Saturday, September 29, 2018

শারদপ্রাতে

এবার উৎসবের পালা, খানিক বিশ্রামের সময়
মেঘলা চায়ের কাপে যেখানে সন্ধ্যেরাও ঘুমায়
সেখানে বেঁধে নিতে হবে অবকাশের ঘর  
পুরোনো যা কিছু, ঝালিয়ে নেওয়া অতঃপর।

দেরাজে বইয়ের খাঁজে অসমাপ্ত সম্পর্কের ভিড়ে
নিখোঁজ, নিরুদ্দেশ আমার 'তুঙ্গভদ্রার তীরে' 
সেটুকু খুঁজে নেবার অপেক্ষা, আর কিছু নয়
শুনেছি শারদপ্রাতে অজান্তে এমনটাই নাকি হয়।


বিন্যাস : নিজস্ব

















#bengalipoems #Durgapuja #Molat #DebdattaSinha

Friday, September 7, 2018

অস্থায়ী সংলাপ

বিন্যাস : নিজস্ব

এ পৃথিবীর কোনো কিছুই যে স্থায়ী নয় তা অক্ষরে অক্ষরে প্রমান হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আজ যা আছে কাল তা নেই এ যেন আমাদের সংক্ষিপ্ত যাপনের মর্মকথা। সংবাদপত্রের পাতায় একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনার সাজানো অক্ষরের রেলগাড়ি ছুটে যায় আমাদের চোখের সামনে দিয়ে। সেসব আমাদের ভাবায়, শেখায় আবার কখনো বা উপেক্ষার রুক্ষ প্রান্তরে ধুলোমেখে গড়াগড়ি খেতে থাকে। উপেক্ষার একমাত্র কারণ বোধহয় অভ্যাস, যার দাঁড় বেয়ে এগিয়ে চলতেই ভালোবাসি আমরা সকলে। বন্যা, সেতুভঙ্গ, জনসমক্ষে খুন, রাহাজানি ও সর্বোপরি শৈশব ছিনতাই - এর কোনোটাই বোধহয় আর দাগ কাটে না আমাদের। 'এই বেশ আছি' এই ফাঁপা বোধটা আঁকড়ে ধরে নিশ্চিন্তে বালিশ জড়িয়ে শুয়ে থাকি রাতের পর রাত। পরের দিন মনখারাপের জেটল্যাগ কাটিয়ে আবার আগামী স্বপ্নের ফিতে কাটতে বেড়িয়ে পড়ি।   

এই প্রসঙ্গে বহুদিন আগের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। সালটা বোধহয় '৯৩ বা '৯৪ হবে। তখন আমি এইট বা নাইনে পড়ি। সম্ভবত ছুটির দিন হওয়াতে আমি বাড়িতেই ছিলাম। এমন সময় অনাহূত প্রচন্ড ঝড়ের মতো আমার নার্সারি স্কুলের হেডমিস্ট্রেসের মৃত্যুসংবাদ এল। সে স্কুলের কথা ভাবলেই আলিপুর রোডের মোড়ে দুটো বিরাট কালো রঙের থামওয়ালা একটা তিনতলা বাড়ির কথা মনে পড়ে। ছোট্ট একটা লোহার গেট পেরিয়ে কাঠের দরজা খুলে যে ঘরটায় ঢুকতাম তার দেওয়ালে আঁকা থাকত আমার আধো, অস্ফুট শৈশব। ঘন সবুজ ছায়াঘেরা জঙ্গল আর তার মধ্যে থাকত হাতি, গণ্ডার, জিরাফ আর বাঘের খেয়ালি রূপকথারা। ভিতরের দরজা দিয়ে ঢুকতেন গোলগাল, গৌরবর্ণা, সহজপ্রাণ এক প্রবীণা। ঠিক আমার দিদিমার মতো মুখের অবয়ব। তাঁর পরিপাটি শাড়ির আঁচলে লেগে থাকা স্নেহের ঘ্রান পেতুম সেসময়। তিনি আমার অবোধ সময়ের বড় আন্টি। তিনি আর নেই এই খবরটা শোনার পর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে সোজা হাজির হয়েছিলুম পুরোনো স্কুলের দোরগোড়ায়। দ্রুত পায়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠে গিয়েছিলুম দোতলার বড় ঘরটাতে যেখানে প্রায়শই আমাদের অনেককেই ডেকে নিয়ে বারান্দার বাগান দেখাতেন। এসমস্ত জলছবির মত মনে আছে আজও তার কারণ সেসব মুহূর্তদের ভুলে যেতে চাইনি কখনোই। 

ঘরটায় এসে যখন দাঁড়ালাম তখন তিনি লাল সিমেন্টের মেঝেতে ফরাস পাতা গদির ওপর পরমশান্তিতে ঘুমিয়ে ছিলেন। আত্মীয়স্বজনের থমথমে মুখ আর দীর্ঘশ্বাসের আবহে সময়ের ঘরে কাঁটা সরছে না। ঘরভর্তি মানুষের মাঝখানে স্থানুর মতো কতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম জানিনা। সম্বিৎ ভাঙল যখন কেউ একজন অকস্মাৎ বলে উঠলেন, 'মা, তুমি টিউশন চলে যাও, শ্মশানে যাওয়ার দেরি আছে এখনো, টিউশনটা কামাই কোরো না'। তাকিয়ে দেখলাম, মা বলে যাকে সম্বোধন করা হল সে আর কেউ নয়, বড় আন্টির আদরের নাতনি। খানিকক্ষণ দোনোমনো করে ছলছল চোখে সে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সম্ভবত কোচিং ক্লাসের গুরুত্বটা তার কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছিল অথবা গুরুজনের বজ্রনির্ঘোষ উপেক্ষা করে না বলাটা সে রপ্ত করতে পারেনি সেসময়। স্তম্ভিত হয়েছিলাম বললেও খুব ছোট করে বলা হয়। কথাটা যেন তীরের মতো ছুটে এসে মাথাটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছিল। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠা তথা অঞ্চলের অন্যতম প্রবীণা শিক্ষিকার প্রয়াণের থেকে কোচিং ক্লাসের গুরুত্ব কেন যে এত অপরিসীম তা আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারিনি সেদিন। আরও আশ্চর্য হয়েছিলাম কারণ পরিবারের দু চারজন সে কথার সমর্থন করেছিলেন। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার দরুণ বিবিধ সমীকরনের সান্নিধ্যে এসেছি, কিন্তু এহেন জটিল সমীকরণ কিভাবে মেলাতে হয় তা আমার বুদ্ধির বাইরে ছিল। 

আজ বুঝতে পারি, যেকোনো মৃত্যুই একটা ঘটনা মাত্র। স্থান, কাল, পাত্রের চিত্রপটে তা কখনো গুরুত্বপূর্ন হয়ে ওঠে আবার সময়ের প্রলেপে হয়ে পড়ে নির্জীব, গুরুত্বহীন। বিশেষত পরিবারের বাইরে হলে গম্ভীর মুখে পাশে গিয়ে দাঁড়াই বটে তবে অনুভবের ইচ্ছে বা শক্তি দুটোর কোনোটাই থাকে না। তাতে অবশ্য দোষের কিছু দেখি না। তার জন্য দায়ী ব্যক্তিগত ঘেরাটোপ বা সময়ের স্বার্থপরতা। দুটোই মাধ্যাকর্ষনের মোহে টানতে থাকে নিজেদের মাপা কক্ষপথের দিকে। সেখান থেকে বেরোবার বিশেষ উপায় থাকে না। তার ওপর যখন মরণোত্তর পুরস্কারের ঘোষণা থাকে তখন যেন প্রাণ হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। ভাবি, যাক বাবা ! কিছুটা অন্তত রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট পাওয়া গেছে। মনে শান্তি আসে, পেট ভর্তি চোরা অম্বলের তৃপ্তির ঢেকুর তুলে গুটিগুটি পায় বিছানার দিকে পা বাড়াই। বুঝতে পারলেও ঘুনাক্ষরেও নিজেকে টের পেতে দিই না যে যখন তখন 'আছি' থেকে 'নেই' হয়ে যেতে পারি। সমালোচকরা অবশ্য বলবেন জন্ম মৃত্যু তো অতি স্বাভাবিক ঘটনা। ঠিক ! কিন্তু তাকে অস্বাভাবিকতার রাংতায় মুড়ে রোজ রোজ অকাল প্রয়ানের প্লেটে সাজিয়ে দেওয়ার মধ্যে ঠিক কোন বাহাদুরি আছে তা আমার জানা নেই।  অন্য কারোর জানা থাকলে বলবেন, তাহলে রাস্তায় যাঁরা বেরোচ্ছেন তাঁরা পিছন ফিরে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে আপনজনদের টা টা করবেন....এই আর কি ! 

#Molat #bengaliarticle #majherhat #bridgecollapse #kolkata