Tuesday, January 24, 2017

২৬এর কবিতা

অপ্রতিহতরা আন্দোলনের পথে হাঁটে
রেকাবির ওপর সাজানো থাকে গারদ
ইনকিলাবের স্লোগান ছিল মুখেমুখে
বিপ্লবের আঁচে ঘেমে উঠেছিল পারদ.........

স্মরণীয়রা, রক্তে ভিজেছিল......
স্বাধীনতার, পতাকায় লেখা নাম
যে পথে যত শহীদ গিয়েছে হেঁটে
সে পথের ধুলোয় লক্ষকোটি প্রণাম........

এ পৃথিবী রাখবে তাঁদের মনে
এ পৃথিবীর সকল কাজের মাঝে
বিপ্লব মুছে যায় না কখনো
বিপ্লব এখনো বুকের ভিতর বাঁচে..........


ছবি : গুগল ;  বিন্যাস : নিজস্ব  















#republicday #bengalipoem #26thjanuary #tribute

Saturday, January 7, 2017

বন্ধু চল্

ইদানীং যেন শীতঘুম ভাঙতেই চায় না। চোখ খোলার বেশ কিছুক্ষন পরেও লেপ কম্বলের অন্তরাল যেন আর ঘন করে জাপ্টে জড়িয়ে ধরতে চায়। সে দুর্বার আকর্ষণের মায়াজাল ছিঁড়ে যখন বিছানা ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করি তখন মনে হয় আজকের দিনটা নাহয় থাকুক এক কোনে পড়ে, আজ নাহয় নাইবা করলাম কিছু। আজ বরং নিজের সাথে নিজের মত করে দু চার কথা বলি, নিজের মত করে হেঁটে আসি দু চার কোশ পথ। উত্তুরে হাওয়ায় ঝরা পাতার মত রাস্তা জুড়ে শুয়ে থাকি আর শরীরের ওপর আঁকা হয়ে যাক পৌষের পটচিত্র। কানে ভেসে আসুক নবান্নের মর্মর ধ্বনি, তলিয়ে যাই কোনো এক বেনামী দুপুরে, নরম রোদের হাতছানিতে.............

গত সপ্তাহে বছরের শেষ দিনে এমনটা হওয়াতে গোঁজ মেরে বসেছিলুম সকালবেলায়। টাটকা ফুরফুরে হাওয়ার মত ফোন এসেছিল এমন একজনের কাছ থেকে যার সাথে ছোটবেলার অগুন্তি মুহূর্ত চোখ বন্ধ করলে চলচ্চিত্রের মত দেখতে পাই আজও। ছেলেবেলার অসংখ্য বেপরোয়া সময়ের সাক্ষী, সমস্ত বিচিত্র রকম কর্মকাণ্ডের দোসর ও আমার অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু - সৌম্য। বলতে বাধা নেই কালের ঘুর্ণিঝড়ে বাঁধা পড়ে আজকাল আমাদের দেখাসাক্ষাৎ প্রায় কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। তবে ফোন বা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে যোগাযোগটা এখনো অটুট যদিও। অথচ একসময়, এই আমরাই সারা শহর জুড়ে তুর্কি নাচন করতাম। বেহিসেবী ছেলে ছোকরার মতো উড়ে বেড়াতাম টালিগঞ্জ থেকে ধর্মতলা - চাঁদনী চক পর্যন্ত। বিভিন্ন সিনেমা হলে নিয়মিত এটেনডেন্স দেওয়া, পুজোর ভিড়ে গুঁতোগুঁতি করে ঠাকুর দেখা, বইমেলায় যথেচ্ছ বই কেনা, মাঝেমাঝেই এদিক ওদিক হারিয়ে যাওয়া, স্কুলের নানারকম কেলেঙ্কারিতে হাতযশ পাকানো, এ সমস্তই আমাদের রোজনামচা ছিল সেসময়। আজ সময়ের পলি পড়ে গিয়ে কেমন যেন আচমকা আমরা সকলেই স্থবির হয়ে গেছি। গতানুগতিক জীবনযাত্রার ছাঁচে ঢেলে নিয়ে পুরোনো 'আমি'টাকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়ে নতুন 'আমি'র আবির্ভাব ঘটেছে যেন আমাদের। তাই ফোন পেয়ে যখন জানতে পারলাম উল্টোদিকের অবস্থাও তথৈবচ তখন একেবারে গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম পুরোনো 'আমি'র সন্ধানে। প্ল্যান করতে দুমিনিটের বেশি লাগলো না। আগে আগে যেমন সূক্ষ্ম অছিলায় স্কুল, কলেজ, লেকচার বাঙ্ক করতাম, ঠিক তেমনি করে চট্জলদি হিসেব করে নিলাম দুজনের কেউই সেদিন আর অফিসমুখ হবো না। রাজারহাট আর কসবার মায়া ত্যাগ করে বিবাগী হব যেদিকে দুচোখ যায়। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। দুগ্গা দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়লুম বন্ধুর বাইকে সওয়ারি হয়ে। মনে মনে ঠিক করে নিলুম, আগে যে যে জায়গায় নিয়মিত যেতুম দুজনে সেইসব জায়গায় আরেকবার করে চক্কর দিয়ে আসবো। 

সাদার্ন এভিনিউর মুখটায় আসা মাত্রই চোখের সামনে ভেসে উঠলো স্কুলের মেন্ বিল্ডিংটা, বর্তমানে যার ধ্বংসস্তূপের ওপর একটু একটু করে বেড়ে উঠছে নব নালন্দার নব পরিকাঠামো, যার ইঙ্গিত আমার 'নব নালন্দা ডট ইস্কুল' নামক লেখাটায় দিয়েছি এর আগে। আশপাশের বাড়ি ঘরগুলো আর উল্টোদিকের বুলেভার্ডটা যেমনটা রেখে গিয়েছিলুম ঠিক তেমনি রয়ে গেছে। ঝপ করে ফিরে গেলুম বছর কুড়ি আগে। সাদা শার্ট, ধূসর রঙের ট্রাউজার আর লাল টাইএর কচিবেলা যেন স্পষ্ট দেখতে পেলুম চোখের সামনে। বেল পড়ার শব্দ শুনতে পেলুম বুকের ভিতর। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে দেখলুম সেও নিবিষ্ট মনে বুলেভার্ডটার দিকে চেয়ে আছে।
বিড়বিড় করে বলল, 'এই একফালি মাঠটাতে কত দৌড়াদৌড়ি করেছি একসময়, তাই না বল' ?
আমি ঘাড় নেড়ে সায় দিলুম।
সে বললে, 'আমাদের কুড়ি বছরের পুরোনো সেই ধুলোগুলো খুঁজলে এখনো পাওয়া যাবে.......না রে' ?
আমি কোনো কথা বলতে পারলুম না, মনের মধ্যে ধুলোঝড়ের পূর্বাভাস টের পেলুম। সে ঝড়ের ঝাপটায় পাছে চোখ ঝাপসা হয় সেই ভয় অস্ফুটে বললুম, 'চল্............... কবীর রোডে যে নতুন ব্রাঞ্চটা খুলেছে সেইটে একবার দেখে আসি'।

কবীর রোডের ব্রাঞ্চ স্বাভাবিকভাবেই শীতের ছুটিতে বন্ধ, তাই বাইরে থেকে একবার চোখের দেখা দেখে নিয়ে লেকের দিকে উড়ে চললুম। যাঁরা দক্ষিণ কলকাতা নিবাসী তাঁরা জানবেন দুপুর বিকেলের দিকে লেকের মহিমাই আলাদা। রবীন্দ্র সরোবর স্টেশন থেকে পূর্ব দিক বরাবর লেক গার্ডেন্স অবধি বিস্তৃত টলটলে হ্রদ আর দুপাশে চিরহরিৎ সীমাহীন সবুজের সারি, মন আপনিই জুড়িয়ে আসে। শান্ত, নিরিবিলি, নির্ঝঞ্ঝাট স্পটের যদি খোঁজ করেন কেউ, লেকের থেকে উত্তম স্থান আর কিছু হতে পারে না, এ আমি হলপ করে বলতে পারি। আমাদের কাছে অবশ্যি লেক জড়িত সুখস্মৃতি বড়ই চিত্তাকর্ষক। মনে পড়ে, বেশ কয়েক দফা মেনকায় সিনেমা দেখে এসে লেকে প্রচুর সময় কাটিয়েছি। সেসব দিনে ঘটি গরম ও ঝালমুড়ির স্বাদ যেন অমৃতকেও হার মানাতো। হাবিজাবি কথা, অকারণে হাহাহিহি হাসি আর জলের দিকে চোখ রেখে সময় পেরিয়ে যেত হুশ করে। প্রচুর আড্ডা দিয়েও যেন হুঁশ ফিরত না কারও। সেদিন লেকে গিয়ে চমকে উঠেছিলাম দুজনে। আগের থেকে অনেক সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজানো। কয়েক হাত অন্তর অন্তর বসার সিট ও মেঘছোঁয়া বট, অশ্বত্থ, মেহগনির বৈভবে ছোটখাট উপবন বললে খুব একটা ভুল হবে না। মাঝের সরু রাস্তা ধরে মেনকা সিনেমার দিকে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে গেল এই মেনকায় একবার 'মোহরা' বলে একটি ছবি এসেছিল। সে সময় এই ছবিটি  সুপার ডুপার হিট । বলাই বাহুল্য 'মোহরা' নিয়ে আমাদের উত্তেজনাও ছিল তুঙ্গে। বেশ মনে আছে অক্ষয় কুমার রবিনা ট্যান্ডনের 'টিপ টিপ বরষা পানি' আমাদের সদ্য কৈশোর পেরোনো হৃদয়ে চরম হিল্লোল তুলেছিল সেসময়। তখন মল - মাল্টিপ্লেক্সের বিন্দুমাত্র চিহ্ন ছিল না কোথাও। মোবাইল ঘেঁটে বা ইন্টারনেট সার্চ করে টিকিট কাটা প্রায় চাঁদে যাওয়ার সামিল ছিল। ছবি দেখার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার উন্মাদনা যে কি, সে আমরা বিলক্ষণ জানতাম। আর তাই শুধু মেনকা কেন, নবিনা, প্রিয়া, বসুশ্রী, উজ্জ্বলা, পূর্ণ, ইন্দিরা, তার সাথে মধ্য কলকাতার মেট্রো, গ্লোব, চ্যাপ্লিন, সোসাইটি, রক্সি, এলিট এসমস্ত হলে যাতায়াত যেন পাড়ার গলিতে পায়চারি করার মত ছিল আমাদের দুজনের। আজ ভাবতে অবাক লাগে এই সব হলের অধিকাংশই এখন বন্ধ। মুষ্টিমেয় কিছু সিঙ্গল স্ক্রীন এখন মুছে যাওয়া ধূসর স্মৃতি বহন করে চলেছে নিঃশব্দে। 

লেক থেকে বেরিয়ে ভাবছিলাম লাঞ্চটা সেরে নেব 'ব্যানানা লিফ' রেস্টুরেন্টে। কয়েক যুগ যাওয়া হয়নি সেখানে। সেকথা বলব বলে সৌম্যর মুখের দিকে তাকাতেই সে বলে উঠলো, 'চল্, আজ ব্যানানা লিফে খাব'..............। ভেবে আশ্চর্য হলুম যে হালফিলে দেখাসাক্ষাৎ হয় না বটে, তবে আমাদের পছন্দের হেরফের ঘটেনি মোটেও। মনে পড়ে গেলো স্কুলে বা স্কুলের বাইরে সামান্য চোখের ইশারায় আমরা কত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতুম নিমেষে। তার ফল অধিকাংশ সময়ই খুব একটা সুখের হতো না। মনে আছে তখন সেভেন কি এইটে পড়ি। একবার স্কুলে আমাদের গার্জেন কল হয়েছিল, একসাথে। ক্লাস টিচার দুজনের মায়েদের মধুর আপ্যায়ন করে বসিয়ে পুঙ্খাণুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করেছিলেন ঠিক কেমন করে আমরা ক্লাস ডিস্টার্ব করি। সেবার বাড়ি ফিরে দুজনেরই পিঠ লাল করে দিয়েছিলেন মায়েরা। তবে এমন গার্জেন কল প্রায় সবারই হতো ঘুরেফিরে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাঁদরামো করাটা যেন নেশার মতো পেয়ে বসেছিল ক্লাসের প্রায় সবারই। সে প্রসঙ্গ অন্য আরেকদিন তুলব নাহয়। 

রেস্টুরেন্টে খেয়ে সোজা চলে গিয়েছিলুম ময়দানে। একটা অশ্বত্থ গাছের তলায় বাইক ষ্ট্যান্ড করে মাঠের ধরে ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছিলাম প্রায় সোয়া একঘন্টা। ছোটবেলার কথা মনে করে আবেগে গলা বুজে এসেছিলো যেমন আবার বেশ কিছু মজার ঘটনা মনে করে খিল্লিও করেছি দারুন। সেসমস্ত কথা নতুন করে লিখে আর লম্বা করবো না বেশি, তবে দুজনেই পণ করেছি, যে এবার থেকে মাঝে মাঝেই এমন নিরুদ্দেশের পথে বেরিয়ে পড়ব হুড়মুড়িয়ে। তাতে করে আর যাই হোক বুকের ভিতর অক্সিজেনের যোগানটা সঠিক অনুপাতে হবে, এ ব্যাপারে আমরা একশভাগ নিশ্চিত। সর্বোপরি যাঁরা পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে পারেন না বা সুযোগ খুঁজে পান না, তাঁদের বলি, একদিন এভাবেই এবসেন্ট হয়ে যান ডেইলি রুটিন থেকে। সবাইকে একসাথে না পেলেও দুএকজনকে জোগাড় করুন, প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিন আর হুল্লোড় করে কাটান গোটা দিনটা। বুক ঠুকে বলতে পারি আমাদের মতো আপনিও ছোটবেলার খাঁটি  'আমি'টাকে খুঁজে পাবেন আবার........... নিঃসন্দেহে ..................

পুনশ্চ : পরেরবার যাঁরা বিবাগী হতে রাজি তাঁরা আমাদের যোগাযোগ করতে পারেন। খিল্লি গ্যারেন্টীড। 

ছবি : নিজস্ব 

#bengaliarticles #bengaliwriteups #nostalgia #bestfriends #reunion #schoolfriends #oldmemories #friendsmeet