Friday, December 22, 2017

তিন এক্কে তিন

ছবি : নিজস্ব 
কতটা বয়েস বাড়লে বড় হওয়া যায় অথবা কতটা বড় হলে মানুষ বলা যায় নিজেকে ? এই প্রশ্নের উত্তর আমার মতো হয়ত অনেক বাবা মায়েরাই খুঁজে থাকেন। তাঁরা এর সদুত্তর পেয়েছেন কিনা জানিনা, আমি তো আজ অবধি পাই নি। 

বছর তিনেক আগে যখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছি তখন কোলে ছিল কম্বল আর তুলোয় মোড়া  দিন সাতেকের এক অবোধ টলটলে মুখ। দু চোখে একরাশ মায়া আর বেভুল চাহনিতে হৃদয় গলার স্পষ্ট ঈঙ্গিত দেখেছিলুম। আড়াই কিলো ওজনের খেলনা নিয়ে আমার আর সুতপার চোখেমুখে তখন প্রশস্তির ছাপ। কচি আঙুলে আমাদের আঙুল আঁকড়ে ধরা আর নড়বড়ে ঘাড় ঘুরিয়ে রোদে বৃষ্টিতে কেটে গেছিল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। কত রাত যে বিনিদ্র কেটেছিল দুজনের তার ইয়ত্তা নেই। অনবরত কাঁথা পাল্টানো আর জামাকাপড় নতুন করে পড়ানো যে কত সহস্রবার করেছি আজ তা ভেবে আতঙ্ক লাগে মাঝেমাঝেই। রাত জেগে দুধ গরম করা, চাদরটা লম্বা করে টেনে দেওয়া অথবা আলগোছে সরে যাওয়া মাথার বালিশটাকে ঠিক জায়গায় নিয়ে আসা তখন নিত্যদিনের কাজ ছিল। অধিকাংশ সময়ই অফিসে এসে বেমালুম ঢুলতাম। দিনের বেলায় চোখ খুলে রাখাই বড় দায় হত।

ছবি : নিজস্ব 
শীত গ্রীষ্ম কাটিয়ে যখন টলমলে পায়ে ড্রেসিং টেবিলের কোণ ধরে উঠে দাঁড়াল তখন প্রথম জুরাসিক পার্ক দেখার মতো করে ফ্যামিলি শুদ্ধু সবাই হাঁ করে তাকিয়েছিলাম। ওপরে নিচে একজোড়া ইঁদুর  দাঁতের সারিতে তখন বিশ্বজয়ের উল্লাস। 'ধর ধর' 'পড়ে যাবে' 'লেগে যাবে' ইত্যাদির কলরবে চমকে উঠত পাড়া প্রতিবেশী সকলেই। অবশ্য এর অন্যথা হয় নি আজ অবধিও। দু পায়ে জোর পাবার পর তাকে আর দমিয়ে রাখা যায়নি মোটে। চোখের পলকে জায়গা বদল, জিনিস বদল, এমনকি ফ্ল্যাট বদল পর্যন্ত হয়ে যায় নিমেষে। রবি ঠাকুরের দুটো লাইনকে একেবারে বেদবাক্যের মতো মেনে চলেছে যেন  - "তিনখানা দিলে একখানা রাখে, বাকি কোথা নাহি জানে ; একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে তিনখানা করে আনে"। পুরাতন জিনিস তো রাখছেই না, নতুনগুলোও বেমালুম গায়েব হয়ে যাচ্ছে কোথাও না কোথাও। জিজ্ঞেস করলেই ভুরু কুঁচকে মনে করার ভান করতে থাকে, তারপর চাপ দিলেই বলে, 'আমি এট্টু দেকে আসচি'....বলেই পগার পার। 




ছবি : নিজস্ব 

তিন বছর পেরোনোর পর বাড়িতে কাক চিল বসতে পায় না, এমনি তার গলার আওয়াজ। ভবিষ্যতে মানুষ হবে কিনা বলতে পারি না, তবে ঠিক কি হয়েছে সেটা সচক্ষে দেখতে পাচ্ছি প্রতিদিন। আগামী বছর নতুন স্কুলে যেতে চলেছে। অর্থাৎ বাঁধা গরু ছাড়া পেয়ে মাঠে চরতে বেরোবে। তার অন্য গপ্পো আছে। পরে বলবখন সময় করে। যাইহোক, ওপরের প্রশ্নের উত্তর কেউ যদি জেনে থাকেন, দয়া করে ইনবক্স করবেন, নতুবা জানিনা আগামী দিনে কপালে কি লেখা আছে......... 


পুনশ্চ : ছবিতে নিষ্পাপ চাহনি দেখে এ লেখার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করবেন না যেন.... 



#birthdaystory #bengaliarticle #birthdayarticle #Molat



No comments:

Post a Comment