Tuesday, October 1, 2019

শর্ট ম্যাসাজ সার্ভিস

পাড়ার সেলুন আর বিউটি পার্লারের মধ্যে বেশ কিছু চরিত্রগত তফাত আছে যা আমরা সকলেই জানি। না না, পরিষেবা ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণের যুক্তিতক্কের ফাঁকে ঢুকতে চাইছি না। আমি বলতে চাইছি, এই দুই প্রতিষ্ঠানের মূল তফাৎ হল আবেগে। খানিকটা আগ বাড়িয়ে বলা যেতে পারে যে পাড়ার সেলুন হল মধ্যবিত্ত বাঙালির অস্থায়ী আড্ডার চরম ঠিকানা, সহজ ভাষায় যাকে বলে - ঠেক। সেখানে 'বাজার আগুন দাদা, কিছু ছুঁলেই হাত পুড়ে যাচ্ছে' অথবা 'কুলদীপের অফ ফর্মটা এবার ওয়ার্ল্ড কাপে বেশ ভোগালো' বা 'যাদবপুরের সিটটা এবার যুক্তিসম্মত হলো না' ইত্যাদি কথাবার্তায় চুল দাড়ির নকশাটা যেন অন্য মাত্রা পায়। সেখানে পার্লারে শুধু কাঁচি চলার শব্দটাই যেন বেশি করে কানে লাগে। তার কারণ বাকিরা ধ্যানগম্ভীর ঋষি মুনির ন্যায় খবরের কাগজ বা স্মার্ট ফোনের মধ্যে অমৃতের সন্ধান পেতে থাকে। তাই পার্লারে যাবতীয় স্বর্গীয় হাতছানি উপেক্ষা করে নিয়মিত ক্ষুরকর্মের জন্য আমি বরাবরই আমার পাড়ার সেলুনগুলোকে অগ্রাধিকার দিই। ভাবছেন, ধান ভাঙতে শিবের গীতটা গাইতে লেগেছি কেন ? বলছি...

এই সমস্ত কিছু ছাপিয়ে যেটা আমার কাছে অন্যতম আকর্ষণ তা হল কুইক ম্যাসাজ। চুল কাটার পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ মানুষেরই ম্যাসাজ নেবার একটা পাশবিক ইচ্ছে জাগে। আর আশ্চর্য জনক ভাবে নাপিত ছেলেটিরও যেন এক নৈসর্গিক আনন্দ হয়। ভাবটা এমন যেন  - 'আহা কি বললে গো দাদা, এটার অপেক্ষাতেই তো ছিলুম'। আর তারপরেই যেটা শুরু হয় তা দিয়ে সহজেই একটা দশ মিনিটের শর্ট ফিল্ম বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। মাথার চুল পেরিয়ে ঘাড় আর পিঠ অবধি যে অবাধ তবলা বাদন চলে তার মধুর সংগীতের মূর্ছনায় গোটা সেলুনটা যেন সিনেমা হলের মতো লাগে। কারণ যারা চুল কাটার অপেক্ষায় বসে থাকে বা গুলতানি করে তারাও যেন এ দৃশ্যপটের সামনে কিছু মুহূর্তের জন্য বাক্যহারা হয়ে যায়।

ম্যাসাজের প্রতি কোনোরকম স্পৃহা আমার কখনোই ছিল না, তার কারণ শরীরের উপর কোনোরকম  অত্যাচার আমি সইতে পারি না মোটে। আর আমার বলতে বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই যে এ যাবৎ এমনধারা ম্যাসাজ আমি ছোটোর থেকে নিই নি কখনো । তবে কপালের ফেরে সে ভয়কর অভিজ্ঞতাও আমার হল একদিন । গত রোববার ল্যাদপ্রিয় মানুষের মতো আমিও একটু দেরিতে বিছানা ছেড়ে ছিলাম। দেরিতে ওঠার ফলেই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক মাথাটা বেজায় টনটন করছিল। উঠেই ভাবলাম, সামনে পুজো, যাই, আজ চুল কাটার সাথে সাথে ম্যাসাজটাও করিয়ে নিই। চুল ছাঁটাও হবে সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতাও হবে। কিন্তু কপালটা চিরকাল আমার সাথে বেইমানি করে এসেছে। এবারেও তার অন্যথা হল না।

সেলুনটা আমার বাড়ির পাশেই। সাত ফুট বাই সাত ফুটের একটা ঘর। ছাপা পর্দার আড়ালে ফোর-জি স্পিডে দক্ষযজ্ঞ ঘটে চলেছে। ভিতরে ছটা চেয়ারই ভর্তি। মাঝে একফালি একটা সরু কাঠের বেঞ্চ, সেখানে বসে জনা তিনেক লোক আড্ডায় মশগুল। ডানদিকের চেয়ারে একটা কাঠের পাটাতনের ওপর একটা পুঁচকে ছেলে ঘাড় গুঁজে বসে, আড়চোখে সামনের আয়নায় আঁখো দেখা হাল এর বিশদ বিবরণী মেপে নিচ্ছে। পাশে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে,  খুব সম্ভব ছেলেটির মা, যিনি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন নাপিতকে। মধ্যবয়সী নাপিত বেচারা চেয়ারের চারপাশে গোল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। দেওয়ালে লাগানো প্রীতি জিন্টা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। বাঁদিকের দেওয়ালে আমির আর শাহরুখ আলাপচারিতায় মগ্ন। দক্ষিণ পূর্ব কোণে একটা স্পিকার ঝুলছে। যেটা দেখে আমার প্রত্যেকবার মনে হয় সেটা যে কোনো মুহূর্তে খসে পড়ে যাবে, কিন্তু আশ্চর্য ভাবে মাধ্যাকর্ষণ এর সমস্ত থিওরি ভুল প্রমাণিত করে দিনের পর দিন টিকে আছে সে এইভাবেই। সেটা দিয়ে নব্বইয়ের দশকের হিন্দী গান ভেসে আসছে। সবটা মিলিয়ে একেবারে মাখ মাখো মধ্যবিত্তের আধার কার্ড।

আমি দরজায় দাঁড়িয়ে পুরোটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। রাজু আমায় দেখে বললে, 'দাদা দো মিনিট ! ব্যাস হয়ে গিয়েছে । একে ছেড়ে দিয়ে ফির আপনাকে ধরছি' ।

রাজু হল অল্পবয়সী খোস মেজাজি বিহারী নাপিত। বয়স ২৬ - ২৭ হবে। শ্যামলা রং, মাঝারি গড়ন, পান মশলায় বেশ আসক্তি আছে। 'একে' বলতে যাকে বোঝালো সেই মাঝবয়সী ভদ্রলোক চুল কাটাতে কাটাতে ভারী বীরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকালেন। চোখেমুখে অবজ্ঞার ছাপ স্পষ্ট । মনে মনে ভাবলেন বোধহয়, কোথাকার কোন নবাব খাঞ্জা খাঁ এসেছি যে মাত্র দুটো মিনিটেই ছেড়ে দিতে হবে ! আমি বরাবরই শান্তিপ্রিয় মানুষ। অকারণ মাতামাতি সহ্য হয় না।  তবু রাজু আমায় বিশেষ খাতির করে। কি কারণে করে তা বলতে পারব না। হতে পারে আমি তার কাঁচির তলায় নির্বিচারে মাথা পেতে দিই এবং সমস্ত নির্দেশ বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে চলি। রাজুও দিব্যি খোশগল্প করতে থাকে আমার সাথে। তার কোনো কথায় আমি বাধা দিই না, বরং সে একজন শান্ত নির্বাক শ্রোতা পেয়ে দ্বিগুন উৎসাহে চুল কাটতে থাকে।

মিনিট দশেক পরে রাজুর চেয়ার ফাঁকা হয়ে যেতে সে একগাল হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকাল। যে ভদ্রলোক বসেছিলেন তিনি পাশ দিয়ে যাবার সময় তির্যক চাউনি ছুঁড়ে দিয়ে গেলেন আমার দিকে। আমিও সামান্য বোকা হাসি দিয়ে চুপচাপ নির্বিচারে বসে পড়লাম চেয়ারে। রাজুর কাঁচির পথচলা শুরু হল।

পিছন থেকে শুরু করে কানের দুপাশ দিয়ে রাজুর কাঁচি নির্বিবাদ চলতে লাগল। আর আমিও সামনের আয়নায় আমার চুলের ব্রেকিং নিউজ প্রত্যক্ষ করতে লাগলাম। পেছনের দেওয়ালে শাহরুখ আর আমির আমার দিকে একইভাবে তাকিয়ে আছে। প্রীতি জিন্টা সমানে মুচকি হাসছে। খানিক বাদে এই খুনখারাপির অবসান ঘটল। বরাবরই আমার চুল কাটতে বিশেষ সময় লাগে না। কমতে কমতে বর্তমান সময়ে এসে মাথার ওপর যে ক'গাছা পড়ে আছে তা ছোটবেলার স্মৃতি আর গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব ছাড়া আর কিছুই নয়। ঘাড়ের চারিদিকে খোঁচাওয়ালা পাউডার লাগিয়ে দিল রাজু। এই জিনিসটা তাকে প্রত্যেকবার বারণ করা হলেও সে শোনে না। খামোখা অত পাউডার লাগিয়ে ফুলবাবু সাজিয়ে ঠিক কি লাভ হয় বুঝিনা। অথবা হয়ত ভাবে, যে এই অবস্থায় ঠাকুর দেখে আসা সম্ভব.....

সমস্তটা হয়ে যাওয়ার পর রাজু জিজ্ঞেস করল, 'ওউর বলেন দাদা.........'

আমি খানিক ইতস্ততঃ করে বললাম, 'ইয়ে মানে তুমি তো ম্যাসাজ করো দেখি। আমার ঘাড় আর মাথার দিকটা একটু করে দিতে পারো......সকাল থেকে বড্ড টনটন করছে'।

রাজুর সারা মুখমন্ডল জুড়ে শরতের রোদ খেলে গেল যেন। আমার এহেন আবদার সে যে কিভাবে পূরণ করবে ভেবেই পেল না। অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে বললে, 'আরে কি বলছেন দাদা, একদমসে করে দেব। আপনাকে এমন স্পেশাল ম্যাসাজ দেব যে আপনার নেশা লেগে যাবে'।

মনে মনে ভারি আশ্চর্য হলাম, 'ম্যাসাজের নেশা ! এ ব্যাটা বলে কি ! এতেও কি মানুষের আসক্তি আছে নাকি ? অবশ্যি তথাকথিত ম্যাসাজ পারলারের যে সমস্ত খবর কানে আসে তাতে করে ম্যাসাজ বিষম বস্তু হতেই পারে বৈকি'।

সে যাই হোক, রাজু সামনের ড্রয়ার খুলে সযত্নে চিরুনি আর কাঁচি রেখে দিল তাতে। তারপর দু হাত ওপরে তুলে নিজের দশটা আঙ্গুল কটমট করে ফাটিয়ে নিল। ঘাড়টা দুপাশে কাত করে নানান কায়দায় কসরত করে রেডি হয়ে গেল একেবারে। বক্সিং শুরু করার আগে ফাইটাররা যেমন করে থাকে, কতকটা সেই রকম। আমার কেমন বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল। এ যেন বল্লালদেবকে নিকেশ করার আগে বাহুবলী প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিনেমার দৃশ্যটা ভেবেই আমার গলা শুকিয়ে এল একেবারে। কেবলই মনে হতে লাগল একটু বেশি রিস্ক নিয়ে ফেললাম নাতো !

অবশ্য খুব একটা ভাবার অবকাশ পেলাম না। কারণ ততক্ষনে রাজু দুহাত দিয়ে কপ করে আমার মাথাটা ধরে ফেলেছে। দু আঙুলের মুদ্রায় কপালের সামনেটা টেনে টেনে ধরতে লাগল। তারপর একইভাবে ভাবে কপালের দুপাশে চক্রাকারে আঙ্গুল ঘোরাতে লাগল। বেশ আরাম পেলাম। মনে মনে রাজুর প্রতিভার তারিফ না করে পারলাম না। এরপর মাথার পিছন দিকটায় দু হাত দিয়ে নমস্কারের ভঙ্গিতে জড়ো করে আঙুলের বিশেষ কায়দায় চটপটি বাজনার মতো করে ফটাফট শব্দ করতে লাগল। মাথার একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অবধি বিসমিল্লাহ খাঁর সানাইয়ের তরঙ্গ খেলে গেল যেন। দু চোখে অপার শান্তির ঘুম নেমে এলো আমার। কয়েক মুহূর্ত সেলুন আর স্বর্গের তফাৎ করতে পারলাম না।

বেশ খানিকক্ষণ এমনটা হবার পরে রাজু আমার কাঁধের দিকে নেমে এল। ফেনিল মসৃন ঢেউয়ের মতো সে আমার কাঁধের ওপর ছোট ছোট অবকাশে আঙ্গুল চালাতে লাগল। এমন স্তিমিত মৃদু অঙ্গুলিচালনায় মনে মনে একেবারে নিশ্চিত হলাম যে ম্যাসাজ কম্পিটিশনের ওয়ার্ল্ড কাপটা একমাত্র রাজুরই পাওয়া উচিত। এমন চমৎকার ট্যালেন্ট বুড়োশিবতলার গলিতে অবহেলায় ও অযত্নে নষ্ট হচ্ছে ভেবে মনটা ভারী খারাপ হয়ে গেল।

হর্ষ আর করুণার দোলাচলে দুলতে দুলতে আমার অন্তরাত্মায় প্রগাঢ় আবেগ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই আমার দু কাঁধের ওপর নেমে এলো বিরাশি সিক্কার দুখানি রাম রদ্দা । কতকটা সাংঘাতিক ঠোক্কর খাওয়ার মত মালুম হল। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, আধা চোখ খুলে বললুম, 'ওরে আস্তে রে পাগল ! অমন করে কেউ মারে' ?

রাজু অকপট ভাবে বলল, 'এতক্ষন মেলোডি ছিল দাদা, এইবার রক দিচ্ছি'।

একথায় আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্ট্যাচুর মতো নিশ্চল হয়ে গেলাম। সে প্রাণান্তকর কথা অনুধাবন করতে খানিক সময় লাগল আমার মতো মূর্খের। যতক্ষণে বুঝতে পারলাম ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে অনেক। দু কথা বলার অবকাশ পর্যন্ত সে দিল না আমায়। তার আগেই আমার বাঁ হাতটা টেনে ধরে গামছার জল নিংড়ানোর মতো করে মোচড়াতে শুরু করলে। আমার চোখে কালবৈশাখীর আঁধার নেমে এল প্রায়।

ঢোঁক গিলে বললুম, 'একি কচ্ছিস রাজু ? হাতটা তো খুলে যাবে মাইরি' !

রাজু খ্যাঁকখ্যাঁক করে হেসে বলল, 'কি যে বলেন দাদা, হাত আবার অমনি খুলে যায় নাকি ! একি টেবিলের ড্রয়ার না আলমারির দরজা, যে টানলাম আর খুলে গেল' !

আমি প্রায় হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠলাম, বললুম, 'ছেড়ে দে সোনাভাই আমার, ছেড়ে দে আমায়, যথেষ্ট হয়েছে আমি আর ম্যাসাজ নিতে চাইনা, এই অবধিই নেওয়ার ছিল আমার, আজ আর নয়.......'

রাজু শোনার পাত্র নয়। ঘাড় নেড়ে বললে, ' তা বললে কি হয় দাদা, এতদিন বাদে আপনি ম্যাসাজ নিচ্ছেন, অমন ছেড়ে দেয়া যায় নাকি ? সবে তো শুরু হল, এবার পিঠটা ভালো করে চাপড়ে দলাই মলাই না করলে মনেই হবে না যে ম্যাসাজ হচ্ছে'।

আমি কাতর ভাবে রাজুকে বললাম, 'দ্যাখ রাজু, এতদিন ম্যাসাজ নিইনি মানে এই নয়, যে আজ আমাকে পুরোটা উসুল করে নিতে হবে। আর তাছাড়া খামোখা আমার পিঠ চাপড়ে কি করবি বল ? বলার মতো তো তেমন কোনো কাজ করে উঠতে পারিনি আমি, সুতরাং অত তরিবত না করলেও চলবে......... আ - আমায় ছেড়ে দে ভাইটি.....'

রাজুর প্রত্যয়ী মুখে চোখে তেমন কোনো ভাবাবেগ লক্ষ্য করা গেল না। তবু আমি চেষ্টা করতে ছাড়লাম না। ঘাড় ঘুরিয়ে বললাম, 'শোন না, লক্ষ্মী ভাইটি, আমার না হঠাৎ একটা অফিসের কাজ মনে পড়েছে, বাড়িতে গিয়ে চট করে করতে হবে বুঝলি, আজ ছেড়ে দে, পরে নাহয় অন্য কোনো একদিন..........'

রাজু আমার ছেলে ভোলানো কথাকে অবলীলায় ডজ করে বেরিয়ে গেল। বলল, 'না দাদা, রোববারে আবার অফিসের কাজ কি, আর এতো কাজ করে করেই তো পিঠে ব্যথা হয়েছে। এরপর তো কোমর আছে, আপনি আরাম করে বসুন না, ঘাবড়াচ্ছেন কেন.....পিঠের বাইপাস ম্যাসাজটা আমি দেবই' ।

বাইপাস ম্যাসাজ !! আতঙ্কে আমার পেটের ভেতর সবকিছু যেন ফণীর ঝড়ের মতো গুলিয়ে উঠল। আমি প্রায় কেঁদে উঠে বললুম, 'ওরে ! আমার কোমরের দায়ভার তোর না নিলেও চলবে ভাই, বাঁকা পথ দিয়ে তাও মানুষ ভবনদী পেরোতে পারে কিন্তু ভাঙা কোমর নিয়ে আমি যে সরু নালাও টপকাতে পারব না'।

আমার কথার মর্মার্থ তার মাথায় ঢুকল কিনা জানি না কিন্তু আমাকে সে একেবারে প্রশ্রয় দিল না। বলল, 'অত ভয় পাচ্ছেন কেন দাদা, দেখুন না কেমন জম্পেশ টাইপের করে দিচ্ছি' ।

আড়চোখে দেখলাম, আশেপাশের লোকজন কেউই এই যাত্রাপালাটা মিস করছে না। দু চারজন সেলুনের বাইরেও জড়ো হয়েছে বিনি পয়সার কমেডি দেখবে বলে। আমার কেবলই মনে হতে লাগল আমার মতো অসহায় জীব এ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আর কেউ নেই।

তবে উল্টোদিক থেকে ভয় পাওয়ার কথা বললে চিরকালই বাঙালির পৌরুষে আঘাত লাগে, আমার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হল না। ভিতরে ভিতরে কলজের মুড়োটা আচ্ছা করে বেঁধে নিলাম আমার দুঃসাহসের ফিতে দিয়ে। সাদা আলখাল্লার ভেতর দিয়ে প্রাণপণে চেয়ারের হ্যান্ডেল চেপে ধরলাম। এরপর যা শুরু হল তার সাথে একপ্রকার নটরাজের নৃত্যেরই তুলনা করা যায়।

কোনোমতে নাক মুখ গুঁজে নিরুপায় হয়ে সহ্য করতে লাগলাম সেসব। ঘাড় ঘুরিয়ে দেওয়ালের দিকে আর তাকাতে ইচ্ছে করল না। প্রীতি জিনটা নির্ঘাত শাহরুখ আর আমিরের সাথে মিলে আমায় ট্রোল করছে। মনে হল সেলুনের বাকিরাও ভোগের বাতাসের মতো সবটুকু সাঁতলে লুটেপুটে নিচ্ছে। আমি প্রায় মাটিতে মিশে যেতে লাগলাম। সীতা হলে বলতুম - ধরণী দ্বিধা হও। কিন্তু এখানে কোনো কিছুই বলে উঠতে পারলুম না। আর বললেই বা ! শুনছে কৈ ?

পিঠ চাপড়ানো শেষ হতে রাজু এবার কোমর নিয়ে পড়ল। যা চলল তাতে করে কোমরের কৌমার্য হরণ হল বলা যায়। চোখের সামনে আমার বাঁচার কোনো রাস্তাই আর খোলা দেখতে পেলুম না। কোমরের ওপর দু আঙ্গুল দিয়ে চেপে চেপে সে আমার শিরদাঁড়ার প্রতিটা হাড় যথাস্থানে আছে কিনা একেবারে অর্থোপেডিক ডাক্তারের মতো পরখ করতে লাগল। আয়নায় নিজের কাতর মুখটা দেখে আমি আরও বিমর্ষ হয়ে পড়লুম। নিজের এতো করুন মুখ আমি আগে দেখেছি বলে মনে করতে পারলাম না। আমার অন্তঃরাত্মা হাহাকার করে উঠল সে ভয়ংকর প্রাণঘাতী ম্যাসাজের ঠেলায়।

আরো মিনিট দশেক বাদে সে বিষাক্ত তান্ডব শেষ হল। ঝড়ের শেষে তালগাছ যেমন একদিকে হেলে নুয়ে পড়ে, আমিও কতকটা ডানদিকে হেলে কাত হয়ে গেলাম। চেয়ারের হ্যান্ডেলের ওপর ভর দিয়ে কোনোরকমে তৃভঙ্গমুরারীর কায়দায় উঠে দাঁড়ালাম। রাজু একগাল হাসি নিয়ে আমার দিকে চেয়ে রইল। বুঝতে পারলাম দারুন বা সাবাশ টাইপের কিছু একটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। মনে হল ওর চুলের মুঠিটা ধরে সামনের আয়নায় মাথাটা ঠুকে চুরমার করে দিই। পুলিশি হ্যাপা আমার পোষাবে না ভেবে ওই প্ল্যান ভেস্তে দিলুম মনে মনেই। বিশেষ কিছুই আর বলতে ইচ্ছে করল না আমার, তবু কোনোরকমে দাঁত চেপে, বাঁকা মুখ করে বললাম, 'টাকাটা রাখ, পুজো ভালো কাটাস.......'

বলেই আর একমুহূর্ত দাঁড়ালাম না সেখানে। বহুযুগ আগে দূরদর্শনে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় মহাভারত সিরিয়ালে শকুনির চরিত্রে গুফি পেন্টাল যেভাবে হেঁটেছিল আমিও কার্যত কতকটা তেমনই আধা খুঁড়িয়ে আধা বেঁকে ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে পা চালালুম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলুম ম্যাসাজের মায়াজালে আর নয় রে ভাই। যতই হোক, পিতৃদত্ত প্রাণের সাথে ছেলেখেলা করা মোটেই উচিত হয়নি আমার।

যাঁরা নিয়মিত ম্যাসাজ নেন এবং ম্যাসাজ নেওয়াটাকে প্রায় কুটির শিল্পের পর্যায় নিয়ে গেছেন তাঁরা নিশ্চই ভাবছেন, ওঃ ! ছেলের যেন ননীর শরীর, সামান্য ম্যাসাজেই কাতর হয়ে পড়েছে ! কৈ ! আমরা তো এতো বছর ধরে নিচ্ছি আমাদের তো কিছু হয়নি। তাঁদেরকে হাত জোড় করে বলি, আপনারা প্রণম্য ব্যক্তি, ঈশ্বর আপনাদের সাহস ও শক্তি দুটোই দিয়েছেন। তবে বিশ্বাস করুন, এর থেকে মেট্রো বা বনগাঁ লোকালের ভিড় সামলানো সহজ, সারারাত কালী পুজোর মাইকের অত্যাচার এর কাছে নস্যি, এমনকি খালি পায়ে গরম পিচের রাস্তায় হাঁটাও সুখের, কিন্তু যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে তাতে করে ম্যাসাজ কথাটা আমার কাছে যে আমৃত্যু বিভীষিকাময় অসুর হয়েই থাকবে এ বলাই বাহুল্য......

তবে আপনাদের সবার পুজো নির্ভাবনায় ও নির্বিবাদে ভালো কাটুক এই কামনা করি......শুভ শারদীয়া।



#pujobarshiki #bengalishortstories #pujastories #bengalihumours #molat #DebdattaSinha

Saturday, August 10, 2019

বন্ধু চল # ৪ - ফলতা

কতটা মরিয়া হলে মানুষ এমন বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে সেদিন আমাদের দেখলে খানিকটা হলেও
ছবি : সৌম্য 
বোঝা যেত বোধহয়। বাইক নিয়ে শেষ বেরিয়েছিলাম সেই গত বছর। তারপর যাচ্ছি যাব করে দুটো গ্রীষ্ম, দুটো বর্ষা আর একটা শীত পেরিয়ে গেলেও কিছুতেই ব্যাগ গুছিয়ে উঠতে পারিনি দুজনে। বাইরে না বেরোতে পারার গুমোট ভাবটা ততদিনে কয়লার ধোঁয়ার মতো লতিয়ে উঠেছে। অবশেষে, 'নিকুচি করেছে ! যা থাকে কপালে' বলে দুম করে বানিয়ে ফেললাম একেবারে দুদিন-এক রাত কাটানোর মতো একটা চরমতম প্ল্যান। নাহ, ফ্যামিলি নিয়ে নয়, বরং লাগামছাড়া বাউলের মতো স্বাধীনভাবে কাটানো কয়েক মুহূর্তের অবকাশ যাপন।  

যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাড়িতে সমস্তটা গুছিয়ে বলার আগেই গুগল ঘেঁটে ফলতার হোটেল সি-বার্ড ইন্টারন্যাশনাল বুক করা হয়ে গেল। এ যেন কতকটা সেই স্কুলের পিকনিকে যাওয়ার মতো। বাস তো বুক করা হয়ে গিয়েছে, এখন তো আর না বলার উপায় নেই।

"কি আশ্চর্য ! বুক করে ফেললে ! কোথায় হোটেল ? কি ব্যাপার ? সঙ্গে আমরা গেলেও তো হত ! দিনের দিনে কি ফেরা যেত না" ? এমন ধারার নানাবিধ প্রশ্নকে মেসির মতো ডজ করে কাটিয়ে বেরিয়ে গেলুম দুজনেই। কারণ আগেই বলেছি মরিয়া হলে মানুষ যা ইচ্ছে করতে পারে। অতএব সক্কাল সক্কাল বাইকে তেল ভরে নিয়েই ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে দে চম্পট।

ছবি : নিজস্ব 
মাঝে শুধু একবার মাত্র দাঁড়িয়েছিলাম। আমতলা পেরিয়ে সরিষাহাট মোড় থেকে ডানদিক ঘুরে দু তিন কিলোমিটারের মাথায় একটা স্বামীনারায়ণের মন্দির পড়ে। সে এক দেখার মতো স্থাপত্য। পোড়ামাটির রঙে সে আশ্চর্য শিল্প অজান্তেই মনের মধ্যে সম্ভ্রম জাগায়। মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে ছবি তুলে আবার দৌড়।

অর্জুন, শাল, টিক, মেহগনি আর সেগুন গাছের ছায়ায় ততক্ষনে আমাদের শহুরে ক্লান্তি খসে পড়েছে শরীর থেকে। রাস্তার দু দিকে ঘাড় ঘোরালে অজস্র সবুজের কোলাজে চোখে নেমে আসছে পরম শান্তি। দূর আকাশে ধূসর মেঘের ছবি আঁকা হয়ে চলেছে রাস্তার ওপরেই, বাইকের চাকা সে ছবি ছুঁয়ে ছুটে চলেছে অদম্য, অজানা আকর্ষণে।

প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর নৈনান মোড় থেকে বাঁদিক ঘুরে সটান উপস্থিত হলাম হোটেলের সামনে। আশেপাশে আরও দু একটা হোটেল আছে বটে তবে আমাদেরটা গঙ্গার একেবারে লাগোয়া। এমনিতে জনবসতি শূন্য এলাকা তবে দু একটা ইন্ডাস্ট্রি থাকার ফলে রাস্তার ওপর কখনো কখনো মানুষের দেখা মেলে। অবশ্য আমাদের তাতে কিছু আসে যায়নি। বেলেল্লাপনা করাটাই যাদের লক্ষ্য তাদের কাছে চড়াই পাখিও যা, চিংড়ি মাছও তা।

প্রথমটায় কটেজ বুক করা ছিল। দেখার পর নাপসন্দ করে আমরা সোজা একটা ডিলাক্স রুম ভাড়া
ছবি : হোটেল সি বার্ড 
নিই, ডাবল বেডরুমের ভাড়াতেই। ম্যানেজার কি কারণে সদয় হয়েছিল জানা নেই। বোধহয় ভেবেছিল, আহারে ! অত দূর থেকে দুটো বাঁধা গরু ছাড়া পেয়ে এসেছে, ওদের খানিক শান্তি  না দিলে নরক যন্ত্রনা ভোগ করতে হতে পারে। সে যাইহোক, চটপট লাগেজপত্র রেখে তোয়ালে নিয়ে চলে গেলুম সুইমিংপুলের ধারে। কোমর সমান জল, তাতেই কৈ মাছের মতো এমাথা ওমাথা সাঁতার কেটে নিল সৌম্য। আমার বরাবরই ডুবে যাবার ভয়, তাই আধা ডুবন্ত - আধা ভেসে থাকা অবস্থায় সুইমিং পুলের পার ধরে হেঁটে চলে বেড়ানোটাই নিরাপদ বলে মনে হল । যেদিকটায় জল বেশি, অর্থাৎ আমার গলা পর্যন্ত  ডুবছে সেদিকটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলাম।  সৌম্য যদিও আমাকে সাঁতার শেখাবে বলে জানপ্রাণ লাগিয়ে দিয়েছিল, তবু কাতলা মাছের মতো ঝটাপটি করা ছাড়া আমার দ্বারা আর কিছুই হয়ে উঠল না সে যাত্রা।

ঘন্টাখানেক পর সুইমিংপুলের মায়া ত্যাগ করে ঘরে এসে চেঞ্জ করে ডাইনিং হলে গিয়ে উপস্থিত হলাম। মিনিট পাঁচেক বাদেই চলে এল গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, এক চামচ ঘি, সোনামুগের ডাল, ঝুরঝুরে আলুভাজা, পাঁচমিশালী তরকারি, চাটনি আর পাঁপড়। খিদের চোটে সেসব কর্পূরের মতো উবে গেল দেখতে দেখতে। আয়েশের ঢেকুর তুলে মৌরি চিবোতে চিবোতে ঘরে এসে ঢুকলাম। ঘড়ির কাঁটা তখন তিনটে ছোঁব কি ছোঁব না করছে।

ছবি : হোটেল সি বার্ড 
রিমোট নিয়ে এদিক ওদিক চেক করতে করতে দেখলাম কোনো একটা মুভ্যি চ্যানেলে 'লাডলা'  চলছে, সবে শুরু হয়েছে। নব্বই দশকের অনিল কাপুর - শ্রীদেবীর দুরন্ত হিট ছবি। প্রত্যেকটা গান আমাদের মুখস্ত ছিল। মনে পড়ল স্কুলে এক সময় টেবিল বাজিয়ে এই ছবির কত গান করেছি। বিনা বাক্যব্যয়ে ছবিটা দেখতে শুরু করে দিলাম দুজনেই। যেন এতো দূরে এসেছি দুপুরবেলা লাঞ্চ করে 'লাডলা' দেখব বলে। এক একটা সিন্ চলছে আর আমরা নিজেরাই ধারাভাষ্য দিয়ে চলেছি। আবার ভেবে অবাকও হচ্ছি যে সিন্ পর্যন্ত মুখস্ত আছে আমাদের, এখনও......

দুপুর গড়িয়ে, বিকেল পেরিয়ে কখন সন্ধ্যে নেমেছে আমাদের খেয়াল ছিল না। সিনেমা শেষ হতে জানলার পর্দা সরিয়ে দেখলাম বাইরেটা ধূসর হয়ে এসেছে। হোটেলের বাইরে গঙ্গার পারে বসে চা খাব বলে ঠিক করলাম। দু মিনিটের হাঁটা পথ পেরিয়ে গঙ্গার পারে এসে দেখলাম একটা ঢাউস স্টিমার নদীর একেবারে মাঝামাঝি এসে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে জিরোচ্ছে বলে মনে হল। হলদিয়ার বন্দরটা সীমান্তের শেষে আবছায়া দেখা যাচ্ছে। রাস্তার ওপরে টিমটিমে আলোয় একটা চায়ের দোকানে দুধ জ্বাল দিচ্ছে। তার সোঁদা গন্ধ কুণ্ডলী পাকিয়ে নদী পেরিয়ে দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। দোকানের পাশেই ভূত বাংলোর মতো একটা সাদা দোতলা বাড়ি চোখে পড়ল। অন্ধকারে কয়েক বছরের জীর্ণতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দিকে তাকিয়ে। বেশ একটা গা ছমছমে মায়াবী পরিবেশ। বেশি দূর এগোলাম না আর আমরা। একটা শান বাঁধানো ধাপিতে বসে খানিক গুলতানি করে আবার পায়ে পায়ে হোটেলে ফিরে এলাম।

ফিরে এসে আবার আরেক রাউন্ড সিনেমা। যেন সিনেমা দেখাই মূল লক্ষ্য ছিল আমাদের। অবশ্য বিনা বাধায় বাড়িতে বসে সিনেমা দেখতে পাওয়া অনেকটা লটারি পাওয়ার মতোই। যাঁরা বিবাহিত তাঁরা নিশ্চই সহমত হবেন আমার সঙ্গে। আপনার পছন্দের সেরা ছবিটা টিভিতে চলছে, আর আপনি নিশ্চিন্তে বসে মৌজ করে সেটা গিলছেন, এমনটা আপনার কপালে যদি জুটে থাকে তাহলে আপনি যথেষ্ট ঈর্ষার পাত্র। খানিক সিনেমা দেখে আর বেশ খানিকটা আড্ডা মেরে আমাদের সময় কাটছিল। রাতে তন্দুরি রুটি আর মালাই কোফতা খেয়ে দিব্যি আমেজ এল। বকবক করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেদেরই খেয়াল ছিল না।

পরদিন দেরি করে ঘুম ভাঙল। সৌম্যর ভোর ভোর ঘুম ভেঙে যাওয়াতে বেচারা কোনো কাজ না পেয়ে ঘরের টেবিল চেয়ার সরিয়ে ঠিক করে রাখছিল। সংসারী ছেলে। সেসবের আওয়াজেই ঘুম ভাঙে আমার। এমন নির্ঝঞ্ঝাট অলস সকাল শেষ কবে পেয়েছিলুম মনে করে উঠতে পারলাম না। সাড়ে দশটা নাগাদ ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম কলকাতার দিকে। সঙ্গে করে নিয়ে এলাম বুকভরা অজস্র মুহূর্ত আর বেঁচে থাকার রসদটুকু। তবে বলতে দ্বিধা নেই যে পিছুটান ভুলে এমন দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে অনেকটা দূরে রাত কাটিয়ে বাড়ি ফেরাটা একটু বেপরোয়া হলেও দিব্যি লেগেছিল কিন্তু আমাদের।

এই প্রসঙ্গে বলি - পরের বারটার জন্য একটা বেড়ে লোকেশন খুঁজছি.....জানা থাকলে বলবেন তো.....

কৃতজ্ঞতা : সৌম্য ও সৌম্যর বাইক 


ছবি : নিজস্ব 
#bengalitravelblog #traveldiaries #Molat #debdattasinha #bengaliarticle #bengalweekendtour #travelstories

Friday, June 14, 2019

পিচ-বৃষ্টি ও আন্দোলন

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ বৈচিত্রে ভরপুর। সমর্থকদের জন্য এমন অভূতপূর্ব সারপ্রাইজ মাথাকুটেও ভাবা যায় না। মারকাটারি খেলার সাথে সাথে বাম্পার বোনাঞ্জার মতো বৃষ্টি দেখার আনন্দটুকুও যে ষোলো কলায় পূর্ণ  হবে এ বোধহয় অতি বড় সমর্থকও বুঝতে পারেননি। আর এই খেলাকে খেলা না বলে ছেলেখেলা বলব না পুতুল খেলা বলব সেসব ভাবতে গেলে আবার একটা ম্যাচ বৃষ্টিতে ধুয়ে যেতে পারে। তার চেয়ে বরং বসে বসে সুপার সপারের কেরামতি দেখি ও গোটা মাঠ না ঢাকার ফলে মাঠকর্মীদের দ্বিগুন পরিশ্রমের পর্যালোচনা করে দুখী মনটাকে চায়ের কাপে ভিজিয়ে নিই।  

জনৈক উচ্চপদস্থ এক আইসিসি কর্মকর্তা বলেছেন যে ওনারা জানতেন ইংল্যাণ্ডে বৃষ্টি হবে তবে দ্বিগুন বৃষ্টি হবে সেটা নাকি আগাম আঁচ করতে পারেন নি। আবহাওয়াবিদরা অনেক আগেই বলেছেন এই সময়টায় বৃষ্টি হবে - এটাই যথেষ্ট নয় কি এবং সেটা জানার পরও এই সময় ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ আয়োজন করে ফেললেন কি কারণে ? থর কি হাতুড়ি মারফত স্বপ্নাদেশে বরাভয় দান করেছিলেন নাকি আগাম সতর্কবার্তাকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে কর্মকর্তারা বলতে চেয়েছিলেন "চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা"...…..

১৮টা ম্যাচের মধ্যে এখনো অবধি ৪টে ম্যাচ বাতিল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এই বছরটা বাদ দিলে এখনো অবধি শুধুমাত্র দুটো ম্যাচই বাতিলের খাতায় নাম তুলেছে। একটি ২০১৫ সালে এবং আরেকটি ১৯৭৯ সালে। এক্ষেত্রে রিসার্ভড-ডের উপকারিতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আইসিসির কর্মকর্তারা বলছেন যে প্রত্যেকটা ম্যাচের জন্য রিসার্ভড-ডে রাখা হলে বহুদিন ধরে খেলা চালিয়ে যাওয়া পারতপক্ষে সম্ভব ছিল না। হরিবোল ! খেলাটা যখন বিশ্বকাপ এবং বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের নজর থাকবে যেখানে সেটা নিয়ে আরও একটু দূরদর্শিতা দেখালে কি বিগ বাজারের উইকেন্ড ডিসকাউন্টটা মিস হয়ে যেত ! একটি চমকপ্রদ তথ্য দিই। ১৯৯৯ সালে এই ইংল্যান্ডেই আয়োজিত বিশ্বকাপে প্রত্যেকটি ম্যাচের জন্য একটি করে রিসার্ভড-ডে রাখা ছিল। 

আগামী দিনগুলোর মধ্যে যে সব দিনে ম্যাচ হবে সেখানে কয়েকটা দিন বাদ দিলে বাকি প্রায় সবকটা ম্যাচেই বৃষ্টি হবার প্রভূত সম্ভাবনা আছে - এমনটাই নাকি পূর্বাভাস। হরি হে মাধব ! চান করব না গা ধোব ! সুতরাং যে সমস্ত টিমের ম্যাচ বাতিল হতে থাকবে সেমি ফাইনালে ওঠাটা তাদের পক্ষে ততটাই দুঃসাধ্য হতে থাকবে। সবথেকে আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে ইংল্যান্ডের প্রায় সবকটা মাঠেই নাকি জল নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। শুধু পিচ ও পিচের চারিধারটা ঢেকে ফেললেই নিশ্চিন্তি, এতেই রাত্তিরে ভালো ঘুম হবে। ওরে পাগল ! ইডেনটা একবার দেখে যেতে পারতিস তো। তাছাড়া চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে সাব-এয়ার ড্রেনেজ সিস্টেমটা শিখে নিলেও তো হত। শ্রীলঙ্কায় পর্যন্ত গোটা মাঠ ঢাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আদ্যিকালের ভেঁপু বাজিয়ে কি আর জাস্টিন বিবারের শো হয় গুরুদেব ! 
   
এমতাবস্থাতেও আইসিসির পক্ষ থেকে তেমন কোনো হেলদোল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। পরের ম্যাচগুলো ভেস্তে গেলে ঠিক কি হতে পারে তারও কোনো ব্যাখ্যা নেই। ভাবটা এমন যে ছাড়ুন তো মশাই, মোটে তো চারটে বছর, ও দেখতে দেখতে পার হয়ে যাবে। পরের বার নাহয় ভরা জ্যৈষ্ঠে  সাহারা মরুভূমিতে স্টেডিয়াম করে বিশ্বকাপ করাব। বৃষ্টি হলেও বালিতে শুষে নেবে। সে আপনারা করুন গে, কিন্তু তাই বলে সমর্থকদের অপেক্ষা, আনন্দ আর উত্তেজনা মাঠের জলে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে, তার কি হবে ? কয়েকশো কোটি টাকার ভোজে প্যান্ডেলটাই ঠিক মতো বেঁধে উঠতে পারলেন না যে। অগত্যা সন্ধ্যের দিকে টিভি খুলে চপ মুড়ি খেতে খেতে শাপ শাপান্ত করা ছাড়া আর তেমন কোনো গতি নেই সমর্থকদের। একটা লাভ অবশ্য আছে। চপ মুড়ির শিল্পে একটা উন্নতি দেখা দিলেও দিতে পারে।
 



#molat #rainatengland #matchabandoned #CWC2019 #DebdattaSinha
   
 

Thursday, May 2, 2019

অনুপদ্য - ২২

জানলা ঘেরা আতস কাঁচে
                 সূর্য ধরার ছাপ
বৈশাখী রোদ প্রহর গোনে
           চৌকো ঘরের মাপ

বাইরে আলো রঙের প্রলেপ
                মুক্ত মনের দ্বার
ঘরের ভিতর জমাট কালো
                ভীষণ অন্ধকার


ছবি : নিজস্ব 














#shortbengalipoem #bengaliblog #shortpoems #banglakobita #Molat #DebdattaSinha 






Saturday, March 16, 2019

প্যহলে ভোট, ফির ইন্টারভিউ...

৭ই মে, ২০১৪, হিমাচল প্রদেশ.....

কল্পা উপত্যকায় এখন একের পর এক মেঘের ছায়া সরে যাচ্ছে। কিন্নর জেলার এই ছোট্ট শহরে কাল রাতেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। কাগজে কলমে গ্রীষ্মকাল হলেও বাতাসে এই শিরশিরানি ভাবটা যেন কিছুতেই শরীর ছাড়তে চায় না। একটা চৌকোনো জানলা দিয়ে হিমালয় ছুঁয়ে আসা আলো এসে পড়েছে একটা কাঠের বিছানায়। ভোরের প্রথম সূর্যের গন্ধে চোখ মেলে তাকালেন এক শীর্ন জরাক্রান্ত বৃদ্ধ। গায়ের লেপটা সরিয়ে কোনোমতে কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে এলেন ফুলহাতা সোয়েটার আর উলের টুপি পরিহিত শ্যামশরণ। দুটো পা নামিয়ে গলিয়ে নিলেন একজোড়া ক্যাম্বিসের জুতো। মুখ ঘুরিয়ে জানলার দিকে চেয়ে রইলেন খানিক। মুখের অগণিত দীর্ঘ বলিরেখায় অতীতের অক্ষর স্পষ্ট। আজ এক বিশেষ দিন। সপ্তাহখানেক আগে নির্বাচন কমিশন থেকে চিঠিটা এসেছে।
একটা আলগা হাসি খেলে যায় শ্যামশরণের দু চোখ জুড়ে...…..

১৯৭৫ সালে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছিলেন শ্যামশরণ। তারপর থেকে পরিবার ছাড়া আর কিছুই ভাবেননি। বর্তমানে ছোট ছেলে চন্দ্রপ্রকাশের পরিবার তাঁর সঙ্গে থাকে। স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ আর তিন নাতি নাতনি নিয়ে সংসার। এখন সারাদিনের সঙ্গী বলতে একটা ছাইরঙা রেডিও যার ওপর আঙুল বুলিয়ে দেশের হালহকিকত নেড়েচেড়ে দেখেন মাঝেমাঝেই।

কয়েক মুহূর্ত থমকে, দুহাতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন অতিপ্রবীণ মানুষটি। মিহি গলায় বলে উঠলেন, 'পানি লা দো বিটিয়া '। ভিতরের ঘর থেকে পুত্রবধূ সুরমা এক গ্লাস জল এনে দেয় তাঁকে। মৃদু হেসে বলে, 'জলদি উঠ গ্যায় বাবা' ?

- হাঁ বিটিয়া....প্যতা হ্যায় না আজ কন সা তারিখ হ্যায় ?
- জি বাবা
- হমে দেড় নহি হোনা.....
- জি বাবা, পানি গরম হ্যায়, আপ নহা লিজিয়ে...…..

শ্যামশরণ সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়েন, পুত্রবধূর মাথায় হাত বুলিয়ে ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে যান কলতলার দিকে।

খানিক বেলা বাড়তেই একটা ভিড় জড় হতে থাকে শ্যামশরণের বাড়ির উঠোনটায়। পুলিশ, মিডিয়া ও সাধারণ মানুষের শব্দে চারপাশটা যেন মৌমাছির গুঞ্জন বলে ভ্রম হয়। যে ঘটনা ঘটতে চলেছে তার সাক্ষী থেকে যেতে চান সকলেই। এমন একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত মুঠোবন্দি করতে উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করতে থাকেন সাংবাদিকরা। হিমালয়ের বুকে ৯ হাজার ৭০০ ফিট উচ্চতায় যে ইতিহাস স্তব্ধ হয়ে আছে তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে তৎপর দেশের তামাম মিডিয়া। সময়ের সাথে সাথে ভিড় আরও গাঢ় হতে থাকে। কয়েকজন উচ্চপদস্থ নির্বাচন আধিকারিক এসেছেন গাড়ি নিয়ে। কয়েক দশকের অতীতকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন মাণ্ডির বুথে। সবারই লেন্সের ফোকাস তাক করা থাকে কাঠের বাড়িটার দরজার দিকে।

শ্যামশরণের পুত্র চন্দ্রপ্রকাশ একঝলক জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিয়ে বলে, 'উও লোগ আ গ্যায় বাবা'। দেওয়ালে ঝোলানো একটা পুরোনো ক্ষয়াটে আয়নায় শ্যামশরণ মাথার টুপিটা ঠিক করে নেন একবার। তারপর মুখ ঘুরিয়ে স্মিত হেসে বলেন, 'চলো ফির'। দুজন পুলিশ দরজার দিকে এগিয়ে আসে। 

মুহূর্তে হৈহৈ করে ওঠেন সবাই। কুয়াশার পাতলা চাদর সরে গিয়ে দেখা দেন দৃঢ়চেতা বৃদ্ধ। একটা লাঠির ওপর ভর দিয়ে পলকা নড়বড়ে শরীরটা নিয়ে বেরিয়ে এলেন ৯৭ বছরের শতাব্দী প্রবীণ শ্যামশরণ নেগি। গায়ে একটা বাদামি রঙের কর্ডের জ্যাকেট, সাথে মানানসই ট্রাউজার আর মাথায় লাল-সবজে রঙের শেরপা টুপি পড়ে একগাল হাসি নিয়ে এসে দাঁড়ালেন সবার সামনে। সাংবাদিকরা হুমড়ি খেয়ে পড়লেন সকলে, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝলসে উঠল একের পর এক। সাথে শিলা বর্ষণের মত প্রশ্ন ধেয়ে এল তাঁর দিকে। কাঁপা কাঁপা ডান হাতটা তুলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে শ্যামশরণ বললেন, 'প্যহলে ভোট, ফির ইন্টারভিউ'। সকলে যেন বাধ্য ছাত্রের মতো কথা শুনলেন প্রাচীন শিক্ষকের। দুপাশে সরে গিয়ে ওনার পথ করে দিলেন সবাই। নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো গাড়ির দিকে মন্থরপদে এগিয়ে গেলেন শ্যামশরণ নেগি - ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের ব্র্যাণ্ড এম্বাস্যাডর, স্বাধীন ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম ভোটার ও এক অনন্য ইতিহাসের রচয়িতা......

(১৯৫১ সালের ২৫শে অক্টবর চিন্নি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথম ভোট হয়। সেই দিনে শানতুং আর কল্পায় একই সাথে ভোটগ্রহণ হয়। ভোর সাড়ে ছটায় কল্পা উপত্যকায় প্রথম ভোট দেন শ্যামশরণ নেগি যিনি সেদিন থেকে আজ অবধি কোনো সাধারণ নির্বাচন উপেক্ষা করেননি। ২০১৪ সালে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন ওনাকে লোকসভা নির্বাচনের ব্র্যাণ্ড এম্বাস্যাডর ঘোষিত করেছিলেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ১০২ বছর এবং ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে প্রস্তুত। ) 




#firstindianvoter #shyamsarannegi #electioncommissionbrandambassador #parliamentelection2014 #bengaliarticle #bengalishortstories #molat

Saturday, February 2, 2019

স্বপ্নের মতো

আমাকে অনেক সময় অনেকেই বলেছেন যে গল্প ছাপানোর ক্ষেত্রে কেন আমি উদ্যোগ নিচ্ছি না বা নিই না। এর সম্যক দু একটা কারণ আছে। মুস্কিলটা হল আমি চাকুরিজীবি এবং তদুপরি বাঙালি। প্রথম ক্ষেত্রে হাঁপ ছাড়ার পর যেটুকু সময় বাঁচে তা দিয়ে সংসার নামক একটি ধর্ম আমাকে মন প্রাণ দিয়ে মেনে চলতে হয় (কিছু লোকে মানতে চায়না যদিও)। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অবকাশের আচ্ছন্নতায় হারিয়ে যাওয়া আমার রক্তে আছে। তাছাড়া পাণ্ডুলিপি আঁকড়ে ধরে প্রকাশকদের দরজায় দরজায় টিপসই দেব এমন একটি রোবব্বার আমার কপালে জোটেনি এ অবধি। যদিও গল্প ছেপে বেরোনোর শখ আমার সাড়ে সতেরো আনাই আছে, এ স্বীকার করতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। 

আমার সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে, এহেন মোক্ষম সময় এক সহৃদয় প্রকাশনা এগিয়ে এলেন এবং আমার মতো আরো নতুন কলমদের সুযোগ দেওয়ার মনস্থির করলেন। এবং সঙ্গে এও জানালেন যে এই বইয়ের প্রকাশ হবে যে সে জায়গায় নয়, হবে একেবারে এবছরের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়। প্রথমটায় বিশ্বাস করতে মন চায়নি কারণ আমার সাথে কোনো প্রকাশক নিজের থেকেই যোগাযোগ করবেন এটা কতকটা অলীক স্বপ্নের মতো। তাই কুণ্ঠায় মাখামাখি হয়ে আমার দুটি গল্প এগিয়ে দিয়েছিলাম প্রকাশকের টেবিলে। ভেবেছিলাম সহস্র গল্পের ভিড়ে তাদের বোধহয় পথভ্রম হবে। কিন্তু আমার সমস্ত আশঙ্কা মিথ্যে করে 'ছায়াসঙ্গী' জায়গা করে নিল  উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রাদের মাঝে, প্রতিলিপির আকাশে। 



সূচিপত্রে নাম দেখে প্রথম হওয়া প্রেমের মতো বুক কেঁপে উঠেছিল। আত্মহারা হয়ে রাস্তার ধারেই মোবাইল ধরে দাঁড়িয়েছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। রঙিন মলাটের ফাঁকে আমার 'মলাটের' পাতা থেকে উঠে আসা গল্প, মধুর বিস্ময়ে থমকে আছে প্রকাশের অপেক্ষায়, পাঠকের অপেক্ষায়, বইমেলার অপেক্ষায়। উজ্জ্বল সাহিত্য মন্দিরের কর্মকর্তা এবং সম্পাদকদ্বয় মৌমিতা দত্ত ও শুভ্রজ্যোতি পাল - কে আমার অনেক ভালোবাসা ও সেলাম। শেষের পাতায় কিংবদন্তি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দু চার পংক্তি লেখা শিহরণ জাগানোর পক্ষে যথেষ্ট। সর্বোপরি আমার সমস্ত পাঠকদের আমার নতুন করে কিচ্ছু বলার নেই, পাশে থেকে এই পিঠ চাপড়ানোটা না পেলে হয়ত এটা কখনোই সম্ভব হতো না। আপনাদের সকলকে কুর্নিশ।

পুনশ্চ : এই বইটি পাওয়া যাবে বইমেলার ৬ নম্বর গেটে, ২৫৬ নং স্টলে। ভালো থাকবেন......


#Molat #KolkataInternationalBookFair #KolkataBookFair2019 #bengalishortstories #bengaliliterature