ভেবেছিলাম দ্বিতীয় পর্বটা আর লিখব না। চোখের সামনে একের পর এক অঘটন দেখে মনে হচ্ছিল বিশ্বজয়ী টিমরা খেই হারিয়ে ফেলেছে। যথেচ্ছ ক্লাব ফুটবল আর মুহুর্মুহু চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ঝড়ের দাপটে উড়ে গেছে নিজেদের দেশের হয়ে খেলার উন্মাদনা। ধ্বংসাবশেষের মতো পড়ে আছে শুধু নিয়মমাফিক বিশ্বকাপ খেলতে আসার অনিচ্ছেটুকু। আইসল্যান্ডের সাথে আর্জেন্টিনার ড্র, পরের দিকে বিরাট ব্যবধানে ক্রোয়েশিয়ার কাছে নতিস্বীকার, সুইজারল্যান্ডের সাথে ব্রাজিলের ড্র, পরের ম্যাচে কোস্টারিকার বিরুদ্ধে কোনোরকমে গোল, মেক্সিকোর সাথে জার্মানির বিপর্যয় এবং ফ্রান্স জিতলেও তাদের ঢিলেঢালা ফুটবলে সেই আবেগ বড় অনুপস্থিত লেগেছিল। বড় বড় টিমের এমন অবিন্যস্ত ফুটবল দেখার অভিজ্ঞতা আমার মতো ক্রীড়াপ্রেমীদের একেবারেই যে নেই এটুকু বাজি রেখে বলতে পারি। তাই রাতের পর রাত জাগাটা যে ক্রমশ মাঠে মারা যাচ্ছে সেটা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছিলাম।
লাভের মধ্যে ছোট ছোট টিমগুলোর যে চরম উত্তেজনা আর কমিটমেন্ট দেখলাম তাতে করে মনে হচ্ছিল এদের মধ্যে অনেককেই হয়ত নক আউট পর্যায়ের ওপরের দিকে দেখতে পাব। বিশেষভাবে উল্লেখ্য পেরু, ইরান, মরোক্কো, জাপান, সুইডেন এবং সেনেগাল যারা সবুজ ঘাসের কানায় কানায় যে দরদটা মজুদ করে এল তা বহুদিন পর্যন্ত মনে রাখার মতো। এর পাশাপাশি ছিল রাশিয়া, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড আর ঊরুগুয়ের চোখ ধাঁধানো ফুটবল আর অক্লান্ত নিম্নচাপ বর্ষণের মতো বেশ কিছু গোল। চেয়ার ছেড়ে ওঠার অবকাশটা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না তার আগেই সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো গোলপোস্টের জালে আছড়ে পড়ছে একের পর এক সোনালী মুহূর্তরা।
কিন্তু কথায় আছে পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে, এবং সময় বুঝে তা বাড়লও বটে। ৩০ মিনিটের মাথায় সুইডেনের বিরুদ্ধে এক গোল খাওয়ার পর জার্মানরা ফেরার টিকিট প্রায় নিশ্চিত করে নিয়েছিল। কিন্তু জার্মান রক্ত যে অন্য ধাতু দিয়ে গড়া তা বুঝতে বেশিক্ষন সময় লাগল না। হাফ টাইমের ঠিক পরেই মার্কো রিউসের গোলে জার্মানি সমান সমান পাঞ্জা কষতে শুরু করল। গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো জার্মান ডিফেন্ডার বোয়েতাং বেরিয়ে গেল রেড কার্ড দেখে। ১০ জন মিলেও যে বিধ্বংসী ফুটবল খেলা যায় সেটা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেল জার্মানি। ইনজুরি টাইমে পেনাল্টি বক্সের সামান্য বাইরে কোনাকুনি জায়গা থেকে ফ্রি কিকে যে গোলটা করল টনি ক্রুস সেখান থেকে গোল হওয়া একরকম অসম্ভব। ঠিক সেই অসম্ভব কাজটাই অসাধারণ বাঁকানো শটে গোল করে গ্রূপের প্রথম ম্যাচ জিতল জার্মানি। তবে পুরোনো চাল ভাতে বাড়লেও মুখ অবধি পৌঁছতে পেলো না। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে লজ্জাজনক পরাজয়ে জার্মানি যে লীগ টেবিল থেকেই ছিটকে যাবে এটা বোধহয় অতি বড় ফুটবল বোদ্ধারও বোঝার ঊর্দ্ধে ছিল।
গ্রূপ ডির শেষ ম্যাচে যখন আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়া মুখোমুখি হচ্ছিল তখন ক্যামেরার ফ্রেমে বারে বারে উঠে আসছিল লিওনেল মেসির মুখটা। গ্যালারিতে তখন নীল সাদার উৎকণ্ঠার মেঘ জমেছে। আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে পেনাল্টি মিস আর তার পরেই ক্রোয়েশিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হার, এই দুয়ে মিলে বিশ্বের চাপ নিয়ে শুধু টিমটা মাঠে নামছে না, যেন গোটা আর্জেন্টিনা দেশটা খেলতে নামছে তাদের প্রিয় ঈশ্বরের স্বর্গীয় আতশবাজির ঝলক দেখার জন্য। সমস্ত উদ্বেগ, গ্লানি এক লহমায় নস্যাৎ করে দিয়ে, গোটা স্টেডিয়ামকে প্রায় বাকরুদ্ধ করে যেন ঐশ্বরিক প্রত্যাবর্তন ঘটল মেসির। ১৪ মিনিটের মাথায় মাঝ মাঠ থেকে ব্যানেগার একটা উড়ন্ত পাশ ধরার জন্য যে দুর্দান্ত স্প্রিন্ট টেনে বলটা রিসিভ করল বাঁ পায়ের ঊরুতে সেটা অনেকের কাছেই স্বপ্ন। ওই একইভাবে দৌড়তে দৌড়োতে ঊরু থেকে বলটা বাঁ পায়ের পাতার ওপর নিয়ে দু চার পা আরও দৌড়ে ডান পায়ের কোণাকুণি মর্মভেদী শটে জাল কাঁপিয়ে দিল আর্জেন্টিনার বন্দিত মহানায়ক। অন্যান্য ফুটবলারের চোখের পলক পড়ার সময়টুকুর মধ্যে যে ক্ষিপ্রতায় গোলটা হল সেটা দেখার জন্য আরও অনেক রাত জাগা যেতে পারে। নাইজেরিয়া পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরালেও আর্জেন্টিনা যে ফুটবলটা খেলল তাতে প্রত্যাশিত ভাবে শেষ গোলটা হল মার্কোস রোহোর দুরন্ত ফিনিশে।
এছাড়া সাম্বা ফুটবলের শৈল্পিক ভাঁজে নেইমার, কুটিনহো, পৌলিনহোদের দেশ অবলীলায় সার্বিয়াকে পাশ কাটিয়ে রাউন্ড ১৬ তে মেক্সিকোর মুখোমুখি হতে চলেছে। এমন শ্বাসরুদ্ধকর ফিনিশ বিশ্বমানের ফুটবলাররা করবে তাতে সন্দেহ নেই বটে তবে মনের মধ্যে যেটুকু কুয়াশা জমেছিল সেটা কেটে গিয়ে নির্দ্বিধায় বলতে পারি খেলা জমে উঠেছে........
এছাড়া সাম্বা ফুটবলের শৈল্পিক ভাঁজে নেইমার, কুটিনহো, পৌলিনহোদের দেশ অবলীলায় সার্বিয়াকে পাশ কাটিয়ে রাউন্ড ১৬ তে মেক্সিকোর মুখোমুখি হতে চলেছে। এমন শ্বাসরুদ্ধকর ফিনিশ বিশ্বমানের ফুটবলাররা করবে তাতে সন্দেহ নেই বটে তবে মনের মধ্যে যেটুকু কুয়াশা জমেছিল সেটা কেটে গিয়ে নির্দ্বিধায় বলতে পারি খেলা জমে উঠেছে........
(চলবে)
#fifaworldcup2018 #bengliarticle #football #Molat

No comments:
Post a Comment