Wednesday, December 27, 2017

অন্য সত্ত্বা

ছবি : জনৈক পরিবেশক 
শরীরের বয়েস বাড়ে। মনের বয়েস বাড়ে কই ? তাই বোধহয় প্রত্যাশিত ভাবেই কোনো এক পৌষের সন্ধ্যায় অতীতের মাটি খুঁড়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। খোল নলচে বদলে যাওয়া রক্তমাংসের অবয়বগুলো ফিরে আসে দেশের টানে, মাটির টানে, হারিয়ে যাওয়া সময়ের পুনরুত্থানে। এক অন্য সত্ত্বা মূর্ত হয়ে ওঠে ভীষণ চেনা মানুষদের মাঝে। পাক্কা বাইশ বছর পর যাদের দেখলাম তাদের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি বসতুম কাঠের বেঞ্চিতে, ঠেলাঠেলি আর আলটপকা ফক্কুড়িতে দিনবদল ঘটত সেসময়। কখনো মনে হয়নি সেসব নক্ষত্রের মতো দূরে সরে যাবে একদিন, ছুঁয়ে দেখার সুযোগটুকু পর্যন্ত ব্রাত্য থেকে যাবে বছরের পর বছর। 

মুঠোফোনের দৌলতে সে দূরত্ব আজ ঘুচেছে বটে তবু সামনাসামনি ফিরে পাওয়ার মুহূর্তগুলো হয়তো না ছোঁয়াই থেকে যেত যদি না তারা ঝোড়ো হাওয়ার মত আবার এসে পড়ত শহরের বুকে। দিনক্ষণ লগ্ন ঠিক করে যখন ঢাকুরিয়ার তন্দুর পার্কে এসে পৌঁছলাম ততক্ষণে বিবর্ণ স্মৃতির পাতা থেকে উঠে এসেছে অত্যন্ত পরিচিত নামগুলো। সমস্ত মন জুড়ে এক লহমায় তিরতির করে বয়ে গিয়েছিল এক অদম্য ভালোলাগার নদী। যার দুকূল ছাপানো শুধুই মনভালো করা ছবির সারি। আমার ব্যক্তি পরিচয়ের অমূল্য প্রতিচ্ছবি - আমার স্কুলবন্ধুরা। 

ছবি : জনৈক পরিবেশক 
দেশ ভাগ হয়, অস্তিত্ব ভাগ হয় কিন্তু বন্ধুত্বের ভাগ বাঁটোয়ারা হয় না কখনো। অব্যবহার বা অনভ্যাসে ধুলো জমে হয়তো, তাকে একবার ঝেড়ে পুঁছে সাফ করে নিলেই আবার স্বমহিমায় উপস্থিত হয়। যেমনটা আমরা সবাই মিলে করে নিয়েছিলুম গতকাল সন্ধ্যের সাক্ষাতে। আর তাই আমাদের গল্পের গাড়ি থামতে চায়নি, অতীতের ছায়াসরণি বেয়ে নিজের খেয়ালে এগিয়ে চলেছিল তরতর করে। রেস্তোরাঁর পরিবেশক নির্বাক দাঁড়িয়েছিল কতক্ষন মনে নেই। বেবাক ভুলে গিয়েছিলাম খাবারের অর্ডার করতে। আর আমাদের সম্বিৎ ফিরছিল যেন প্রায় বছর ঘোরার পর। 


বছর ! হ্যাঁ, বছর তো বটেই। বাইশ বছরের উপন্যাস এক সাক্ষাতে শেষ হবার ছিল না, হয়ওনি। তবু আমরা সাপ্টে সামলে যতটা পারলুম, মুহূর্তদের দুহাত দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করলুম। পিছুটানের তঞ্চকতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বেহিসেবি বসে রইলুম ঘন্টার পর ঘন্টা। খিল্লি আর হুল্লোড়ে ভেসে বেড়ালুম কচিবেলার হাত ধরে। 

ছবি : অনুরাধা 
ফিরে আসতে মন চায়নি, রেস্তোরাঁর বাইরে পা রাখার পর সবারই মুখ ছোট হয়ে গিয়েছিল প্রায়। আবার কবে এমনি করে জমায়েতের আসর বসবে কেউ জানিনা। এমন দুর্নিবার ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরোবার ইচ্ছে ছিল না কারোরই এটুকু বাজি রেখে বলতে পারি। হয়তো কোনো একদিন এমনি করে আরও একবার জুটিয়ে নেব আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদটুকু। হয়তো কোনো একদিন আবার এই শহরে স্বপ্নপূরণের গান তৈরী হবে। হয়তো কোন একদিন আবার একত্রে উষ্ণতার আবেশ ছুঁয়ে নেব। অপেক্ষায় প্রহর গুনছি আমরা সবাই..........হয়তো কোনো একদিন........

#gettogether #friendsmeet #reunion #bengaliarticle

Friday, December 22, 2017

তিন এক্কে তিন

ছবি : নিজস্ব 
কতটা বয়েস বাড়লে বড় হওয়া যায় অথবা কতটা বড় হলে মানুষ বলা যায় নিজেকে ? এই প্রশ্নের উত্তর আমার মতো হয়ত অনেক বাবা মায়েরাই খুঁজে থাকেন। তাঁরা এর সদুত্তর পেয়েছেন কিনা জানিনা, আমি তো আজ অবধি পাই নি। 

বছর তিনেক আগে যখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছি তখন কোলে ছিল কম্বল আর তুলোয় মোড়া  দিন সাতেকের এক অবোধ টলটলে মুখ। দু চোখে একরাশ মায়া আর বেভুল চাহনিতে হৃদয় গলার স্পষ্ট ঈঙ্গিত দেখেছিলুম। আড়াই কিলো ওজনের খেলনা নিয়ে আমার আর সুতপার চোখেমুখে তখন প্রশস্তির ছাপ। কচি আঙুলে আমাদের আঙুল আঁকড়ে ধরা আর নড়বড়ে ঘাড় ঘুরিয়ে রোদে বৃষ্টিতে কেটে গেছিল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। কত রাত যে বিনিদ্র কেটেছিল দুজনের তার ইয়ত্তা নেই। অনবরত কাঁথা পাল্টানো আর জামাকাপড় নতুন করে পড়ানো যে কত সহস্রবার করেছি আজ তা ভেবে আতঙ্ক লাগে মাঝেমাঝেই। রাত জেগে দুধ গরম করা, চাদরটা লম্বা করে টেনে দেওয়া অথবা আলগোছে সরে যাওয়া মাথার বালিশটাকে ঠিক জায়গায় নিয়ে আসা তখন নিত্যদিনের কাজ ছিল। অধিকাংশ সময়ই অফিসে এসে বেমালুম ঢুলতাম। দিনের বেলায় চোখ খুলে রাখাই বড় দায় হত।

ছবি : নিজস্ব 
শীত গ্রীষ্ম কাটিয়ে যখন টলমলে পায়ে ড্রেসিং টেবিলের কোণ ধরে উঠে দাঁড়াল তখন প্রথম জুরাসিক পার্ক দেখার মতো করে ফ্যামিলি শুদ্ধু সবাই হাঁ করে তাকিয়েছিলাম। ওপরে নিচে একজোড়া ইঁদুর  দাঁতের সারিতে তখন বিশ্বজয়ের উল্লাস। 'ধর ধর' 'পড়ে যাবে' 'লেগে যাবে' ইত্যাদির কলরবে চমকে উঠত পাড়া প্রতিবেশী সকলেই। অবশ্য এর অন্যথা হয় নি আজ অবধিও। দু পায়ে জোর পাবার পর তাকে আর দমিয়ে রাখা যায়নি মোটে। চোখের পলকে জায়গা বদল, জিনিস বদল, এমনকি ফ্ল্যাট বদল পর্যন্ত হয়ে যায় নিমেষে। রবি ঠাকুরের দুটো লাইনকে একেবারে বেদবাক্যের মতো মেনে চলেছে যেন  - "তিনখানা দিলে একখানা রাখে, বাকি কোথা নাহি জানে ; একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে তিনখানা করে আনে"। পুরাতন জিনিস তো রাখছেই না, নতুনগুলোও বেমালুম গায়েব হয়ে যাচ্ছে কোথাও না কোথাও। জিজ্ঞেস করলেই ভুরু কুঁচকে মনে করার ভান করতে থাকে, তারপর চাপ দিলেই বলে, 'আমি এট্টু দেকে আসচি'....বলেই পগার পার। 




ছবি : নিজস্ব 

তিন বছর পেরোনোর পর বাড়িতে কাক চিল বসতে পায় না, এমনি তার গলার আওয়াজ। ভবিষ্যতে মানুষ হবে কিনা বলতে পারি না, তবে ঠিক কি হয়েছে সেটা সচক্ষে দেখতে পাচ্ছি প্রতিদিন। আগামী বছর নতুন স্কুলে যেতে চলেছে। অর্থাৎ বাঁধা গরু ছাড়া পেয়ে মাঠে চরতে বেরোবে। তার অন্য গপ্পো আছে। পরে বলবখন সময় করে। যাইহোক, ওপরের প্রশ্নের উত্তর কেউ যদি জেনে থাকেন, দয়া করে ইনবক্স করবেন, নতুবা জানিনা আগামী দিনে কপালে কি লেখা আছে......... 


পুনশ্চ : ছবিতে নিষ্পাপ চাহনি দেখে এ লেখার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করবেন না যেন.... 



#birthdaystory #bengaliarticle #birthdayarticle #Molat



Thursday, December 14, 2017

অনুপদ্য - ২১

চিত্র : সৌম্য 
                                                                                                    

















#bengalishortpoems #mawphlang #meghalaya #molat

Saturday, December 9, 2017

অনুপদ্য - ২০

হোক না শীত তবুও খানিক অন্যরকম হল
আকাশ জুড়ে মেঘ জমেছে, আবার বৃষ্টি এল...
কোথাও শহর বরফ ঢাকে পশম জড়ায় ঘুম
আমার শহর মেঘের বাড়ি নির্বাক নিঃঝুম.....















#bengalishortpoems #raininbengal #molat