Friday, June 14, 2019

পিচ-বৃষ্টি ও আন্দোলন

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ বৈচিত্রে ভরপুর। সমর্থকদের জন্য এমন অভূতপূর্ব সারপ্রাইজ মাথাকুটেও ভাবা যায় না। মারকাটারি খেলার সাথে সাথে বাম্পার বোনাঞ্জার মতো বৃষ্টি দেখার আনন্দটুকুও যে ষোলো কলায় পূর্ণ  হবে এ বোধহয় অতি বড় সমর্থকও বুঝতে পারেননি। আর এই খেলাকে খেলা না বলে ছেলেখেলা বলব না পুতুল খেলা বলব সেসব ভাবতে গেলে আবার একটা ম্যাচ বৃষ্টিতে ধুয়ে যেতে পারে। তার চেয়ে বরং বসে বসে সুপার সপারের কেরামতি দেখি ও গোটা মাঠ না ঢাকার ফলে মাঠকর্মীদের দ্বিগুন পরিশ্রমের পর্যালোচনা করে দুখী মনটাকে চায়ের কাপে ভিজিয়ে নিই।  

জনৈক উচ্চপদস্থ এক আইসিসি কর্মকর্তা বলেছেন যে ওনারা জানতেন ইংল্যাণ্ডে বৃষ্টি হবে তবে দ্বিগুন বৃষ্টি হবে সেটা নাকি আগাম আঁচ করতে পারেন নি। আবহাওয়াবিদরা অনেক আগেই বলেছেন এই সময়টায় বৃষ্টি হবে - এটাই যথেষ্ট নয় কি এবং সেটা জানার পরও এই সময় ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ আয়োজন করে ফেললেন কি কারণে ? থর কি হাতুড়ি মারফত স্বপ্নাদেশে বরাভয় দান করেছিলেন নাকি আগাম সতর্কবার্তাকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে কর্মকর্তারা বলতে চেয়েছিলেন "চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা"...…..

১৮টা ম্যাচের মধ্যে এখনো অবধি ৪টে ম্যাচ বাতিল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এই বছরটা বাদ দিলে এখনো অবধি শুধুমাত্র দুটো ম্যাচই বাতিলের খাতায় নাম তুলেছে। একটি ২০১৫ সালে এবং আরেকটি ১৯৭৯ সালে। এক্ষেত্রে রিসার্ভড-ডের উপকারিতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আইসিসির কর্মকর্তারা বলছেন যে প্রত্যেকটা ম্যাচের জন্য রিসার্ভড-ডে রাখা হলে বহুদিন ধরে খেলা চালিয়ে যাওয়া পারতপক্ষে সম্ভব ছিল না। হরিবোল ! খেলাটা যখন বিশ্বকাপ এবং বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের নজর থাকবে যেখানে সেটা নিয়ে আরও একটু দূরদর্শিতা দেখালে কি বিগ বাজারের উইকেন্ড ডিসকাউন্টটা মিস হয়ে যেত ! একটি চমকপ্রদ তথ্য দিই। ১৯৯৯ সালে এই ইংল্যান্ডেই আয়োজিত বিশ্বকাপে প্রত্যেকটি ম্যাচের জন্য একটি করে রিসার্ভড-ডে রাখা ছিল। 

আগামী দিনগুলোর মধ্যে যে সব দিনে ম্যাচ হবে সেখানে কয়েকটা দিন বাদ দিলে বাকি প্রায় সবকটা ম্যাচেই বৃষ্টি হবার প্রভূত সম্ভাবনা আছে - এমনটাই নাকি পূর্বাভাস। হরি হে মাধব ! চান করব না গা ধোব ! সুতরাং যে সমস্ত টিমের ম্যাচ বাতিল হতে থাকবে সেমি ফাইনালে ওঠাটা তাদের পক্ষে ততটাই দুঃসাধ্য হতে থাকবে। সবথেকে আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে ইংল্যান্ডের প্রায় সবকটা মাঠেই নাকি জল নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। শুধু পিচ ও পিচের চারিধারটা ঢেকে ফেললেই নিশ্চিন্তি, এতেই রাত্তিরে ভালো ঘুম হবে। ওরে পাগল ! ইডেনটা একবার দেখে যেতে পারতিস তো। তাছাড়া চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে সাব-এয়ার ড্রেনেজ সিস্টেমটা শিখে নিলেও তো হত। শ্রীলঙ্কায় পর্যন্ত গোটা মাঠ ঢাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আদ্যিকালের ভেঁপু বাজিয়ে কি আর জাস্টিন বিবারের শো হয় গুরুদেব ! 
   
এমতাবস্থাতেও আইসিসির পক্ষ থেকে তেমন কোনো হেলদোল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। পরের ম্যাচগুলো ভেস্তে গেলে ঠিক কি হতে পারে তারও কোনো ব্যাখ্যা নেই। ভাবটা এমন যে ছাড়ুন তো মশাই, মোটে তো চারটে বছর, ও দেখতে দেখতে পার হয়ে যাবে। পরের বার নাহয় ভরা জ্যৈষ্ঠে  সাহারা মরুভূমিতে স্টেডিয়াম করে বিশ্বকাপ করাব। বৃষ্টি হলেও বালিতে শুষে নেবে। সে আপনারা করুন গে, কিন্তু তাই বলে সমর্থকদের অপেক্ষা, আনন্দ আর উত্তেজনা মাঠের জলে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে, তার কি হবে ? কয়েকশো কোটি টাকার ভোজে প্যান্ডেলটাই ঠিক মতো বেঁধে উঠতে পারলেন না যে। অগত্যা সন্ধ্যের দিকে টিভি খুলে চপ মুড়ি খেতে খেতে শাপ শাপান্ত করা ছাড়া আর তেমন কোনো গতি নেই সমর্থকদের। একটা লাভ অবশ্য আছে। চপ মুড়ির শিল্পে একটা উন্নতি দেখা দিলেও দিতে পারে।
 



#molat #rainatengland #matchabandoned #CWC2019 #DebdattaSinha