছুটি আসবে, যেটায় না করা কাজগুলো এক এক করে সেরে ফেলা যাবে। সে ছুটির দিন সপ্তাহ ঘুরলেই যে আসবে এমনটা নয় কারণ গত সপ্তাহতেই ঠিক করে রাখা আছে কোন বাঁশের খুঁটিতে বলদকে বাঁধা হবে। অনেকেই হয়তো বলবেন, 'ওরে তোরা অতো ছুটি পাস্, তারপরেও নাক সিঁটকোস কেন' ? কি বলবো কত্তা ! ছুটিগুলো ক্যালেন্ডারে থাকে ঠিকই, কিন্তু ছুটোছুটিও হয় বিস্তর........... 

অতএব, 'আমাদের ছুটি - ছুটি চল নেবো লুটি এই আনন্দ ঝর্ণায়'......... এটা মনে মনেই গাইতে থাকুন। আনন্দ ঝর্ণার অবগাহনে দিব্যি বেশ একটা ছুটির আমেজ আসবে.........কাল্পনিকই হোক না ক্ষতি কি ! 

পুনশ্চ : এই লেখাটি যে কোনো লিঙ্গের প্রতিই প্রযোজ্য, খামোকা একপেশে মনোভাবে আমাকে দোষের ভাগী করবেন না।


#bengaliarticles #bengaliwriteups #holiday #relax

Thursday, October 6, 2016

লোগো

তৃতীয়া থেকেই লোকজন নাওয়া খাওয়া ভুলে যেরকম মণ্ডপে মণ্ডপে পিলপিল করে জড়ো হতে শুরু করেচে, তাতে করে পুজোর বাকি দিনগুলোতে যে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হবে এটা আন্দাজ করতে কোনো গ্রহ নক্ষত্রের ছক লাগবে না এ আমি নিশ্চিত। যে রাস্তা অতিক্রম করতে আধঘন্টার বেশি লাগতো না সেই রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে, গোঁফ দাড়ি না গজানো অবধি পেরোনো দুস্কর হচ্ছে। এই আনন্দোৎসবে যখন সব্বাই ফুরফুরে স্নো পাউডারে সেজে উঠছে তখন আমিও ভাবলুম আমার মলাটকেও একটা নতুন জামা পরিয়ে দেখি কেমন হয়। হাজার হোক পুজো বলে কতা, সামান্য কিছু না দিলে রাতবিরেতে যদি জ্বালাতন করে মারে ? তাই ওরেও দিলুম একখান টেকসই কভার। মলাটেরও আবার মলাট ! কি আজগুবি ব্যাপার কত্তা ! কেউ কেউ মনে মনে ভাবছেন, 'বলিহারি বাপু, কালে কালে আরও কত কি যে দেখবো'। বিশ্বাস করুন, দিব্বি গেলে বলছি, আমিও অমনটা শুনিনি আগে। সে যাইহোক, দেখতে দেখতে মাস পাঁচেকেই এই আজগুবি গপ্পের সংখ্যা এখন ১৮ হয়েচে, খান ১৯ কবিতা, ১০ টা অনুপদ্য আর ৮টা প্রবন্ধ নিয়ে মলাটের গাড়ি এখন দিব্যি গড়গড়িয়ে চলচে। ব্লগ ভিউয়ের সংখ্যাও প্রায় ছ হাজার ছুঁই ছুঁই করচে। আহ্লাদে হামাগুড়ি দেওয়ার মতো না হলেও মন্দ নয়, কি বলুন ! তাই আগাপাশতলা চিন্তা করে ভাবলুম একটা জুতসই লোগো তৈরী করি বরং, যার মধ্যে ব্লগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট ও সর্বোপরি বাঙালীয়ানাটা শোভা পাবে।      

একটা গান মনে পড়ে যাচ্ছে এই প্রসঙ্গে। 'দুনিয়া মে লোগো কো ধোঁকা কভি হো যাতা হ্যায়'.........
আর ঠিক এই কারণেই যাতে ধোঁকার ডালনা দিয়ে ভাত না খেতে হয় তাই এই লোগোর আবির্ভাব। যদ্দুর মনে হয় 'মলাট' নামে কোনো বাংলা ব্লগ নেই, তবু সাবধানের মার্ এড়িয়ে ব্রাউন পেপারের মোড়কে লোগোতে যে শুঁড় পেঁচানোর আদিখ্যেতাটি করেছি তা একরকম বাধ্য হয়েই, কতকটা এক শিল্পী বন্ধুর চাপে। এরকমটা না করলে নাকি লেখার সাথে ঠিক খাপ খাবে না ব্লগের বিন্যাস। একরকম প্রায় জোর করেই মলাটের জামাটা বানিয়ে ছাড়লে। অগত্যা তৈরী হলো ব্লগের বাদামী ব্যঞ্জনা। কাঁপা কাঁপা হাতে গোটা আর্টওয়ার্কটা বানালেও, মূলভাবনায় সূক্ষ্ম তুলির যে শেষ টানটা দিয়েছে প্রিয়ম এটা অস্বীকার করার বিন্দুমাত্র উপায় নেই। আর তাই প্রিয়মের সৃজনশীলতাকে ধন্যবাদ ও কুর্নিশ। বাকি, নতুন কাঠামোয় 'মলাট' কেমন লাগছে জানাবেন। আপনাদের  মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
আর..................শুভ শারদীয়া।

মূলভাবনা : প্রিয়ম বিশ্বাস
অলংকরণ : নিজস্ব      


#bengaliarticles #logo #bengaliwriteups

Sunday, October 2, 2016

আশ্বিনের পুজো

দেখতে দেখতে এসে গেলো। আকাশ জুড়ে তুলতুলে মেঘের জলছবি আঁকা হয়ে আছে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। মনছুপছুপ ভিজে হাওয়ায় শহর জুড়ে খুশির মন্তাজ। অসীম ব্যস্ততার ফাঁকেও পাড়ায় পাড়ায় আবাহনের সঙ্গীতে মুখর ছোট বড় প্যান্ডেলগুলো। সারা বছরের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর উৎসবের আমেজে তাথৈ নেচে উঠছে কচিবুড়ো সকলেই। এমনটা হলেই যেন বুকের ভেতরটা গুড়গুড় করতে থাকে। কতকটা যেন সুখবর পাওয়ার অপেক্ষায় আস্তিনের খুঁটটা খামচে ধরে চেয়ে থাকার মতো। আর মাত্র কটা দিন। তারপরেই ঢাক আর কাঁসর ঘন্টার মেজাজী গুঞ্জনে কেঁপে উঠবে রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামটাও। ধুপ ধুনোর গন্ধে ম ম করবে বাঙালীর দিন পাঁচেকের শান্তির অবকাশ। পুজো আসছে........

পুজোর ছুটিতে কলকাতার জনসমুদ্রে গা ভাসাবার পরিকল্পনা করছেন এখন অনেকেই। কোন মণ্ডপটা ভোর ভোর ঢুঁ মারতে হবে আর কোনটায় রাতের নক্ষত্রে চোখ সার্থক হবে তার কলরব এখন কান পাতলেই দিব্যি পাওয়া যাবে। যাঁরা দুদণ্ড শান্তির খোঁজ করছেন অন্য কোথাও, তাঁরা হয়তো এতক্ষনে একটা একটা করে জামা কাপড় ভরছেন ব্যাগের মধ্যে, টিকিট তো তিন মাস আগেই কাটা হয়ে গেছে। যাঁরা বলছেন, 'ওরেব্বাবা এই ভিড়ে রাস্তায় ? রক্ষে করো !', তাঁরা মিনে করা ধুতি পাঞ্জাবি বা জমকালো শাড়িতে চালচিত্রের মতো এমাথা থেকে ওমাথা আলো করে বসবেন চাঁদের হাটে। ঢালাও খিচুড়ি ভোগ আর বেগুন ভাজা চাটনির জিভে জল আনা রন্ধনশৈলীর মশলা চেটে দেখছেন হয়তো অনেকেই মনে মনে। লাস্ট মিনিট সাজেশনের মতো কেউ আবার নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানে চত্ত্বরে, কোমরের বেল্ট, পায়ের চটি, মাথার ক্লিপ, গলার পোড়ামাটির হার, শাড়ির ফলস-পিকো, চশমার ফ্রেম, জিন্স কাটানো, ইত্যাদি টুকিটাকি কাজ সেরে রাখছেন। শেষবেলার শপিং এর আঁচে দোকানিরা সেঁকে নিচ্ছেন কাস্টমারের ফরমায়েশী উত্তেজনা। পুজো আসছে........

যাঁরা রাজ্যের বা দেশের বাইরে আছেন তাঁদের জন্য জানলার গরাদে পড়ছে কতশত উৎসুক মুখের ছায়া। অপেক্ষায় আর উৎকণ্ঠায় নিস্পলক তাকিয়ে আছেন আপনজনের ফিরে আসার পথে। জাঁকজমকের পরিবেশের ফাঁকে ব্যস্ত ফোনের এপার থেকে শুনে নিতে চাইছেন পরম আত্মীয়ের ঘরে ফেরার আশ্বাস। যাঁরা ফিরছেন তাদের ঘরে জ্বলে উঠছে হাজার তারার রোশনাই। যাঁদের ফেরার উপায় নেই তাঁরা দূরভাষের উত্তাপে ছুঁয়ে নিচ্ছেন একে অপরকে, নিঃশ্বাসে ভরে নিচ্ছেন বোধনের মিঠে ঘ্রান। বহু দূর থেকেও হাত জোর করে মায়ের পায়ে ছুঁড়ে দিচ্ছেন বেলপাতা তুলসী দুব্বোর প্রণামী ফুল। ভক্তিভরে আউড়ে নিচ্ছেন 'যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতাঃ, নমস্ত্যশৈ নমস্ত্যশৈ, নমস্ত্যশৈ নমো নমঃ'। বিভিন্ন দুর্ঘটনা জনিত কারণে যাঁদের পুজো খানিক হলেও ম্লান, শিউলি ফুলের টুপটাপ ঝরে পড়ার শব্দ মঙ্গলশাঁখের মতো তাদের কানেও বাজছে। বাকি সকলের মতো উচ্ছাসের স্রোতে গা না ভাসালেও আশ্বিনের শারদ প্রাতে ঘুমজাগানিয়া রোদের উষ্ণতায় তাঁরাও স্নাত হবেন। এমন নানাবিধ ঘটনার পঞ্চপ্রদীপ জ্বলবে শহর, গ্রাম, মফস্বল জুড়ে।

তবু, পুজো আসছে......আর এমন করেই পুজো আসে প্রত্যেক বছর। শারদীয়ার পুণ্যিপুকুরে এমন করেই ধুয়ে যাবে সারা বছরের হতাশা, গ্লানি, বিদ্বেষ আর বিষাদের ধুলোমাটি। লক্ষ কোটি মানুষের অস্থিমজ্জায় গেঁথে যাওয়া একটা উৎসবের চাঁদোয়ায়, কিছুদিনের জন্য হলেও, ঢাকা পড়ে থাকবে ব্যক্তিগত রোষ, শত্রুতা, বিরোধ, বৈপরীত্য। দিকে দিকে বেজে উঠবে আলোর বেণু, ভুবন জুড়ে ফুটে উঠবে সর্বজাতি সর্বধর্মের হৃদকমল। সপ্তমী অষ্টমী নবমী দশমীর চড়ুইভাতিতে পাত পড়বে বাঙালী অবাঙালীর একসাথে। পাশাপাশি আসনে প্রসাদী ফলে কামড়  বসাবেন আস্তিক নাস্তিক দু তরফেই। চন্ডীপাঠের স্তোত্র আকাশ বাতাস ফুঁড়ে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়বে গুঁড়ো আবিরের মতো, মানুষের মনে যার রেশ থেকে যাবে বিসর্জনের পরেও।

পুজো আসছে............যাঁদের 'আসছে' শব্দটায় বুক কাঁপে, যাঁরা 'আসছে' শব্দটার দিকে তাকিয়ে থাকেন সারা বছর তাঁরা জানেন পুজো আসবে..... এমনি করেই...... বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, যতদিন না পৃথিবীর শেষ আসে, ততদিন পর্যন্ত মহামায়ার পদধ্বনি শুনতে পাবো মননে, স্বপনে, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে কারণ আমরা যে চাই জাগ্রত, জ্যোতির্ময়ী, জগন্মাতার আবির্ভাব ঘটুক, কারণ আমরা যে সকলেই অপেক্ষায় থাকি 'মা'................ 


চিত্রবিন্যাস : নিজস্ব
#bengaliarticles #durgapujadiaries #bengalipujawriteups #durgapuja