সকাল সকাল সংবাদপত্রের পাতা ঘাঁটতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে গেলুম বাপ্। লাইসেন্স প্রাপ্ত মহিলা অটোচালকরা অপেক্ষা করে বসে আছেন তার কারণ পুরুষ অটোচালকরা নাকি উত্তাল ঢেউয়ের মতো করে একের পর এক আপত্তি জানিয়েছেন। অর্থাৎ কিনা মহিলারাও যে অটো নিয়ে ভাড়া খাটতে পারবেন তাতে করে পুরুষ অটোচালকের মধ্যে সাংঘাতিক রকমের একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে । গত ৬ই ফেব্রুয়ারি এই খাস কলকাতার রাস্তায় গোলাপি অটো চলার কথা ছিল। অজানা জ্বরের মতো কোনো এক অযাচিত কারণে সেই বিষয়ে আপাতত স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে। জনৈক রাজনৈতিক নেতা বলছেন মহিলা অটোচালকের নাকি নিরাপত্তা নেই। তারা নাকি অটো নিয়ে বেরোলেই ধর্ষিতা হতে পারেন।
আমার বিনম্র প্রশ্ন আপনার গদির নিরাপত্তা আছে তো ? মানে সামনের ভোটে পাশা যদি উল্টে যায় তখন খাটের তোষকের তলায় আপনাকে যেন মুখ লুকোতে না হয়। আমি তো জানতাম বাকি রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের নিরাপত্তার সমস্যা অনেক কম। অন্তত সরকারের পক্ষ থেকে ঢাক পিটিয়ে যেটা বলা হয় সেটা স্রেফ গুল গোলা জল বুঝি ! কিছু বোঝার আগেই গর্বের ফুটো ফানুশটা এভাবে উড়িয়ে দিলেন মশাই। সমস্যাটা ঠিক কোথায় স্পষ্ট করে বলুন না মাইরি। আমি অবশ্য সম্ভাব্য দু একটা কারণ পেয়েছি।
১. মহিলা চালক দুহাতে হ্যান্ডেল ধরে অটো নিয়ে সিগন্যালে দাঁড়িয়েছে, এটা দেখলেই বোধহয় পুরুষ যাত্রীদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রাটা লাফ দিয়ে শরীর বেয়ে একেবারে মাথায় উঠে চু কিতকিত খেলতে পারে। অথবা পুরুষ অন্তর্বাসের কানাগলিতে ঘন্টাধ্বনি হতে পারে পুনঃপুনঃ রূপে। নিঃসন্দেহে এই দৃশ্য বিদেশী পর্নোগ্রাফির থেকে কম কিছু নয়। এহেন সরাসরি সম্প্রচারে চরম উত্তেজনায় যাত্রীদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধর্ষণ তো এর কাছে শিশু।
২. মহিলা অটোচালকের অটোতে যে মহিলা যাত্রীরাই বেশি চড়বেন এইটা বোধহয় পাঁচিলের ওপর বসা মিনি বেড়ালটাও জানে। এতে পুরুষ অটোচালকদের ব্যবসা চোট খাবে সেটা শুধুমাত্রই ছেলেভোলানো গল্প। আসল কথা হচ্ছে ড্রাইভারের বাঁদিকে যে মহিলা যাত্রীর বসাটা কমে যাবে তাতে করে কনুইয়ের কসরতে ছেদ পড়বে যে। সকাল বিকেল দুবেলা কনুই আন্দোলন করে যে ভেসলিনের কৌটো খালি হয়ে যায় তার কি হবে ? এটাও তো ভেবে দেখতে হবে নাকি !
৩. পশ্চিমবঙ্গে যে কোনো কাজ বরাবরই আমরা একটু রয়ে সয়ে করতে ভালোবাসি। সব কিছুতে অতো তাড়াহুড়ো সয় না বাপু। যেখানে দিল্লী, নয়ডা, গুরুগ্রাম, মুম্বই, সুরাত, বেঙ্গালুরু, ভুবনেশ্বর বা রাঁচির মতো শহরে গোলাপি অটো পক্ষিরাজের মতো উড়ে চলেছে সেখানে আমরাও যদি এখনই ডানা ঝাপটাতে থাকি আমাদের কি মান থাকবে ? পিছিয়ে পড়ার ট্র্যাডিশনটা বজায় রাখতে হবে তো !
৪. আরও শুনলাম যে এই 'লাইনটা' নাকি ভালো নয়। কখন যে কি হয় কেউ জানে না। তাই 'মহিলা অটোচালক' বলে কোনো বিষয়ের অস্তিত্ব থাকা মানে নিজেদের পৌরুষের খোলা বোতামটাকে চ্যালেঞ্জ জানানো। অতএব চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা। গুরুদেব, দয়া করে বলুন এই নাপাক দুনিয়ায় কোন লাইনটা ভালো, আমি সেই লাইনে গিয়ে লাইন দেব, দিব্যি গেলে বলছি।
৫. সর্বোপরি মহিলা প্লেনচালক হতে পারেন, গাড়িচালক হতে পারেন, বাসচালক হতে পারেন, বাইকস্কুটি চালক হতে পারেন কিন্তু অটোর বেলাতেও যে অটোমেটিক ভাবে ব্যাপারটা ঘটবে এমনটা নয়। তিনচাকার যানটি বোধহয় মহিলাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টতার সাথে কোনোরকম খাপ খায় না। অটো মানেই বেশ একটা পুরুষ পুরুষ গোছের ভাব আছে। পিছনে দুটো চাকা আর সামনের একটা চাকা পুরুষ দেহতত্ত্বের সাথে বেশ যায়। সেক্ষেত্রে মহিলাদের বড্ড বেমানান লাগবে কিনা, তাই বোধহয় এমন নিদানের বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
আমার উর্বর মস্তিষ্কে এর চেয়ে বেশি আর কারণ খুঁজে বের করা যায়নি। আপনাদের যদি তেমন কোনো কারণ মাথায় আসে আমাকে নিঃসংকোচে জানাতে পারেন। আপনার নাম কার্টসি সহ যোগ করে দেব। এই লেখা পড়ে আবার মোমবাতি মিছিল শুরু করবেন না যেন। লোডশেডিং হলে সে আলাদা ব্যাপার, তা না হলে খামোখা রাস্তায় ভারী ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয় বাপু। এমনিতেই জ্যাম হচ্ছে রোজ তার ওপর মোমবাতি গুঁজলে আর রক্ষে থাকবে না।
![]() |
| বিন্যাস : নিজস্ব |
#pinkauto #femaleautodriver #Molat



