![]() |
| ছবি : জনৈক পরিবেশক |
শরীরের বয়েস বাড়ে। মনের বয়েস বাড়ে কই ? তাই বোধহয় প্রত্যাশিত ভাবেই কোনো এক পৌষের সন্ধ্যায় অতীতের মাটি খুঁড়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। খোল নলচে বদলে যাওয়া রক্তমাংসের অবয়বগুলো ফিরে আসে দেশের টানে, মাটির টানে, হারিয়ে যাওয়া সময়ের পুনরুত্থানে। এক অন্য সত্ত্বা মূর্ত হয়ে ওঠে ভীষণ চেনা মানুষদের মাঝে। পাক্কা বাইশ বছর পর যাদের দেখলাম তাদের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি বসতুম কাঠের বেঞ্চিতে, ঠেলাঠেলি আর আলটপকা ফক্কুড়িতে দিনবদল ঘটত সেসময়। কখনো মনে হয়নি সেসব নক্ষত্রের মতো দূরে সরে যাবে একদিন, ছুঁয়ে দেখার সুযোগটুকু পর্যন্ত ব্রাত্য থেকে যাবে বছরের পর বছর।
মুঠোফোনের দৌলতে সে দূরত্ব আজ ঘুচেছে বটে তবু সামনাসামনি ফিরে পাওয়ার মুহূর্তগুলো হয়তো না ছোঁয়াই থেকে যেত যদি না তারা ঝোড়ো হাওয়ার মত আবার এসে পড়ত শহরের বুকে। দিনক্ষণ লগ্ন ঠিক করে যখন ঢাকুরিয়ার তন্দুর পার্কে এসে পৌঁছলাম ততক্ষণে বিবর্ণ স্মৃতির পাতা থেকে উঠে এসেছে অত্যন্ত পরিচিত নামগুলো। সমস্ত মন জুড়ে এক লহমায় তিরতির করে বয়ে গিয়েছিল এক অদম্য ভালোলাগার নদী। যার দুকূল ছাপানো শুধুই মনভালো করা ছবির সারি। আমার ব্যক্তি পরিচয়ের অমূল্য প্রতিচ্ছবি - আমার স্কুলবন্ধুরা।
![]() |
| ছবি : জনৈক পরিবেশক |
দেশ ভাগ হয়, অস্তিত্ব ভাগ হয় কিন্তু বন্ধুত্বের ভাগ বাঁটোয়ারা হয় না কখনো। অব্যবহার বা অনভ্যাসে ধুলো জমে হয়তো, তাকে একবার ঝেড়ে পুঁছে সাফ করে নিলেই আবার স্বমহিমায় উপস্থিত হয়। যেমনটা আমরা সবাই মিলে করে নিয়েছিলুম গতকাল সন্ধ্যের সাক্ষাতে। আর তাই আমাদের গল্পের গাড়ি থামতে চায়নি, অতীতের ছায়াসরণি বেয়ে নিজের খেয়ালে এগিয়ে চলেছিল তরতর করে। রেস্তোরাঁর পরিবেশক নির্বাক দাঁড়িয়েছিল কতক্ষন মনে নেই। বেবাক ভুলে গিয়েছিলাম খাবারের অর্ডার করতে। আর আমাদের সম্বিৎ ফিরছিল যেন প্রায় বছর ঘোরার পর।
বছর ! হ্যাঁ, বছর তো বটেই। বাইশ বছরের উপন্যাস এক সাক্ষাতে শেষ হবার ছিল না, হয়ওনি। তবু আমরা সাপ্টে সামলে যতটা পারলুম, মুহূর্তদের দুহাত দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করলুম। পিছুটানের তঞ্চকতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বেহিসেবি বসে রইলুম ঘন্টার পর ঘন্টা। খিল্লি আর হুল্লোড়ে ভেসে বেড়ালুম কচিবেলার হাত ধরে।
![]() |
| ছবি : অনুরাধা |
ফিরে আসতে মন চায়নি, রেস্তোরাঁর বাইরে পা রাখার পর সবারই মুখ ছোট হয়ে গিয়েছিল প্রায়। আবার কবে এমনি করে জমায়েতের আসর বসবে কেউ জানিনা। এমন দুর্নিবার ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরোবার ইচ্ছে ছিল না কারোরই এটুকু বাজি রেখে বলতে পারি। হয়তো কোনো একদিন এমনি করে আরও একবার জুটিয়ে নেব আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদটুকু। হয়তো কোনো একদিন আবার এই শহরে স্বপ্নপূরণের গান তৈরী হবে। হয়তো কোন একদিন আবার একত্রে উষ্ণতার আবেশ ছুঁয়ে নেব। অপেক্ষায় প্রহর গুনছি আমরা সবাই..........হয়তো কোনো একদিন........
#gettogether #friendsmeet #reunion #bengaliarticle







