ভোর সাড়ে চারটে। কৈলাসের বেডরুম। শিব জোর ঘুমোচ্ছেন। পার্বতী আলতো করে টোকা মেরে অনেক্ষন ধরে জাগাবার চেষ্টা করছেন কিন্তু শিব চোখ খুলছেন না। অগত্যা পার্বতী রেগে গেলেন।
শিব : (ঘুম চোখে ধড়মড় করে উঠে বসে) আচ্ছা জ্বালাতন মাইরি ! সকাল সকাল অমন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেন ? বাড়িতে তো কাক চিল বসতে ভয় পাবে !
পার্বতী : তার জো আছে নাকি ! কৈলাসের এই উঁচুতলায় বাড়ি বানিয়েছো। শীতকালে হাড়েহাড়ে ঠোকাঠুকি লেগে যাবার জোগাড় হয়। যম পর্যন্ত আসতে ভয় পায় এখানে। কাক চিল কি পবনের রথে চড়ে আসবে ?
শিব : কি ব্যাপার বলো তো ? আজ একেবারে তিরিক্ষি মেজাজ দেখছি তোমার ! ভোরবেলাতেই দিদি নাম্বার ওয়ান দেখেছো নাকি ?
পার্বতী : এই শোনো, বাংলা সিরিয়াল দেখা নিয়ে খোঁটা দেবে না কিন্তু, এ আমি আগে থেকেই বলে রাখছি, নইলে আমি প্রলয় বাধাব বলে দিলুম।
শিব : (থতমত খেয়ে) আচ্ছা আচ্ছা বেশ, ক্কি কি হয়েছে সেটা বলবে তো......
পার্বতী : (লজ্জা লজ্জা ভাব করে) আজ কি দিন মনে আছে তোমার ?
শিব : (সামান্য হেসে) বিলক্ষণ ! বিলক্ষণ ! মনে থাকবে না আবার ? আজ তো শিবরাত্রি।
পার্বতী : (পাত্তা না দিয়ে) হ্যাঁ, সে তো আছেই, এছাড়া আরও একটা স্পেশাল ব্যাপার আছে।
শিব : (মনে মনে) খেয়েছে রে ! কোনটা ভুলে গেলাম ! আমাদের এনিভার্সারি ! যাচ্চলে আমি তো মনেই করতে পারছি না। সারাদিন এতো গাঁজা ভাঙে ব্যস্ত থাকি, কবে যে কি দিন মনে রাখাই চাপ হয়ে যাচ্ছে এখন।
পার্বতী : কি বিড়বিড় করছ বোলো তো তখন থেকে, হ্যাঁ ?
শিব : (জটা চুলকে) ইয়ে মানে.... মাইরি বলছি। একটু ধরিয়ে দাও প্লিজ।
পার্বতী : (রেগে গিয়ে) মোটেই না, এই সাতসকালে মোটেই তোমার গাঁজার কল্কে ধরিয়ে দিতে পারব না, আমার মেলা কাজ আছে।
শিব : আহাহাহা, আমি সে ধরানোর কথা বলিনি গো, মানে ভুলটা একটু ধরিয়ে দিতে বলছিলুম আরকি। পার্বতী : ওহ ! (আবার লজ্জা লজ্জা ভাব করে) আজ তো ভ্যালেন্টাইন্স ডে.....ভুলে গেলে ?
শিব : (অত্যাশ্চর্য হয়ে) হা কপাল ! সেটা আবার কি ?
পার্বতী : (আদিখ্যেতার স্বরে) যাও, তুমি না বড্ড ইয়ে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে কি সেটা জানো না নাকি ?
শিব : (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে) মা কালির দিব্যি বলছি !..... আঃ সরি, আমি আবার অন্য লোকের দিব্যি খাচ্ছি কেন ? মানে সত্যি বলছি আমি এসব কিচ্ছু জানি না।
পার্বতী : (মুখ নিচু করে সলাজ কণ্ঠে) যাও....... আমার লজ্জা করছে।
শিব : আঃ, কি আপদ ! ধানাইপানাই না করে একটু খোলসা করে বলোই না মাইরি !
পার্বতী শাড়ির খুঁট জড়াতে লাগলেন। তারপর শিবের গলা থেকে সাপটাকে একটানে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নিজেই দুহাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলেন। অপ্রত্যাশিত প্রেমের জোয়ারে শিব একটু খেই হারিয়ে ফেললেন।
পার্বতী : ভ্যালেন্টাইন্স ডে মানে হল প্রেমদিবস, বুঝলে ?
শিব : (ভারী অবাক হয়ে) প্রেমদিবস !! প্রেমের আবার দিবস রজনী হয় নাকি গো ?
পার্বতী : (দুহাত ছাড়িয়ে নিয়ে) হয় গো হয়। ইদানীং হচ্ছে, আর সবাই কচ্ছে। এই আমরাও না আজ করব কিন্তু।
শিব : (পার্বতীকে কাছে টেনে দুষ্টুমির গলায়) আজ আমরাও করব ?? যাহ ! সাতসকালে একঘর ছেলেপুলেদের সামনে এসব আবার কেউ করে নাকি ! কি যে বলো না তুমি ! ধ্যাৎ !
পার্বতী : আঃ ! তুমি তো ভারী অসভ্য। আমি কি সেসব কথা বলেছি নাকি !
শিব : তাহলে ?
পার্বতী : মানে, আজ আমরা একটু সেলিব্রেট করব। এই যেমন ধরো একটু সেন্ট্রাল পার্ক গেলাম, তারপর একটা মলে গিয়ে একটু শপিং টপিং.......
পার্বতীর কথা শেষ হবার আগেই শিব সঙ্গে সঙ্গে দুহাত ছিটকে এলেন।
শিব :(নাকে হাত দিয়ে) ছিছিছিছি, পার্বতী ! ছি, আজকের একটা পবিত্র দিনে তুমি এসব কি মলমূত্র টেনে আনছ বলো দেখি ?
পার্বতী : আ মোলো যা ! এ মল সে মল নয় দেব.........এ হল গিয়ে শপিং মল, সেখান গিয়ে একটু শপিং করব, হাত জড়াজড়ি করে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ঘুরব, রেস্টুরেন্ট যাব, তারপর একেবারে পদ্মাবৎ দেখে তবে বাড়ি ফিরব।
শিব :(চোখ কপালে তুলে) পদ্মাবৎ !! বোঝো ! এ আবার কি নতুন সংস্কৃত ? বলি কথায় কথায় দুম করে অমন খণ্ড-ত লাগিয়ে দিলে ভারী অসুবিধে হয় জানো। পরিষ্কার বাংলা ভাষায় বলবে একটু ?
পার্বতী : সে কি কথা !! কত বড় কাণ্ড হয়ে গেল ! কোনো খবরই তো রাখো না দেখছি। অবশ্য সারাদিনে ছিলিম ছাড়ার ফুরসত পেলে তো !
শিব :(সামান্য রেগে গিয়ে) এই শোনো, ত্রিশূলের দিব্যি বলছি, ছিলিম নিয়ে খোঁটা দেবে তো একেবারে দক্ষযজ্ঞ রিটার্নস বানিয়ে ছাড়ব।
পার্বতী : থাক ! হয়েছে অনেক। ও মুরোদ আর নেই তোমার। বাহুবলী তোমায় ঘাড়ে করে ঝর্ণার জলে চুবিয়ে ছেড়েছে। সেই দেখে নমো আর মমোর কি হাসাহাসি। আমি তো হপ্তাখানেক মুখ দেখাতে পারিনি কোথাও। পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি।
শিব : (বিষম খেয়ে) আঃ, কি মুশকিল ! থাক না সেসব কথা। আমিও তো কম হেঁচে কেশে অস্থির হইনি সেসময়। ভক্ত বলে কথা, অমন ফস করে কিছু বলা যায় নাকি ?
পার্বতী : বেশ তো ! তাহলে শিবায় ছবিতে অজয় যে তোমার নামটা ধার নিল আর সারাক্ষন 'বোলো হর হর' বলে চেঁচিয়ে গেল, কই টাইটেল স্ক্রোলে তোমায় কার্টসি পর্যন্ত দিল না মোটে, তার বেলা ?
শিব : কি বলি বলো দেখি, সিংঘমের পর থেকে বাজারটা তেমন ভালো যাচ্ছে না ওর। শুধু গুটখা খাচ্ছে আর বোলো জুবান কেশরী বলছে। আমি তো আর রয়্যালটি চাইতে পারিনা এই সময়.....!
পার্বতী আবার শিবের গা ঘেঁষে এলেন। শিবের গলার রুদ্রাক্ষের মালা নিজের আঙুলে পেঁচাতে থাকলেন।
পার্বতী :(গদগদ কণ্ঠে ) হ্যাঁ সেই। ভক্তের ভক্তিতেই তুমি অস্থির। যাগ্গে, যাক। মোট কথা হল সারাদিন দুজনে মিলে একটু কাছাকাছি, একটু এনজয়, মানে একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড.......বোঝোই তো.....
শিব : আচ্ছা বেশ, সেসব নাহয় বুঝলাম, কিন্তু শিবরাত্রির ব্যাপারটা....... ?
পার্বতী : সে নাহয় রাতের দিকে তোমার মাথায় একটু জল ছিটিয়ে দিলেই হল। তাছাড়া গঙ্গাকে তো জটায় করে নিয়ে ঘুরছো। তেমন হলে মাথাটা একটু গোল করে ঝাঁকিয়ে নিও বুঝলে। যুগ যুগ ধরে একইরকম করে আসছি তো। তা এবারটা নয় একটু অন্যরকম হল, অসুবিধে কি ?
শিব : কিন্তু তাই বলে ভ্যালেন্টাইন্স ডে সেলিব্রেট করবে বলে শিবরাত্রি ডিলেইড হবে ? নানানানা, এটা ঠিক হচ্ছে না। তোমার হাতের জলটাই তো সবার আগে পেয়ে থাকি বরাবর। তারপর গিয়ে মর্ত্যের জল নিই। ওদিকে সবাই অপেক্ষা করে থাকবে যে !
পার্বতী : (অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে) ওহ ! তাই নাকি ? আমার আব্দারটা ইম্পর্ট্যান্ট নয়, তাই তো ? মর্ত্যের জল না পেলে বুড়োর বুঝি নেশা কাটবে না ! বয়সকালে স্বপ্নদোষ ? আচ্ছা দাঁড়াও, আমিও এর শেষ দেখে তবে ছাড়ব।
মহাদেব এ কথায় জিভ কেটে কানে আঙ্গুল দিলেন।
নারদমুনির প্রবেশ।
নারদ : (সুর করে) নারায়ণ নারায়ণ ! পেন্নাম হই দেবাদিদেব..... প্রণাম নেবেন মা। (শিবের দিকে তাকিয়ে) একি প্রভু !! আপনি কানে আঙ্গুল দিয়ে আছেন কেন ? কি হয়েছে ?
শিব : (কান থেকে আঙ্গুল সরিয়ে) ভাষার বাণ খেয়েছি রে বাপ্। ডিটেলস বলতে পারব না।
পার্বতী : এই যে নাড়ু ! এসে গেছ দেখছি ! ব্যাস আর তো কোনো কথা গোপন রাখার জো নেই । স্বগ্গ জুড়ে ঢি ঢি পরে যাবে এবার........আমাদের সেলিব্রেশনটা তাহলে মাঠে মারা গেল একেবারে !
নারদ : ছি মা। এসব কি বলছেন ! আমি এখন অনেক চেঞ্জড হয়ে গেছি। এখন শুধু দিনে একবার করে 'আধঘন্টাখানেক সঙ্গে সুমন' এর চ্যানেলে ঢুঁ মারি। বাংলাবাজারটা ওই তো গরম করে। আমায় আর কোনো এক্সট্রা এফর্ট দিতে হয় না।
পার্বতী : ব্যাস ! তবে আর কি ! স্বগ্গ তো গেলোই, এবার সারা বাংলা জুড়ে মোমবাতি মিছিল শুরু হবে। বলি আমাদেরও কি একটু আধটু সাধ আহ্লাদ থাকতে নেই গা ?
নারদ : কে বলেছে মা থাকতে নেই ? আমায় শুধু বলুন কি চাই, আমি আগাপাশতলা সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
পার্বতী : (করুণ স্বরে) দুঃখের কথা আর কি বলি নাড়ু। শখ হয়েছিল আজ তোমাদের বাবার সাথে একটু ভ্যালেন্টাইন্স ডে সেলিব্রেট করব। তা উনি কানেই নিচ্চেন না কথাটা। এবার বলো, এই জগৎসংসারের বাইরে আমারও তো একটু ইচ্ছে করে ঘুরে ফিরে বেড়ানোর। ওনার হাতটি ধরে একটু এদিক ওদিক যাওয়া, ভালোমন্দ খাওয়া......... একি আর খুব বেশি চাওয়া হল আমার ?
নারদ :(হাত নাড়িয়ে) বিন্দুমাত্র না, বিন্দুমাত্র না। এতো অতি উত্তম কথা, তা আটকাচ্ছে কে ? সুপ্রিয়া ?
পার্বতী মনে মনে বললেন, 'খুব খারাপ জোক নাড়ু , এ মিরাক্কেলেও নেবে না '। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। মহাদেবের দিকে আঙ্গুল তুললেন শুধু ।
পার্বতী : ওই যে, ওই তোমার প্রভু। বলছে নাকি মর্ত্যের ধিঙ্গিরা ওনার শিবরাত্রির জন্যে ওৎ পেতে আছে। বাগছালটা পড়ে দৌড়ে না গেলে নাকি ওনার পুজোই শুরু হবে না। বুঝলুম, যাদের বিয়ে হয়নি তাদের নাহয় একটা কারণ আছে। কিন্তু যাদের হয়ে গেছে, তোরা কেন খামোখা ওঁকে নিয়ে টানাটানি কচ্ছিস বাপু। এই রিটায়ারমেন্টের সময় আমাদের দিকটাও তো একটু ভেবে দেখতে হবে নাকি !
শিব :আঃ যত্ত বাজে কথা। আচ্ছা তুই বল নাড়ু, এই বয়েসে আমাদের কি এসব মানায়, হ্যাঁ ? তাছাড়া আজকে শিবরাত্রি, কোথায় সকালবেলা তোর মায়ের হাতের এক বালতি গরম জলে একটু আয়েস করে সাবান দিয়ে রগড়ে গা ধোব, তা নয় উনি এক্কেরে সারাদিন কচি খুকির মতো ঘুরে বেড়াবার মতলব এঁটেছেন। যত্তসব !
পার্বতী : ওহ ! আমি কচি খুকি ? আর তোমার বয়েস বুঝি ডিসেন্ডিং অর্ডারে বাড়ছে। প্রস্টেটের সমস্যায় যে তুমি শুয়ে ছিলে একমাস, তখন কে তোমায় দুবেলা বাথরুম নিয়ে যেত শুনি ? হ্যাঁ ?অস্টিও আর্থ্রাইটিসের ব্যাথায় রোজ রাতে কে মলম ঘষে দেয় তোমার হাঁটুতে ? বলব নাড়ুকে সেসব কথা ? ভাঙব হাটে হাঁড়ি ?
শিব : আহাহাহা ! এসব কি কথা হচ্ছে বলো দেখি ? ঘরের লুঙ্গি কি এমনি করে বাইরে শুকোতে আছে ? হাওয়া দিচ্চে তো !
নারদ : হ্যাঁ সেই তো, এসব ব্যক্তিগত কেচ্ছাগুলো এখন নাহয় থাক মা, বুঝলেন। অন্য সময় বরং........
পার্বতী :(নারদকে এক দাবড়ানি দিয়ে) তুই থাম নাড়ু ! আমার ইহকাল পরকাল সব আনন্দবাজারে বেরিয়ে গেছে গা। প্রাইভেট লাইফ বলে আর কিচ্ছুটি নেই। দুগ্গাপুজো এলেই সবাই মিলে একেবারে পুরাণ থেকে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে। ভারী বিরক্ত লাগে মাইরি। আমারও তো একটা প্রাইভেসি আছে, নাকি ?
এই বলে পার্বতী একটা শিলাখণ্ডের ওপর বসে উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলেন। নারদ ও শিব যুগপৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। শিব আরও কিছু কথা বলতে যাচ্ছিলেন। পার্বতীর কান্নায় সেসব হলাহলের মতো নির্বাক হজম করে ফেলতে হল। উপায়ন্তর না দেখে পার্বতীর কাছে ছুটে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
শিব :(মোলায়েম স্বরে) ছি, পারো ! ওসব ছোটখাট কথায় কি কাঁদতে আছে। তুমি আজকাল সমস্ত ব্যাপারে বড্ড ইমোশনাল হয়ে পড়ো দেখছি। তোমার না হাই বিপি ? এসময় এতটা স্ট্রেস নেওয়া কি ঠিক হচ্ছে শরীরের পক্ষে ?
পার্বতী : (ফোঁপাতে ফোঁপাতে) 'পারো' বলে আমায় ডেকো না গো। অন্দরমহলের পরমেশ্বরীর কথা বড্ড মনে পড়ে যায়। আহা বেচারী মেয়েটা কি কষ্টটাই না করছে। দোজবরে স্বামীটা গাছেরও খাচ্ছে তলারও কুড়োচ্ছে। এ অনাচার চোখে দেখা যায় না গো ! চোখে দেখা যায় না।
নারদ: (শিবের দিকে তাকিয়ে) প্রভু, আমার না মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে জানেন। মা এসব কি বলছেন ? একবার প্রস্টেট একবার আর্থ্রাইটিস, আনন্দবাজার, অন্দরমহল, পারো........আমার কেমন যেন সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। রক্ষা করুন প্রভু, রক্ষা করুন।
শিব ভারি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। মনে মনে নানারকম বলতে থাকেন ......
শিব :(মনে মনে) হুঁহ ! দুবেলা আমায় কে রক্ষা করে তার নেই ঠিক, আমি যাব ওকে রক্ষা করতে। সাত সকালবেলা দেকচিস বাড়িতে মহাভারত শুরু হয়েছে, কোথায় মানে মানে সরে পড়বি তা নয়, নারায়ণ নারায়ণ করতে করতে কোমর দুলিয়ে উপস্থিত হয়েচে। যত্তসব বলিহারি ! (ভেংচি কেটে) আবার রক্ষা করুন প্রভু.........আপদ কোথাকার !
নারদ :আ, আমায় কি কিছু বলছেন মহাদেব ?
শিব :(শশব্যস্ত হয়ে) তোমায় আর কি বলব বাছা, সকালবেলা এয়েচ। এক কাজ করো দিকি। ঐদিকে দেখো মিক্সি রাখা রয়েছে, তিন গ্লাস ফ্রুট জ্যুস বানিয়ে আনো তো চট করে।
নারদ ব্যাজার মুখ করে মিক্সির দিকে এগিয়ে যান।
শিব : (ফিসফিস করে) ইয়ে বলছি কি, তুমি তো 'পারো' মানে শরৎ বাবুর দেবদাসের ইন্সট্যান্সও টানতে পারতে তাই না ? খামোখা বাইরের লোকের সামনে তোমার বাংলা সিরিয়াল কাল্চারটা না দেখালেই কি নয়।
পার্বতী :(অবাক হয়ে) কাল্চার ! আমাদের গোটা বাংলা তো এগ্রিকালচার আর চপ ফুলুরির ওপর ডিপেন্ড করছে গো। এই স্বর্ণ যুগে টিভি না দেখাটা নেগলেক্ট করি কি করে বলো তো ?
শিব : আচ্ছা বেশ ! মন খারাপ কোরো না লক্ষীটি। তুমি বলে দাও তোমায় কি নামে ডাকব ?
পার্বতী : (চোখ মুছে গদগদ ভাব করে) থাক, তোমায় আর আদিখ্যেতা করতে হবে না। তুমি যা বলবে তাই....
শিব : (আরেকটু কাছে এসে) না, তুমি বলে দাও....
পার্বতী : না তুমি বলো....
শিব : না তুমিই বলো.....
পার্বতী : না তুমি.....
(নারদ তার তাম্বুরায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজাতে থাকেন - 'এই পথ যদি না শেষ হয়.........'
শিব জড়িয়ে ধরেন পার্বতীকে। দুজনের নিভৃত চাপা ফিসফিসানি আর হাসির শব্দ শোনা যায়।
নারদ জিভ কেটে অন্য দিকে চোখ ঘোরান। তারপর জোরে গলা খাকরানি দেন। শিব পার্বতী দুজনেই ব্যস্ত হয়ে একটু সরে বসেন)।
নারদ : এই নিন শরবত।
শিব আর পার্বতী দুজনেই হাত বাড়িয়ে গ্লাস নেন।
পার্বতী : (জিভ কেটে) এই রে ! আমার তো খেতে নেই, আজ তো আমার উপোস।
শিব : এই বয়েসে আর উপোস করে কাজ নেই। তাছাড়া ফ্রুট জ্যুসে আবার দোষ কিসের ?
পার্বতী : তাহলে তুমিই খাইয়ে দাও বরং।
শিব পরম স্নেহে পার্বতীকে ফ্রুট জ্যুস খাওয়াতে থাকেন।
নারদ : আমি বলছিলুম কি, ব্যাপারটা যখন আর অতটা সিরিয়াস নয়, তাহলে বরং মহাদেব আজ একবার মাকে গোলাপ দিয়েই দিনের শুরুটা করে ফেলুন। তারপর নাহয় আপনি চট করে মায়ের দেওয়া জলে চান করে একবার মর্ত্য থেকে ঘুরে আসুন। ততক্ষনে মা রেডি হয়ে যাবেন। তারপর দুজনে মিলে একটু ঘুরে আসুন, আপনাদের ভ্যালেন্টাইন্স ডেও সেলিব্রেট হবে আবার প্রাইভেট টাইমও, কি বলেন ?
শিব : (পার্বতীর দিকে তাকিয়ে) ছেলেটা অনেকদিন পর বেশ ভালো বলেছে........তাই না গো ?
পার্বতী :(লজ্জা পেয়ে মিষ্টি করে হেসে) আমি জানি না.......যাও.......
শিব আর নারদ দুজনেই অট্টহাস্য করে ওঠেন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পুনশ্চ : এই গল্পের সাথে কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় যোগাযোগ খুঁজতে যাবেন না দয়া করে। কোনোরকম ভাবাবেগে আঘাত করা উদ্দেশ্য নয়, নির্মল আনন্দের জন্যই এ গল্প লেখা।
![]() |
| ছবি : সংগৃহিত |
#bengalishortstory #valentinesday #shibratristory #lovestory #shivparvati #Molat
