চৈতালীর তির্যক মন্তব্যের উত্তর না দিয়ে দেবাঞ্জন চলে যান শোবার ঘরে। মনের মধ্যে একরাশ দ্বন্দ্ব সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ওঠানামা করতে থাকে। 'ভবিষ্যৎ' কথাটা কাঁটার মতো বিঁধে থাকে কোনো এক গহীন স্থানে ।
পরদিন সকালে অভ্যাসমতো অফিস বেরোলেন দেবাঞ্জন। চোখে সানগ্লাস। নতুন চশমাটা ব্যাগে নিয়ে নিয়েছেন। নানারকম চিন্তায় অন্যমনস্ক ভাবে নিজের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যান। পথচলতি দু চারজন চেনা মানুষের 'কেমন আছেন' , 'গুড মর্নিং' , ইত্যাদি কথায় কর্ণপাত পর্যন্ত করেন না। অফিসে পৌঁছে নিজের কিউবিক্যলে গুছিয়ে বসেন। সামান্য ইতস্তত করে নতুন চশমাটা বাক্স থেকে বের করে পড়ে নেন। বাকি কলিগদের নজর এড়ায় না সেটা। দেবাঞ্জনের নতুন অবয়বে হৈ হৈ করে ওঠে গোটা অফিস। সবাই মিলে ঘিরে ধরে তাঁকে। 'দারুন লাগছে', 'চোখ আছে বটে' , 'কোথা থেকে কিনলে', 'কত দাম নিল', ইত্যাদি সমস্ত কথাবার্তায় দেবাঞ্জনের মনের গুরুভার লাঘব হয় কিছুটা। দেবাঞ্জনও যতটা সম্ভব ছোট করে বর্ণনা করেন কেমন করে এই বিরল জিনিসটি তাঁর হাতে এসে পড়লো। স্বাভাবিকভাবেই গতরাতের ঘটনাও কিছুটা ফিকে হয়ে আসে আপনিই । অসোয়াস্তির কালো মেঘ কেটে যেতে থাকে একটু একটু করে। দেবাঞ্জন মনে মনে মেনে নেন ওটা হয়তো দেখারই ভুল ছিল। সমস্ত কিছুই নিজস্ব নিয়মে ফিরে আসছিলো একটু একটু করে। কিন্তু বিধাতা বোধহয় দেবাঞ্জনকে নিয়ে অন্য কোনো পরিকল্পনা করেছিলেন। ফলে তাঁর স্বস্তির কাল খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। সারাদিনের রুটিনমাফিক সমস্ত কাজই করলেন দেবাঞ্জন। সামনে জেনারেল মিটিং আসছে, মার্কেটিংয়ের প্রেজেন্টেশন তৈরির কাজটা প্রায় হয়ে এসেছে। আর দু একটা ডেটাশিট পেয়ে গেলেই শেষ করে ফেলবেন। সেটা নাহয় কালই দেখা যাবে এই ভেবে ডেস্কটপের শাট ডাউন বাটন টা ক্লিক করলেন। স্ক্রিনের আলো ক্রমশ আবছা হতে হতে মিলিয়ে গিয়ে অন্ধকার হয়ে গেলো।
অকস্মাৎ, এক মায়াবী আলোর ঝলকানিতে সামনের স্ক্রিনটা ফের সচল হয়ে উঠলো। দেবাঞ্জন আঁতকে উঠলেন। ভালো করে দেখতে লাগলেন স্ক্রীনটাকে। স্ক্রিনের ওপর ফুটে উঠেছে আগুনের লেলিহান শিখা। সে শিখার সর্বগ্রাসী জিহ্বা স্ক্রিনের চারিদিকে এঁকে বেঁকে ঘুরতে লাগলো ভয়ঙ্কর লালসায়। ভয়ে কাঠ হয়ে গেলেন দেবাঞ্জন। স্পষ্ট দেখতে পেলেন একটা পাঁচতলা বিল্ডিংয়ে আগুন জ্বলছে। ভারী চেনা লাগলো বিল্ডিংটাকে, কিন্তু মনে করতে পারলেন না কোথায় দেখেছেন। এ দিক ওদিক তাকিয়ে বাকি কলিগদের লক্ষ্য করলেন দেবাঞ্জন। বুঝতে পারলেন ওর স্ক্রিনের দিকে কেউই নজর করছে না তেমন। অজান্তেই গলা শুকিয়ে এলো। চশমাটা সামান্য নাকের নিচে নামিয়ে খালি চোখে দেখার চেষ্টা করলেন স্ক্রিনটা। অবিশ্বাস্য ! স্ক্রিনটা ঘন কালো, নিরীহ বোকা বাক্সের মতো তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে, আগুনের ছিঁটেফোঁটা নেই কোনো জায়গাতে। চশমাটা উঠিয়ে নিতেই আবার আগুনের তুর্কি নাচন প্রত্যক্ষ করলেন। তাড়াতাড়ি করে ডেস্কের ওপর থেকে ব্যাগটা কাঁধে নিয়েই ছুটে চলে গেলেন লিফটের দিকে। অফিস থেকে বেরিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়লেন মেট্রো স্টেশনের দিকে। মেট্রোতে উঠে এক কোনায় দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলেন সমানে। ডিসেম্বরের হিমেল সন্ধ্যাতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখাচিত্র ফুটে উঠলো।
বাড়ি ফিরে চৈতালীর সাথে বেশি কথা বললেন না। চৈতালী ভারী অবাক হলেন। সচরাচর এমনটা হয় না, ডিনার টেবিলে সারাদিনের আলোচনা চলে সুখী দম্পতির মধ্যে। আজ সেখানে দেবাঞ্জন একটাও কথা বললেন না, স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। কোনোমতে দুটো রুটি নাকেমুখে গুঁজে সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় চলে এলেন। বুকের মধ্যে হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি যেন রাতের নিস্তব্ধতায় বেশি করে শুনতে পেলেন নিজে। বারে বারে স্ক্রিনের ছবিটা ফুটে উঠছিলো চোখের সামনে। এরকমটা কেন দেখলেন আবার ? তাহলে কি গতরাত্রে আয়নায় যা দেখেছিলেন সেটাও সত্যি ? তবে কি কোথাও আগুন লাগবে আজ ? বিল্ডিংটা যে ভারী চেনা চেনা ঠেকছে, কোথায় যেন দেখেছেন.........কোথায় যেন...........ভাবতে ভাবতেই ড্রয়িং রুমে ফোন বেজে উঠলো তারস্বরে। চমকে উঠলেন দেবাঞ্জন। কান পেতে শুনলেন চৈতালী ফোনটা ধরেছে। কিছুক্ষন কথা বলার পর রিসিভার নামিয়ে রেখে দৌড়োতে দৌড়োতে চৈতালী বারান্দায় এসে বললেন, 'এই শোনো, বিভাস ফোন করেছিল, বলল তোমাদের অফিসে নাকি আগুন লেগেছে, দুটো ফ্লোর পুড়ে ছাই একেবারে, তোমায় ফোন করতে বলল তাড়াতাড়ি'।
ফস করে সিগারেটটা হাত থেকে পড়ে গেলো দেবাঞ্জনের। এক ঝটকায় মনে পড়ে গেলো কম্পিউটারের স্ক্রিনে যে বিল্ডিংটা দেখেছিলেন সেটা তাঁর অফিসেরই উত্তর দিক, ওদিকটা খুব একটা যাওয়া হয় না বলেই স্পষ্ট মনে পড়ছিলো না। নিমেষে দেবাঞ্জনের মুখটা রক্তশূন্য হয়ে গেলো ভয়ে। কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়লেন বারান্দার ধাপিতে।
ফস করে সিগারেটটা হাত থেকে পড়ে গেলো দেবাঞ্জনের। এক ঝটকায় মনে পড়ে গেলো কম্পিউটারের স্ক্রিনে যে বিল্ডিংটা দেখেছিলেন সেটা তাঁর অফিসেরই উত্তর দিক, ওদিকটা খুব একটা যাওয়া হয় না বলেই স্পষ্ট মনে পড়ছিলো না। নিমেষে দেবাঞ্জনের মুখটা রক্তশূন্য হয়ে গেলো ভয়ে। কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়লেন বারান্দার ধাপিতে।
চৈতালী চেঁচিয়ে উঠলেন, 'কি হলো' ?
"ভবিষ্যৎ !.......ভবিষ্যৎ" !, ভয়ার্ত গলায় ঘড়ঘড় করতে লাগলেন দেবাঞ্জন।
'কিসের ভবিষ্যৎ ? কি বলছ কি ?' চৈতালী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন দেবাঞ্জনের দিকে। দেবাঞ্জন কাঁপা কাঁপা হাত তুলে তর্জনী দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে ইঙ্গিত করলেন। চৈতালী মুখ ঘুরিয়ে দেখলেন ড্রেসিং টেবিলের ওপর দেবাঞ্জনের নতুন চশমাটা রাখা আছে উপুড় করে। টেবিলের ওপর থেকে পড়া সাদা আলোতে যেন তার ঔজ্বল্য বেড়ে গিয়েছে আরও কয়েকগুন । সে চশমাটা যেন উপুড় হয়েই তাকিয়ে রয়েছে তাদের দুজনের দিকে। চশমার লেন্স দিয়ে যেন নিক্ষেপিত হচ্ছে কোনো এক পৈশাচিক হাহাকারের জ্বলন্ত দৃষ্টি।
সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারলেন না দেবাঞ্জন। সমস্ত ঘটনা শুনে, চৈতালী কাকতলীয় বলে উড়িয়ে দিলেও নিজেও মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারলেন না পুরোপুরি। একটা সূক্ষ্ম ধন্দ রয়ে গেলো তাঁর মনেও। ইতিমধ্যে দেবাঞ্জনের অফিসে অস্থায়ী কর্মবিরতি ঘোষণা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে কর্মচারীদের অনুরোধ করা হয়েছে যে আগামী নোটিস না পাওয়া অবধি কেউ যেন অফিসের চৌহদ্দির মধ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা না করেন।
পরের দিন দেবাঞ্জন ঠিক করে নিলেন যেমন করেই হোক একবার বৌবাজারের সেই দোকানে যোগাযোগ করতে হবে। আসল সত্যটা কি, সেটা খুঁজে বার না করা অবধি তিনি শান্তি পাবেন না। টেবিল, আলমারি তন্নতন্ন করে ফেললেন দেবাঞ্জন কিন্তু কোথাও চশমার রিসিটটা খুঁজে পেলেন না। বৃদ্ধ দোকানির ফোন নম্বরটা যে ওতেই লেখা ছিল। চৈতালী বারে বারে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন যে এই সমস্ত ঘটনায় অলৌকিক কিছু খুঁজে বেড়ানো সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়, কিন্তু দেবাঞ্জন তাঁর কোনো কথাই শুনতে রাজি হলেন না। ভবিষ্যতের বিভীষিকা দেবাঞ্জনকে ক্রমে ক্রমে গ্রাস করে ফেলতে লাগলো। এক অজানা নেশায় মত্ত হয়ে উঠলেন যেন। কম্পিত কণ্ঠে বললেন, 'আজ সকালেও আমি চশমাটা পড়েছিলাম। কি দেখলাম জানো ? সেই বৃদ্ধ দোকানদার যেন একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওহ ! কি ভয়ঙ্কর প্রলয় সে চাহনিতে ! স্পষ্ট দেখতে পেলাম সে যেন আমার দিকে হাত নেড়ে নেড়ে কি একটা বলছে, কিন্তু আমি একবর্ণ বুঝতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু সে উত্তরে এক কুটিল হাসি দিয়ে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো চোখের সামনে থেকে'।
- এ সমস্তটাই তোমার অতি কল্পনা দেবাঞ্জন। তুমি উচ্চশিক্ষিত, বাস্তববাদী, এসব খেয়ালী বিভ্রম তোমাকে মানায় না।
- তুমি বুঝবে না চৈতালী, চশমাটা পড়া অবধি আমি ভিতরে ভিতরে বেশ একটা অন্যরকম অনুভূতি টের পাচ্ছি । সে অনুভূতির কেমন যেন এক অন্ধকার, অমোঘ আকর্ষণ। সে আকর্ষণ অবজ্ঞা করার ক্ষমতা নেই আমার। কতকটা............ কতকটা যেন নিশির পিছনে ধাওয়া করার মতো।
- এ কি বলছ তুমি দেবাঞ্জন ? তুমি কি পাগল হয়ে গেলে ? কোথাকার কি একটা চশমা, কি দেখতে কি দেখেছ, তাই দিয়ে নিজের মাথা খারাপ করছ খামোকা ?
- ভুল আমি কিছু দেখিনি চৈতালী........ কোনোরকম ভুল আমার হয় নি, আমি শুধু জানি এ চশমা কোনো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে, একটা ভয়ঙ্কর কিছুর ! আ.....আমায় সেই দোকানে যেতেই হবে......... যে করেই হোক।
চৈতালী নির্বাক নিস্তব্ধ বসে রইলেন। দেবাঞ্জনকে ক্ষান্ত করতে পারলেন না একবিন্দু। সমস্ত রকম চেষ্টা বিফলে গেলো তাঁর। দেবাঞ্জন বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে গেলেন বৌবাজারের উদ্দেশ্যে। তাড়াহুড়োতে একটা ভুল করে বসলেন। চশমাটা ভুলে রেখে গেলেন ড্রেসিং টেবিলের ওপর। কিছুক্ষণ পর চৈতালীর সে দিকে নজরে পড়তেই ধীর পায়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালেন। চশমাটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেন। একটা নীলচে আভা আছে যেন। তবে অসাধারণ কিছু নয়। দেখতে দেখতেই এক অদ্ভুত টান অনুভব করলেন চশমাটা পড়ে দেখার। নিয়তির অমোঘ আকর্ষণের বেড়াজালে জড়িয়ে গেলেন ক্ষনিকের বেখেয়ালে। আলতো হাতে চশমাটা তুলে ধীরে ধীরে চোখের ওপর বসালেন। আয়নায় ঘুরে ফিরে দেখলেন নিজেকে। ছেলেদের চশমা হলেও মন্দ লাগছে না তাকে। তাছাড়া, কি আছে চশমাটাতে ? দেবাঞ্জন অযথাই পাগলামো করছে। একটা নিরীহ গোবেচারা চশমা, তাই নিয়ে একেবারে আকাশকুসুম কল্পনা করছে দেবাঞ্জন। মনে মনেই হাসতে থাকলেন চৈতালী। 'ভবিষ্যৎ' !! ওহ পারেও বটে লোকটা, বুড়ো বয়েসে ভীমরতি ছাড়া আর কিস্যু নয়। মনে মনে ভাবলেন, একবার বাড়ি ফিরুক, আচ্ছা করে পেছনে লাগবেন দেবাঞ্জনের।
মনের দ্বন্দ্ব সরে যেতেই চশমাটা খুলতে গেলেন চৈতালী। হঠাৎ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো খানিক। পরক্ষণেই সামনেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়ে চশমার মধ্যে দিয়ে যা দেখলেন তাতে তৎক্ষণাৎ ভয়ে মুখ সাদা হয়ে গেলো তাঁর। পলক পড়লো না চোখে। শ্বাসরুদ্ধ করে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। নিস্পৃহ ভাবটা কেটে যেতেই চশমাটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে গেলেন মোবাইলটা আনতে। দেবাঞ্জনকে ফোন করতে হবে...... এক্ষুনি।
মনের দ্বন্দ্ব সরে যেতেই চশমাটা খুলতে গেলেন চৈতালী। হঠাৎ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো খানিক। পরক্ষণেই সামনেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়ে চশমার মধ্যে দিয়ে যা দেখলেন তাতে তৎক্ষণাৎ ভয়ে মুখ সাদা হয়ে গেলো তাঁর। পলক পড়লো না চোখে। শ্বাসরুদ্ধ করে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। নিস্পৃহ ভাবটা কেটে যেতেই চশমাটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে গেলেন মোবাইলটা আনতে। দেবাঞ্জনকে ফোন করতে হবে...... এক্ষুনি।
অটো চেঞ্জ করে মেট্রো ধরে নিলেন দেবাঞ্জন। পুঞ্জীভূত মেঘের মতো দমবন্ধ কৌতূহল ঘন জমাট বাঁধতে লাগলো বুকের মধ্যে। সেন্ট্রাল স্টেশনে নেমেই ডান দিকের ফুটপাথ ধরে হনহন করে হাঁটা লাগালেন। মিনিট তিনেকের পথ। প্রবল আশঙ্কায় হৃদস্পন্দন দ্বিগুন হলো। সামনের সিগন্যাল পেরিয়ে ডানদিকে ঘোরার জন্য রাস্তায় নামলেন। এমন সময় পকেটের ভেতর ঝনঝন করে বেজে উঠলো মোবাইল ফোনটা। দেবাঞ্জন ফোনটা তুললেন না। এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ফোন আসাতে কপালে একরাশ বিরক্তির ভাঁজ দেখা দিল। ফোনটা কেটে গেলো আপনাআপনি। কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার কম্পন অনুভব করলেন পকেটের মধ্যে। চোখ মুখ কুঁচকে হাত গলিয়ে পকেট থেকে বের করলেন দূরভাষ যন্ত্রটি। চৈতালী ফোন করছে। সবুজ বাটনটা টিপে রিসিভ করে বললেন, 'হ্যাঁ বলো' । খেয়াল করলেন না ওদিকে সিগনালের রংও সবুজ হয়ে গেছে কখন। চকিতের অন্যমনস্কতায় কথা বলতে বলতে রাস্তা পেরোতে গেলেন দেবাঞ্জন। ঠিক সেই সময়েই বাঁ দিক থেকে সাক্ষাৎ দানবের মতো একটা কালো সিডান এসে সজোরে ধাক্কা মারলো তাঁর কোমরে। তীব্র চিৎকার করে প্রায় কুড়ি গজ দূরে ছিটকে পড়লেন দেবাঞ্জন। মোবাইলটা টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো রাস্তার চারপাশে। মুহূর্তের মধ্যে রক্তের স্রোত নেমে এলো দেবাঞ্জনের গাল আর চিবুক বেয়ে। সর্পিল গতিতে এঁকে বেঁকে রক্তাভ করে তুললো কালো পিচের পথ । হৈ হৈ করে ভিড় জমে গেলো আশেপাশে। চৈতালীর শেষ ফোনটা তুলতে পারলেন না দেবাঞ্জন। সাবধান বাণী আটকে পড়ে রইল অপ্রত্যাশিত দুর্ভাগা মুহূর্তদের মধ্যে। অবশ দেহে ডান হাতের কম্পমান রক্তাত আঙ্গুল তুলে ফোনের একটা টুকরো ছুঁতে চাইলেন কোনোরকমে................পারলেন না। ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখলেন ভিড় ঠেলে সেই বৃদ্ধ দোকানি এসে দাঁড়িয়েছেন সামনে। ভুরু তুলে এক রহস্যময় চোখে বিড়বিড় করে বললেন, 'চশমা বড়িয়া থি না বাবুজি ? একদম হটকে' ?
দেবাঞ্জনের চোখের পাতায় ঘন অন্ধকার নেমে এলো ক্রমে ।
#bengalishortstories #bengalihorrorstories #suspense #drama #thrill #saptahiki
![]() |
| চিত্র বিন্যাস : নিজস্ব |
#bengalishortstories #bengalihorrorstories #suspense #drama #thrill #saptahiki


