Tuesday, February 11, 2025

বাড়ির পাশেই কলকাতা # ১ | নিপন্যান মিয়োহজি

 সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতো  - "দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া - ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া" ..........  ঘরের আশেপাশেই এমন অনেক অচেনা শিশিরবিন্দু আছে যাদের খোঁজ থাকে না আমাদের কাছে। হঠাৎ করে দেখতে পেলে বিস্ময়ে মন ভরে ওঠে। 

ঢাকুরিয়া ব্রিজের ঢিল ছোঁড়ার দূরত্ত্বের মধ্যেই এমন একটা শান্ত স্নিগ্ধ বৌদ্ধ মন্দির আছে, না গেলে জানতেই পারতাম না। গোলপার্ক থেকে এলে, ঢাকুরিয়া ব্রিজে না উঠে, বাঁদিকের রাস্তা ধরে এ.এম.আর.আই হাসপাতালের গা ঘেঁষে সোজা চলে যেতে হবে। খানিকটা গিয়ে ডানদিক ঘুরলেই বাঁ হাতে পড়বে শ্বেতরঙা ছিমছাম 'নিপন্যান মিয়োহজি' বৌদ্ধ মন্দির। আর লেকের দিক থেকে এলে পূর্ব দিকে পড়বে।  

মন্দিরের ভক্তরা বলেন ভারতবর্ষে স্থাপিত দ্বিতীয় জাপানি বৌদ্ধ মন্দিরটি এই কলকাতাতেই তৈরী হয়। স্থাপন করেন বৌদ্ধ ধর্মের পদ্মসূত্রের জাপানি অনুগামী নিচিদাৎসু ফুজি। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে এলে চোখে পড়বে বৌদ্ধ - লিপি "না - মু - মিয়ো - হো - রেঙ - গে - কিয়ো" যার বাংলা তর্জমা করলে কতকটা এমন দাঁড়ায়  - "আমি তোমার পদ্মসূত্রের বিধানে আশ্রয় নিলাম" । 

প্রবেশদ্বারের মধ্যে দিয়ে ঢুকলে ডানদিকে মন্দিরটি পড়বে আর বাঁদিকে পড়বে একটুকরো সুজজ্জিত বাগান, যেখানে সন্ধেবেলার হলদেটে নিভু আলোর মায়ায় এমনিই খানিকক্ষণ সময় কাটাতে ইচ্ছে করবে। সিঁড়ি বেয়ে ওঠে যখন মূল মন্দিরে প্রবেশ করবেন তখন এক লহমায় আপনার পিছনের কলকাতা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, মনে হবে কোনো এক দূর পাহাড়ের বৌদ্ধ মঠে এসে দাঁড়িয়েছেন। 

ভিতরে একেবারে মাঝবরাবর উপবিষ্ট বুদ্ধদেবের একটি মার্বেল মূর্তি দেখতে পাবেন যাঁর সামনের বেদীটি মখমলি কাপড় আর পিতলের প্রদীপ দিয়ে সজ্জিত। ছাদ থেকে ঝুলছে সুদৃশ্য ল্যাম্প শেড, বাহারি কাপড়ের সজ্জা আর দেওয়ালের চারপাশে সুন্দর করে আঁকা আছে জাপানি ক্যালিগ্রাফি। তার ঠিক পিছনে প্রতিষ্ঠাতা নিচিদাৎসু ফুজির একটি ছবি রাখা রয়েছে। 

আমরা গিয়েছিলাম পাঁচটা নাগাদ। সোয়া পাঁচটা নাগাদ সন্ধ্যা আরতি শুরু হয়। আরতি করেন উত্তর পূর্ব ভারত থেকে আসা বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। সুরেলা মিহি ঘন্টাধ্বনি, গুরুগম্ভীর ব্যারেল ড্রামের সঙ্গত আর ছন্দময় বৌদ্ধ মন্ত্র উচ্চারণ সবটা মিলিয়ে এমন মনভালো করা পরিবেশ তৈরী হয়েছিল যে আমরা শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে সমস্তটা ভরে নিচ্ছিলাম নিজেদের ভিতর। খাস দক্ষিণ কলকাতার বুকের ওপর এমন শান্তির ঠিকানা, বিস্ময় জাগায় বৈকি। কিভাবে সময় কেটে গিয়েছিল জানিনা......আরতির সময় পেরিয়ে যখন বাইরে বেরোলাম তখন লেকের জলে মাঘের সন্ধ্যার ছায়া। ধীর লয়ে স্বস্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছিল আমাদের ছুঁয়ে। মন ভালো হয়ে গিয়েছিল সবার......স্থির করলাম এবার থেকে সময় পেলেই কলকাতা খুঁজতে বেরোব, কলকাতার মধ্যেই.........

আপনারাও যদি কলকাতা খুঁজতে চান তাহলে চোখ রাখুন আমার "মলাটের" পাতায়.......

পরের গন্তব্য আসবে......